অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কারও নাম করেননি। শুধু ‘ভাইপো’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। বলেছেন ‘ভাইপোর’ কোটি টাকার চারতলা বাড়ির কথা। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই ‘ভাইপো’ সংক্রান্ত মন্তব্যের পরে তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি।
কোভিডে স্বামীহারা এক মহিলা দুই সন্তান নিয়ে আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে আদালতে এসে ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার অভিযোগ করলে বিচারপতি এ দিন বলেন, "চোলাই মদ খেয়ে কেউ মারা গেলে ২ লক্ষ টাকা দিচ্ছে, আর কোভিডে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কত টাকা দিচ্ছে রাজ্য? আদৌ কি টাকা ধার্য করা হয়?’’ এর পরেই কোনও ব্যক্তির নামোল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘‘কে এক জন ভাইপো আছে। তার চারতলা বাড়ি। কোটি টাকার বাড়ি। এত টাকা আসে কোথা থেকে?’’
বিচারপতির এই মন্তব্যের পরে ঝাঁঝালো কথা শোনা গিয়েছে বিভিন্ন তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের গলায়। বিচারপতি নির্দিষ্ট ভাবে কারও নাম না করলেও তাঁকে আক্রমণ করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিচারপতির চেয়ারে বসে যা ইচ্ছে বলা যাবে? রাজনীতি করা যাবে?...ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি করুন।’’ কোভিডে মৃতদের রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেয় কি না, তা নিয়ে এ দিন রাজনৈতিক মহলে কোনও আলোড়ন পড়েনি। কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে ‘ভাইপো’-মন্তব্য। কুণাল নিজের এক্স-হ্যান্ডলে বিচারপতি বা কারও নাম উল্লেখ না করে লিখেছেন, ‘‘গাঙ্গুলি তাঁর বেড়ে ওঠার সময়ে জ্যোতি বসুর পুত্র চন্দন বসুকে ঘিরে নানা ইস্যু দেখে অভ্যস্ত। ‘ভাইপোর কোটি টাকার বাড়ি’ বলতে উনি ওঁর ওই ভাইপোর কথা বলেছেন কি? বাকি কিছু বলতে চাইলে চেয়ার ছেড়ে রাজনীতি করুন। বাড়াবাড়িটা সীমাহীন হয়ে যাচ্ছে।’’ এর পরে সেই ‘গাঙ্গুলির’ ইস্তফাও দাবি করেন তিনি। মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোন ভাইপোর চারতলা বাড়ির কথা বলেছেন, এ বার আমাদের সেই খোঁজ করতে হবে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘ভাইপো শুনলেই তৃণমূল এত ক্ষেপে ওঠে কেন? তার মানে কি তারাও জানে যে, এমন বিপুল বৈভব বাংলার রাজনীতিতে এক জন ভাইপোরই আছে! রবীন্দ্রনাথের দেওয়া নামের বাড়িতে চলমান সিঁড়ি, ঝাড়বাতি— এ সবের চর্চা তো অনেক দিনের। বিজেপি আর তৃণমূলের হাতে রাজনীতি পয়সা কামানোর খেলায় পরিণত হয়েছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, তিনি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। আমরা জানি, তাঁর দাদার একটি হার্ডঅয়্যারের দোকান রয়েছে। কোন ‘কনসালট্যান্সি’ (উপদেষ্টা হিসেবে কাজ) করে সেই পরিবারের ভাইপোর এত সম্পত্তি হল, তা নিয়ে মানুষের কৌতূহল হবেই। সেই জন্যই সর্বত্র এই নিয়ে এত চর্চা।’’
আদালতের খবর, যে মামলার এ দিনের শুনানির সময়ে এত বিতর্ক, তা করেছেন দীপ্তি সরকার নামে এক মহিলা। তাঁর স্বামী বিভূতিকুমার সরকার উত্তর ২৪ পরগনার একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। কোভিডে ২০২০ সালে তিনি মারা যান। দীপ্তি ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ চাকরির আবেদন জানান। কিন্তু জেলা স্কুল পরিদর্শক সেই আর্জি খারিজ করে দেন। অভিযোগ, কোনও ক্ষতিপূরণও পাননি দীপ্তি। তার ফলে দুই সন্তান নিয়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন তিনি। এ নিয়ে দীপ্তি কলকাতা হাই কোর্টে যে মামলা করেছিলেন, এ দিন সেই মামলায় রাজ্যের কৌঁসুলিকে রিপোর্ট দিতে বলেছেন বিচারপতি। ২৮ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy