নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন ফিজিওথেরাপিস্টের।
প্রেসক্রিপশনে গোটা গোটা করে বাংলায় লেখা— ‘অস্থি, শিরা ও জেনারেল চিকিৎসক’। শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস, এমডি, ডিএমএস (অর্থো) এবং ডিপিটি। চুটিয়ে প্র্যাক্টিস করছেন মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায়। এস চট্টোপাধ্যায় নামে (পুরো নাম জানাতে অনিচ্ছুক) এই অস্থি-বিশেষজ্ঞের বহরমপুর ও রঘুনাথগঞ্জের চেম্বারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে হয় বেশ কষ্ট করেই।
এ-হেন ডাক্তারবাবুর সম্পর্কে সম্প্রতি অভিযোগ জমা পড়েছিল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলে। কোথা থেকে এমবিবিএস করেছেন? ফোনে প্রশ্ন করায় এস চট্টোপাধ্যায় দাবি করলেন, তিনি জোড়া এমবিবিএস! বললেন, ‘‘প্রথমে একটা ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিবিএস করেছিলাম। সেই সার্টিফিকেট হারিয়ে গিয়েছে। তার পরে ২০০২ সালে বারাসতে অল্টারনেটিভ মেডিসিনের একটা কেন্দ্র থেকে এমবিবিএস করেছি। এমডি আর অর্থোপেডিক্সে ডিএমএস করেছিলাম কলকাতার একটা জায়গা থেকে। কিন্তু সেই ইনস্টিটিউটটা এখন উঠে গিয়েছে!’’
আপনি কি তা হলে বৈধ চিকিৎসক? সরাসরি জবাব এড়িয়ে ফোনের ও-প্রান্ত থেকে পাল্টা প্রশ্ন আসে, ‘‘বিষয়টা কোনও ভাবে মিটিয়ে নেওয়া যায় না?’’
আর এক জনের নাম এম আহমেদ অর্থাৎ মনিরুল আহমেদ। তাঁরও প্র্যাক্টিস মূলত মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায়। প্রেসক্রিপশনে পরিচয় লেখা আছে ‘ফিজিওথেরাপিস্ট’। সেই সঙ্গে নামের আগে রয়েছে ‘ডক্টর’। আইন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টরা কোনও ভাবেই প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখতে পারেন না। সেটা অবৈধ। মৌলালির একটি কেন্দ্র থেকে ২০০৮ সালে ফিজিওথেরাপিতে একটি ডিপ্লোমা কোর্স করেছেন মনিরুল।
এ-হেন মনিরুল নামের আগে ‘ডাক্তার’ তকমা মেরে ছাপানো প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখছেন কী ভাবে? মনিরুলের জবাব, ‘‘অনেক ফিজিওথেরাপিস্টই ডিপ্লোমা করে নামের আগে ডাক্তার লিখে দিব্যি প্র্যাক্টিস করছেন। তাই আমিও করছি। অবশ্য সব সময়েই ওষুধ লিখি না। গুরুতর কেস হলে রোগীর স্বার্থেই কিছু ওষুধ লিখে দিই।’’
ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অস্বীকৃত কেন্দ্র থেকে নাম-কা-ওয়াস্তে ডিপ্লোমা করে বেশ কিছু ফিজিওথেরাপিস্ট ফিজিক্যাল মেডিসিন ও হাড়ের ডাক্তার হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে রোগী দেখতে থাকায় রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল যারপরনাই উদ্বিগ্ন। এমবিবিএস করলেও ‘ডক্টর’ আবার পিএইচডি হলেও ‘ডক্টর’ লেখাটাই রেওয়াজ। এটাকে কাজে লাগিয়েও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে রোগী এবং তাঁদের পরিবারকে। কলকাতারও কিছু নামী বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের নামের তালিকায় পিএইচডি করা ফিজিওথেরাপিস্টদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের নামের আগে ‘ডক্টর’ থাকায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে কাউন্সিলে অভিযোগ এসেছে।
আরও পড়ুন: সত্যবান ডাক্তার সত্য বলছেন কি
এই অবস্থায় কাউন্সিল মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছে, পিএইচডি ডিগ্রিধারী ফিজিওথেরাপিস্টদের নামের পাশে বাধ্যতামূলক ভাবে ‘পিটি’ বা ফিজিওথেরাপিস্ট শব্দটি লিখতে হবে। সেই নির্দেশের এক ঘণ্টার মধ্যে একটি বেসরকারি হাসপাতাল নিজেদের ওয়েবসাইটে ফিজিক্যাল থেরাপি বিভাগের এক সিনিয়র কনসালট্যান্টের নামের পাশে সাততাড়াতাড়ি ‘পিটি’ শব্দটি বসিয়ে দিয়েছে। অন্য কয়েকটি হাসপাতালেও একই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সব চিকিৎসক যাতে কোনও ভাবেই প্রেসক্রিপশনে ওষুধ না-লেখেন, দেওয়া হয়েছে সেই নির্দেশও।
কাউন্সিল সূত্রে বলা হয়, ভুয়ো চোখের ডাক্তারদের নিয়েও অভিযোগ জমা পড়েছে কাউন্সিলে। তাতে বলা হয়েছে, অনুমোদনহীন সংস্থা থেকে অপটোমেট্রিতে ডিপ্লোমা করে অনেকেই চক্ষুরোগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে প্র্যাক্টিস করে চলেছেন। এই ধরনের অভিযোগ নিয়েও উদ্বিগ্ন কাউন্সিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy