Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মাঝসমুদ্রে ট্রলার উল্টে নিখোঁজ ৭ মৎস্যজীবী

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার তলিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন সাত মৎস্যজীবী। এফ বি সূর্যনারায়ণ এবং এফ বি মহারুদ্র নামে ওই দু’টি ট্রলারের ২২ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে সোমবার সকালে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কয়েক জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।—নিজস্ব চিত্র।

কাকদ্বীপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।—নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৬
Share: Save:

গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার তলিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন সাত মৎস্যজীবী। এফ বি সূর্যনারায়ণ এবং এফ বি মহারুদ্র নামে ওই দু’টি ট্রলারের ২২ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে সোমবার সকালে কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কয়েক জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “৪২টি ট্রলার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিল। তার মধ্যে দু’টো তলিয়ে গিয়েছে। বাকি ট্রলারগুলির মধ্যে ১০টি পূর্ব মেদিনীপুরে পৌঁছেছিল। সেগুলি এ দিন বিকেলে ফিরে এসেছে। বাকি ট্রলারগুলি ওড়িশায় আটকে রয়েছে। খারাপ আবহাওয়ার জন্য রওনা দিতে পারছে না।” নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মৎস্য দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গেও কথা হয়েছে।” মৎস্যমন্ত্রী বলেন, “নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের উদ্ধারের জন্য উপকূল রক্ষী বাহিনীকে বলা হয়েছে। তারা লাইফ জ্যাকেট নিয়ে ঘটনাস্থলে রওনা দিয়েছে।”

কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজন মাইতি জানান, গত ৩০ ও ৩১ জুলাই কাকদ্বীপ থেকে মোট ৪২টি ট্রলার মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে গিয়েছিল। দু’টি ডুবে গিয়েছে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৪০টি ট্রলারের মধ্যে ৩০টি ট্রলার ও ৪৮০ জন মৎস্যজীবী ওড়িশার ধামরাতে আশ্রয় নিয়েছে। বাকি ১০টি ট্রলারের মৎস্যজীবীরা প্রথমে পূর্ব মেদিনীপুরের পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নেন। সন্ধ্যার দিকে তাঁরা পেটুয়াঘাট থেকে কাকদ্বীপে ফিরে আসেন। উদ্ধারকাজে উপকূল রক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে উদাসীনতা নিয়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বেলা ১২টা নাগাদ উপকূল রক্ষী বাহিনীর তরফে পারাদ্বীপ থেকে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এয়ারক্র্যাফট দিয়ে তল্লাশি চালানোর চেষ্টা হচ্ছে বলা হয়। তবে কাকদ্বীপ থেকে যাওয়া উদ্ধারকারী ট্রলারের মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে উপকূল রক্ষী বাহিনীর জাহাজ বা এয়ারক্রাফট দেখতে পায়নি। ডুবে যাওয়া মহারুদ্র ও সূর্যনারায়ণ ট্রলার ও নিখোঁজ ৭ জন মৎস্যজীবীর খোঁজে কাকদ্বীপের ৭টি ট্রলার জম্বুদ্বীপে তল্লাশি চালাচ্ছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাকদ্বীপ মৎস্যবন্দর থেকে সূর্যনারায়ণ ট্রলারে ১৫ জন মৎস্যজীবী এবং নামখানা ঘাট থেকে মহারুদ্র ট্রলারে ১৪ জন মৎস্যজীবী গভীর সমূদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। মাছ পেয়ে গেলে দিন কয়েকের মধ্যে ফেরার কথা ছিল। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জম্বুদ্বীপ থেকে প্রায় ৮ নটিক্যাল মাইল দূরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা ওই দু’টি ট্রলারের মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে জাল ফেলার তোড়জোড় করার সময়েই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে পশ্চিমী ঝোড়ো হাওয়া। ঢেউয়ের তোড়ে ট্রলার দু’টি বেসামাল হয়ে যায়। জাল পাতা বন্ধ রেখে সেটিকে উপকূলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন চালকেরা। কিন্তু সমূদ্র এতটাই উত্তাল ছিল যে এগোনো যায়নি। রাত পর্যন্ত সেখানেই আটকে থাকে ট্রলার দু’টি।

এ দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ আচমকা বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় সেগুলি উল্টে যায়। মহারুদ্রের ১৪ জন ও সূর্যনারায়ণের ৮ জন সমুদ্রে ভাসছিলেন। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এফ বি পারমিতা, এফ বি প্রসেনজিৎ এবং এফ বি জগন্নাথ নামে তিনটি ট্রলার এগিয়ে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। এদিন সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে সেগুলি ফিরে আসে কাকদ্বীপ বন্দরে ফিরে আসে। সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী আগে থেকেই সেখানে হাজির ছিলেন। কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা ছিল। নোনা জলে মৎস্যজীবীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মুড়িগঙ্গা নদী লাগোয়া ওই বন্দরে তিনটি ট্রলার ঢুকতেই ওই মৎস্যজীবীদের অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে। জগবন্ধু দাস-সহ কয়েক জনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁদের ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মৎস্যজীবীদের পরিবারের লোকজন কাতারে-কাতারে হাসপাতাল চত্বরে চলে আসে। আপনজনদের খোঁজ নিতে শুরু করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।

সূর্যনারায়ণ ট্রলারের উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবী নান্টু দাস, মৃদুল দাস ও নান্টু দাসদের জবানিতে: “রবিবার সকাল থেকেই সমূদ্রে প্রবল ঢেউ উঠছিল। আশঙ্কা ছিল, যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের ট্রলারের মাঝি রাখাল দাস ও আগাম সতর্কবাতা জানিয়ে দিয়েছিল। রান্না-খাওয়া ভুলে সকলেই বেঁচে ফেরার চিন্তা করছিলাম। আশঙ্কাটা সত্যি হল সোমবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ। হঠাৎ বিশাল বড় ঢেউ এসে ধাক্কা মারতেই উল্টে গেল ট্রলারটা। কে কোথায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়লাম। সাঁতার জানা আর না জানা সমুদ্রে সমান। ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু ঢেউয়ে আমরা ভাসছিলাম। কতক্ষণ যে ভেসেছিলাম, তা বলতে পারব না। পরে ট্রলার এসে আমাদের উদ্ধার করে।” আবার সমুদ্রে যাবেন? উত্তর আসে “ওটাই বংশ পরম্পরায় আমাদের রুটি-রুজি। সমুদ্রে না গেলে পেট চলবে কী করে?”

গত চার বছরে নিখোঁজ মৎস্যজীবী

• ২০১১ সালে ২টি ট্রলার ও ৩২ জন।

• ২০১২ সালে ৪ জন।

• ২০১৩ সালে ১টি ট্রলার ও ১০ জন।

• ২০১৪ সালে (অগস্ট পর্যন্ত)। ২টি ট্রলার ও ৭ জন।

তথ্য: বিজন মাইতি (কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী ইউনিয়নের সভাপতি)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal dilip naskar kakdwip trawler capsize
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE