Advertisement
E-Paper

মথুরাপুরে অতিরিক্ত হাম্পের জন্য বাড়ছে দুর্ঘটনা, নালিশ

প্রসবের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রায়দিঘির কৌতলা গ্রামের বধূ সরমাদেবী। অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। কিন্তু রাস্তায় ঘন ঘন হাম্প। হাম্পের তাড়নায় তিনি আর হাসপাতাল পৌঁছতে পারলেন না। ঝাঁকুনিতে রাস্তায় জন্ম দিলেন এক কন্যা সন্তানের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫২
রায়দিঘি-ডায়মন্ড হারবার রাস্তায় এমনই হাম্প রয়েছে অসংখ্য।—নিজস্ব চিত্র।

রায়দিঘি-ডায়মন্ড হারবার রাস্তায় এমনই হাম্প রয়েছে অসংখ্য।—নিজস্ব চিত্র।

প্রসবের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন রায়দিঘির কৌতলা গ্রামের বধূ সরমাদেবী। অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। কিন্তু রাস্তায় ঘন ঘন হাম্প। হাম্পের তাড়নায় তিনি আর হাসপাতাল পৌঁছতে পারলেন না। ঝাঁকুনিতে রাস্তায় জন্ম দিলেন এক কন্যা সন্তানের।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের রায়দিঘি থেকে দক্ষিণ বিষ্ণুপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তায় ৫৬টি হাম্প রয়েছে। এতে বার বার সমস্যায় পড়ছেন গাড়ির চালক থেকে শুরু করে রোগী এবং বাসিন্দারা। এলাকায় সর্বদল বৈঠক ডেকে হাম্প তুলে ফেলা নিয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এই সমস্যা শুধু প্রসূতিদের ক্ষেত্রেই হচ্ছে তা নয়। এই হাম্প অতিক্রম করতে গিয়ে রোগীরা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। যেমন, সেলাইনের সূচ গিয়ে ফুটছে কোনও মরণাপন্ন রোগীর গায়ে। আবার কখনও অক্সিজেনের পাইপ খুলে যাচ্ছে। বিডিও মোনালিসা পিরকে বলেন, “ওই হাম্পগুলি তুলে ফেলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকাবাসীদের কোনও সহযোগিতা পাইনি। ওই সমস্ত হাম্প তুলতে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকায় ১১টি পঞ্চায়েত রয়েছে। প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের বাস। রাস্তার পাশেই রয়েছে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল, প্রাথমিক ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফলে প্রচুর রোগীই এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন। তা ছাড়া, এই রাস্তার উপর দিয়ে চলে এম ১০ ও ৩২টি মিনি বাস। রায়দিঘি থেকে মথুরাপুর স্টেশন মোড় পর্যন্ত চলে প্রায় ৫০০টি অটো, ট্রেকার, মোটর ভ্যান-সহ অন্যান্য গাড়ি। মাস দু’য়েক আগে নতুন করে এই রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। আর সংস্কার করতে গিয়ে কোথাও ১ কিলোমিটার আবার কোথাও হাফ কিলোমিটার অন্তর বাসিন্দাদের দাবি মতোই তৈরি করা হয়েছিল হাম্প। কিন্তু এখন এগুলির উপর দিয়ে গাড়ি চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন চালকেরা। হাম্পের ঝাঁকুনিতে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অটো, ট্রেকার চালকদের। দুর্ঘটনা এড়াতে যাঁরা হাম্পের দাবি করেছিলেন তাঁরাই এখন এই হাম্পের ঝাঁকুনিতে অতিষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া এই রাস্তা অতিক্রম করতে অনেক সময়ও লাগছে। বিশেষ করে পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। অফিসযাত্রীরা তাড়াতাড়ি বাড়ির থেকে বেরিয়েও ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন না বলে অভিযোগ। এমনকী, পুলিশের গাড়িও ঠিক সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে যেতে পারে না। নিত্য যাত্রী, এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, “সকালে উঠে কাজে বেরুতে হবে একথা মনে পড়লেই হাম্পের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। শরীর একটু খারাপ থাকলে ওই হাম্পের জন্য অফিস যেতে পারি না।” পায়েল মল্লিক নামে এক শিক্ষিকা বলেন, “ডায়মন্ড হারবার থেকে নিয়মিত রায়দিঘি এলাকার স্কুলে যাই। যাবার পথে হাম্পের ঝাঁকুনিতে অস্বস্তি হয়।”

শুধু তাই নয় এই রাস্তায় আলো নেই। ফলে গাড়ি চালকদের গাড়ি চালাতে অসুবিধা হয় বলে অভিযোগ। শীতের সময় কুয়াশা পড়লে হাম্পগুলি বোঝা যায় না। সে কারণেই এই সময় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে নতুন কোনও গাড়ি এই রাস্তায় ঢুকলে সে ক্ষেত্রে দুঘর্টনা অনিবার্য। কারণ রাস্তার হাম্পগুলি সম্পর্কে তারা জানে না। অ্যাম্বুল্যান্স চালক সুমন মাইতি বলেন, “পর পর হাম্পের জন্য গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে। কী যন্ত্রণা তা বলে বোঝাতে পারব না। হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাবার সময় রোগীদের আর্তচিৎকারে ভয় পেয়ে যাই। এই বুঝি কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে চলেছে।”

রায়দিঘির বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের প্রতিনিধি সত্যরজ্ঞন গায়েন বলেন, “আমরা হাম্প সরানো নিয়ে ১২ জানুয়ারি সব দলের প্রতিনিধিদের স্বাক্ষর-সহ একটি স্মারকলিপি বিডিও, পূর্ত দফতর, পুলিশ, সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদকে জমা দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে আমরা শীঘ্রই আন্দোলনে নামব। পূর্ত দফতরের তরফে এক আধিকারিক বলেন “হাম্পগুলি সরাতে আমরাও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। পুলিশ সহযোগিতা করলে কোন কোন হাম্প তোলা হবে তা নিয়ে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।”

raidighi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy