Advertisement
০২ মে ২০২৪

রাজনৈতিক শীতঘুম কাটিয়ে ফের আন্দোলনে মজিদ

দীর্ঘ চার বছর অন্তরালে থাকার পরে ফের স্বমহিমায় তিনি। আপাত গুরুত্বহীন আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা গেলেও ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী, কারণ ব্যক্তিটি যে মজিদ মাস্টার। কেন্দ্র-রাজ্যের জমিনীতির বিরোধিতায় বুধবার রাস্তায় ধান ছড়িয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার চৌরাস্তার মোড়ে ঘণ্টা খানেক বিক্ষোভের জেরে টাকি রাস্তায় যানজট হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা সরে যায়।

বিক্ষোভের সামনের সারিতেই দেখা গেল তাঁকে। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

বিক্ষোভের সামনের সারিতেই দেখা গেল তাঁকে। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

দীর্ঘ চার বছর অন্তরালে থাকার পরে ফের স্বমহিমায় তিনি। আপাত গুরুত্বহীন আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা গেলেও ঘটনার রাজনৈতিক তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী, কারণ ব্যক্তিটি যে মজিদ মাস্টার।

কেন্দ্র-রাজ্যের জমিনীতির বিরোধিতায় বুধবার রাস্তায় ধান ছড়িয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিএম। দেগঙ্গার বেড়াচাঁপার চৌরাস্তার মোড়ে ঘণ্টা খানেক বিক্ষোভের জেরে টাকি রাস্তায় যানজট হয়। বিকেল ৫টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা সরে যায়।

রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসাবে এই ঘটনার তেমন গুরুত্ব না থাকলেও এ দিন বিক্ষোভের সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেল শাসনের সিপিএম নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মজিদ আলি ওরফে মজিদ মাস্টারকে। এক সময়ে লোকে বলত, শাসনে মজিদের কথায় বাঘে-মানুষে এক ঘাটে জল খায়। কিন্তু ২০১০ সালে রাজ্য জুড়ে পরিবর্তনের হাওয়ায় মজিদের সেই ‘গৌরব’ অস্তমিত হতে থাকে। সে সময়ে বাম আমলেই খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। জামিনে ছাড়া পেলেও তার পর থেকে আর শাসনে, একদা নিজের খাসতালুকে ফিরতে পারেননি মজিদ। এমনকী, নিজের বাড়িতে ফিরতে গিয়ে হেনস্থাও হয়েছেন প্রবীন এই সিপিএম নেতা। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তো দীর্ঘ দিন ধরেই বলে আসছেন, বহু খুন-জখমে অভিযুক্ত মজিদকে শাসনের মানুষই এলাকায় ফিরতে দেবে না। মেয়ে-বৌরা বঁটি-কাটারি নিয়ে মজিদকে আটকাবেন, এমন হুমকিও বার বার শোনা গিয়েছে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর মুখে।

এ দিকে, নিজের এলাকায় ফিরতে চেয়ে কিছু দিন আগে হাইকোর্টে আবেদন করেন মজিদ। বিচারক জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন, মজিদকে নিরাপদে এলাকায় ফেরানোর দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। ডিসেম্বর মাসে ওই নির্দেশের পরেও অবশ্য এখনও তেমন কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি জেলা পুলিশের তরফে। কিন্তু মজিদকে এলাকায় ফেরাতে দল যে বদ্ধপরিকর, তা কিছু দিন আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন জেলা সিপিএম সম্পাদক গৌতম দেব। এ দিন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মজিদ দৃশ্যমান হওয়া যে তারই অঙ্গ, তা মনে করছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্বও।

“উনি আমার নাম নিয়েছেন বলে লজ্জা বোধ করছি। ওঁরা বোমা-গুলির ব্যবসা করছিলেন করুন।
খাদ্য-টাদ্যর মধ্যে আবার আসছেন কেন?” —জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। খাদ্যমন্ত্রী।

বস্তুত, সম্প্রতি নানা ঘটনায় এ রাজ্যের শাসক দল ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে। বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডই হোক কিংবা কলেজে কলেজে রাজনৈতিক সন্ত্রাস সবেতেই কোনও না কোনও ভাবে শাসক দলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন বিরোধীরা। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআই তদন্ত শুরুর পরে একের পর এক তৃণমূল নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ গ্রেফতার হওয়ায় ইদানীং কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে তারা। তার উপরে রাজ্যে শিল্প না আসায় আম জনতার মধ্যেও ক্ষোভ ঘণীভূত হচ্ছে। দলের শীর্ষস্তরের মধ্যে আকচা-আকচিও সামনে আসছে। সরকারের নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনায় ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-মন্ত্রীদের। তার উপরে আছে রাজ্যে বিরোধী শক্তি হিসাবে বিজেপির উত্থান। ইতিমধ্যেই বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে আসন্ন উপনির্বাচনেও তারা যে তৃণমূলকে বিনা লড়াইয়ে জমি ছাড়বে না, তার ইঙ্গিত মিলছে। উপনির্বাচনে সভা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চাইছে জেলা বিজেপি।

শাসক দলের বিরুদ্ধে এই সব পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে সিপিএমও। কেন্দ্রীয় ভাবে এখনও দল কোনও সুস্পষ্ট দিশা দেখাতে না পারলেও বিচ্ছিন্ন ভাবে রাজ্যের নানা প্রান্তে প্রভাব বাড়াতে ব্যস্ত তারা। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক মিটিং-মিছিলে ফের ভিড় বাড়ছে বামেদের পাশে। উত্তর ২৪ পরগনাতেও মজিদকে ফের আন্দোলনে নামিয়ে সেই বার্তাই দিল দল, এমনটা মনে করছেন সিপিএমেরই একাংশ।

এ দিন কর্মসূচিতে মজিদ মাস্টার ধান কেনা নিয়ে রাজ্য সরকার তথা খাদ্যমন্ত্রীর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সমালোচনা করেছেন। যা শুনে জ্যোতিপ্রিয়বাবুর কটাক্ষ, “উনি আমার নাম নিয়েছেন বলে লজ্জা বোধ করছি। ওঁরা বোমা-গুলির ব্যবসা করছিলেন করুন। খাদ্য-টাদ্যর মধ্যে আবার আসছেন কেন?” মজিদকে সামনে এনে সিপিএম জেলায় ফের অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে বলে তাঁর অভিযোগ।

বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ হলে মজিদ পরে বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ, কৃষকদের জন্য আন্দোলনে আছি, থাকব।” কিন্তু আপনাকে তো বহু দিন পরে দলের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির সামনের সারিতে দেখা গেল। তা হলে কী এ বার ফের স্বমহিমায় দেখা যাবে আপনাকে? মজিদের জবাব, “আমি সামনের সারিতে নেই, পিছনের সারিতেও নেই। ডাঁয়েও নেই। বাঁয়েও নেই।” এর পরে টেলিফোনের ও প্রান্তে অল্প ক্ষণের নীরবতা। তারপরে কেটে গেল লাইন। নীরবতার মধ্যে দিয়ে মজিদ কী বার্তা দিতে চাইলেন, তা বোঝা যাবে আগামী দিনগুলিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

majid master deganga cpm southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE