Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বনগাঁয় কংগ্রেস প্রার্থীকে ধাক্কাধাক্কি দলের কর্মীদের

তাঁদের দলের প্রার্থী জয়ী হতে পারেন, সম্ভবত সেই আশা নেই দলের কর্মীদেরই। তবু প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় সোমবার বনগাঁয় দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে হুজ্জুত বাধালেন কিছু কংগ্রেস কর্মী। প্রার্থীকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। অফিসের চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলা হয়। গোলমাল চলাকালীন চেয়ারের আঘাতে এক কংগ্রেস কর্মীর নাক ফেটে রক্তারক্তি কাণ্ড বাধে। তৃণমূলের হাত শক্ত করতেই ‘দুর্বল’ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রার্থীর দিকে তেড়ে যাচ্ছেন কিছু কর্মী। সোমবার বনগাঁয় তোলা নিজস্ব চিত্র।

প্রার্থীর দিকে তেড়ে যাচ্ছেন কিছু কর্মী। সোমবার বনগাঁয় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৩
Share: Save:

তাঁদের দলের প্রার্থী জয়ী হতে পারেন, সম্ভবত সেই আশা নেই দলের কর্মীদেরই। তবু প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় সোমবার বনগাঁয় দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে হুজ্জুত বাধালেন কিছু কংগ্রেস কর্মী। প্রার্থীকে ধাক্কাধাক্কি করা হয়। অফিসের চেয়ার-টেবিল উল্টে ফেলা হয়। গোলমাল চলাকালীন চেয়ারের আঘাতে এক কংগ্রেস কর্মীর নাক ফেটে রক্তারক্তি কাণ্ড বাধে। তৃণমূলের হাত শক্ত করতেই ‘দুর্বল’ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা।

এই পরিস্থিতিতেই অবশ্য মঙ্গলবার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের জন্য বারাসতে জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী কুন্তল মণ্ডল। মতুয়া-ভোটার অধ্যুষিত বনগাঁ কেন্দ্রের প্রার্থী কুন্তলবাবু পরে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে গিয়ে মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানিদেবীর আশীর্বাদও নেন।

এমনিতেই বনগাঁ তথা গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই কংগ্রেসে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তারই মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও রয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) অসিত মজুমদারের সঙ্গে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সম্পর্ক ভাল নয়। অধীরবাবু বনগাঁয় প্রার্থী বাছার ক্ষেত্রে অসিতবাবুর মতামত নেননি বলেই দলীয় সূত্রের খবর। সোমবারের ঘটনায় অসিত-ঘনিষ্ঠদেরই হাত আছে বলে মনে করেছেন দলের নেতৃত্বের একাংশ। অসিতবাবুর বক্তব্য, “ঘটনাটি লজ্জাজনক। দলের থেকে যাকেই প্রার্থী করা হয়েছে, তাকেই মেনে নেওয়া উচিত।” বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ আছে বলেও মানতে চাননি অসিতবাবু।

এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কড়া বার্তা, “দল যাকে প্রার্থী করেছে, কর্মীদের তাকেই মেনে নিতে হবে। কোনও বেয়াদবি বরদাস্ত করা হবে না।”

নেতারা যা-ই বলুন না কেন, বনগাঁ শহরের রেলবাজার এলাকার বাসিন্দা বছর উনত্রিশের কুন্তলবাবুকে দলের কর্মী বলেই মনে করেন না বিক্ষোভকারীরা। সোমবার বনগাঁ শহরে দলীয় কার্যালয়ে লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা এলাকায় নেতাদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। বিকেল ৫টা নাগাদ ওই বৈঠকের শুরুর মুখেই কংগ্রেসের এক দল নেতা-কর্মী সেখানে হাজির হয়ে প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। সেই সময়ে কুন্তলবাবু এসে পৌঁছন দলীয় কার্যালয়ে। ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাঁকে ধাক্কা মারতে মারতে প্রায় কার্যালয় চত্বরের বাইরে নিয়ে আসা হয়। কটূক্তি, গালিগালাজও চলতে থাকে।

‘তুই আবার কবে কংগ্রস করলি’ এমন মন্তব্যও উড়ে আসে। অফিসের চেয়ার-টেবিল উল্টে দেওয়া হয়। ঘটনার মধ্যেই এক কংগ্রেস কর্মীর নাকে কেউ চেয়ার দিয়ে মারলে তার নাক ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর সাধন দাস। তিনি বলেন, “প্রার্থী কোনও দিন দলই করেননি। আমার পাশের ওয়ার্ডে নাকি ওঁর বাড়ি। আমি ওঁর সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম বলে প্রার্থী আমার বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। ওই প্রার্থীকে আমরা মানি না।” কয়েক জন কংগ্রেস নেতাকে আবার বলতে শোনা গেল, “দলটা তৃণমূলের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলকে সুবিধা করে দিতেই এখানে দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।” কী বলছেন প্রার্থী নিজে?

তাঁর কথায়, “আমার বিরুদ্ধে কারও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতে পারে। রাগ-অভিযোগ থাকলে আমাকে বা দলকে জানাক। দোষ থাকলে আমাকে যেন ওঁরা ক্ষমা করে দেন।” সাধনবাবুর বাড়িতে তিনি পুলিশ পাঠাননি বলেও দাবি করেছেন কুন্তলবাবু।

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ইঙ্গিত মিলেছে বিজেপির অন্দরেও। দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতা কিশোর বিশ্বাস মঙ্গলবার নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। কিশোরবাবু বলেন, “রাজ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক মর্যাদা রক্ষা হচ্ছে না। সে কারণেই আমি নির্দল হিসাবে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” বিষয়টিকে অবশ্য জেলা বিজেপি নেতৃত্ব কোনও গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “বিষয়টি জানি। তৃণমূল চক্রান্ত করে কিশোরবাবুকে দাঁড় করিয়েছে। এতে ভোটে আমাদের কোনও ক্ষতি হবে না।”

দুই বিরোধী দলের কাণ্ড-কারখানা দেখে জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কটাক্ষ, “কংগ্রেসের কথা আর কী বলব, ওরা নিজেরাই খেয়োখেয়ি করছে। ওদের কে দাঁড়াবে, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।” বিজেপি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ওরা দুর্নীতিগ্রস্ত। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সম্পর্কে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।”

এ দিনই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী নিত্যগোপাল মণ্ডল। বগুলার বাসিন্দা, পেশায় স্কুলশিক্ষক নিত্যবাবুই যে প্রার্থী হচ্ছেন সেটা দলের কমবেশি সকলেরই জানা ছিল। এ নিয়ে কারও অমত ছিল না বলে দাবি করেছে কংগ্রেস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE