Advertisement
E-Paper

সিনেমা হলের কাঠের চাঙড় খসে বিপত্তি

মড়মড় মড়াত্‌...! ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ দেখার অভিজ্ঞতা তেমন সুখের হল না সুজাদ আলি মণ্ডলের। সিনেমা দেখতে গিয়ে বসিরহাটের ফাল্গুনী হলের কাঠের সিলিং ভেঙে জখম হয়ে আপাতত তিনি বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন। রবিবার দুপুরে এই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও কয়েক জন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০০
বসিরহাটের ফাল্গুনী হল।

বসিরহাটের ফাল্গুনী হল।

মড়মড় মড়াত্‌...!

‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ দেখার অভিজ্ঞতা তেমন সুখের হল না সুজাদ আলি মণ্ডলের। সিনেমা দেখতে গিয়ে বসিরহাটের ফাল্গুনী হলের কাঠের সিলিং ভেঙে জখম হয়ে আপাতত তিনি বসিরহাট জেলা হাসপাতালে চিকিত্‌সাধীন। রবিবার দুপুরে এই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও কয়েক জন।

তাঁদেরই এক জন জানালেন অভিজ্ঞতার কথা। বসিরহাটের ঝুরুলি গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ হোসেন খাঁ ভাই সাহিন আহমেদকে নিয়ে রবিবার গিয়েছিলেন সিনেমা দেখতে। হাফ টাইম পর্যন্ত দিব্যি চলছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বক্সে বসে দু’ভাই মজে শাহরুখ-দীপিকাতে। হাফ টাইমের পরেই ঘটল বিপত্তি। মুরাদ বলেন, “হঠাত্‌ একটা মড়মড় করে আওয়াজ। তারপরে ধুপধাপ শব্দ। দেখলাম, উপর থেকে কাঠের চাঙড় খসে খসে পড়ছে। মনে হচ্ছিল, গোটা সিলিংটাই ভেঙে ঘাড়ে পড়বে। হলের মধ্যে তুমুল চিত্‌কার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায়। আমাদের বক্সের কাচ ভেঙে পড়ল। ভাইয়ের হাত ধরে কোনও মতে বেরিয়ে এলাম বক্স থেকে। ছুট দিলাম বাইরের দিকে।” কিন্তু ছুটলেই তো হল না। তখন আরও অনেকে প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন দরজার দিকে। অপরিসর সেই দরজা দিয়ে বেরোতে গিয়েও জখম হয়েছেন অনেকে। চাঙড় খসে হাত-পা ভেঙেছে কারও কারও। মুরাদের কথায়, “দরজা দিয়ে বেরোনোর সময়ে দেখলাম এক জন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। মনে হল ঘাড়ের দিকে কোনও বড়সড় কাঠের টুকরো এসে পড়েছে। দু’জনের মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছিল। সে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য।”

বসিরহাট শহরের টাকি রাস্তার ধারে বহু প্রাচীন হল ফাল্গুনী। বহু মানুষের শৈশব-যৌবনের বহু সুখের সাক্ষী। সেই হলের এই হাল দেখে ব্যথিত অনেকেই। শহরের এক প্রবীন নাগরিক আক্ষেপ করে বললেন, “রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এই অবস্থা। আজ বড় রকম বিপদ ঘটতে পারত। শুনছি, হলে লোক কম ছিল বলেই তেমন কিছু ঘটেনি।”


নিকারিপাড়ার জখম সুজাদ আলি মণ্ডল।

পুলিশ ও দমকলও মনে করছে সে কথা। হলের প্রায় আশি শতাংশ কাঠের ফলস্‌ সিলিংই ভেঙে পড়েছে। সেটা মূলত ছিল সামনের দিকে। কম টাকার টিকিট যেখানে। ইদানীং সে দিকে লোক কমই বসেন বলে স্থানীয় ছেলে-ছোকরাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল। ঘটনার খবর পেয়ে পৌঁছন বসিরহাট থানার আইসি সৌম্যশান্ত পাহাড়ি। আসে দমকল। তত ক্ষণে আবার হলের গেটে তালা দিয়ে পালিয়েছেন গুটিকয় কর্মী। তালা খুলিয়ে হলে ঢোকে পুলিশ-দমকল। ভেঙে পড়া সিলিংয়ের তলায় কেউ চাপা পড়ে আছে কিনা, তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি। আইসি বলেন, “দর্শক কম থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। এক জনকে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কী পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে।” তবে হলের মালিক যে ঠিক কে, তার উপযুক্ত তথ্য নেই পুলিশের কাছেও। হল বর্তমানে লিজে চলে। যার মালিক থাকেন কলকাতায়। বসিরহাটে তিনটি সিনেমা হল। সব ক’টির পরিকাঠামোই এই পরিস্থিতিতে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রতন দত্ত এ দিন স্ত্রী কাকলিকে নিয়ে গিয়েছিলেন নতুন রিলিজ হওয়া ছবি ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ দেখতে। রবিবারের দুপুরে খাওয়া-দাওয়া সেরে বেরিয়েছিলেন। ফুরফুরে মেজাজ। বেলা পৌনে ১টার শো। ঘণ্টা দেড়েক পরে হঠাত্‌ই সুর কাটল। রতনবাবুর কথায়, “ছাদ থেকে অমন কাঠের চাঙড় খসে পড়তে দেখে নিমেষে রটে যায়, হলের মাথায় প্লেন ভেঙে পড়েছে। তখন আর যুক্তি-বুদ্ধি কাজ করছিল না কারও। ধুলোয় ঢেকে গিয়েছিল হল। তার মধ্যে ছবি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গোটা হল প্রায় অন্ধকার। ওই পরিস্থিতিতে আরও আতঙ্ক ছড়ায়। ব্যালকনির তলায় ছিলাম আমরা। সে জন্যই কোনও রকম চোট পাইনি।” আশপাশের লোকজন এসে প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারের কাজে হাত লাগান।

ঘটনা যখন ঘটছে, তখন পর্দায় দীপিকা নাচ শেখাচ্ছেন শাহরুখ খানকে। “মানোয়ারা লাগে সে মানোয়ারা লাগে...” গানের তালে তালে ঘন ঘন সিটি পড়ছে। তুমুল মজে পাবলিক। এ দিন দুর্ঘটনার পরে শো বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলাই বাহুল্য। এক যুবককে গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে শোনা গেল, “অর্ধেক পর্যন্ত দেখতে পেলাম। গায়ের ব্যথা মরলেই কোথাও গিয়ে বাকি ছবিটা দেখতেই হবে। শাহরুখের ছবি পুরোটা না দেখলে রাতে ঘুমই আসবে না!”

—নিজস্ব চিত্র।

basirhat phalguni cinema hall terrace broken injury southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy