Advertisement
E-Paper

Teaching Under Tree: করোনা বিধি মেনে শিক্ষক নামতা পড়ালেন গাছতলায়

আম গাছতলায় পাঠশালা খুলে বসলেন স্যর। কোভিড বিধি মেনে, এক এক জন পড়ুয়ার মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে চলল পড়াশোনা।

সুস্মিত হালদার

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:২৫
গাছতলায় চলছে পড়াশোনা।

গাছতলায় চলছে পড়াশোনা। ছবি: প্রণব দেবনাথ।

স্কুলে মিড-ডে মিল দিতে আসার পথে দেখা হত বাচ্চাগুলোর সঙ্গে। স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা হলেই বছর চল্লিশের মানুষটিকে ঘিরে ধরে সকলের একটাই প্রশ্ন— ‘‘স্যর, আবার কবে স্কুলে যাব?’’

সে উত্তর দিতেই এ বার আম গাছতলায় পাঠশালা খুলে বসলেন স্যর। কোভিড বিধি মেনে, এক এক জন পড়ুয়ার মাঝে নির্দিষ্ট দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে চলল পড়াশোনা।

স্যরের নাম ইন্দ্রনীল বন্দ্যেপাধ্যায়। তিনি ধুবুলিয়া ৭ নম্বর গ্রুপের বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক স্কুলের সহ শিক্ষক। করোনা সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে ফের বন্ধ হয়েছে স্কুল। নতুন বছরে কবে কচিকাঁচারা স্কুলে ফিরবে, সে উত্তর জানেন না কোনও শিক্ষকই। ইন্দ্রনীল বেশ বুঝতে পারছিলেন, দীর্ঘ দিনের অনভ্যাসে খুদে পড়ুয়ারা পড়াশোনা ভুলতে বসেছে। আর তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও নিজের মতো করে পড়ুয়াদের পাঠশালা চালু রাখবেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্কুলের আশেপাশের বাসিন্দা, পড়ুয়াদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেন। সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক হয়— গ্রামের মাঝে, স্কুলের কাছে গৌতম সরকারের বাড়ির বাগানে আম গাছতলায় চলবে পাঠশালা। জায়গাটি পরিষ্কার করে বৃহস্পতিবার সেখানেই শুরু হল ওই স্যরের ক্লাস।

এ দিন আম গাছতলার পাঠশালায় খুদে পড়ুয়ারা হাজির হয়েছিল রঙিন পোশাকে। এক মুখ হাসি নিয়ে তারা স্যরের কথা মেনে দূরত্ব-বিধি বজায় রেখে ক্লাস করেছে। আম গাছতলায় বিছিয়ে রাখা শতরঞ্চিতে বসে, মুখে মাস্ক পরে চলেছে এ দিনের নামতা পড়া। আর ব্ল্যাক বোর্ডে চক দিয়ে লিখে-লিখে জোর গলায় পড়িয়েছেন ইন্দ্রনীল। সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন গাছতলার পাঠশালায় পড়ুয়াদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ রেখে দেওয়া স্যানিটাইজ়ার আর মাস্কের কথাও।

ইন্দ্রনীল বলছেন, “কত দিন আর ঘরে বসে নির্লজ্জের মতো বেতন নেব? জানি না, শেষ পর্যন্ত কী হবে। তবে আমি আমার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাব।”

আপাতত, শনি-রবিবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো এই স্কুল চলবে। এক দিন প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং পর দিন তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস চলবে।

এ দিন দুই মেয়ের হাত ধরে গাছতলার স্কুলে পৌঁছে দিতে এসেছিলেন অভিভাবক সুমিত্রা বিশ্বাস। একটু দূরে বসে তিনি স্যরের পড়ানো দেখছিলেন। সেই ফাঁকে সুমিত্রা বলেন, “কত দিন পর এ ভাবে ওদের পড়তে দেখছি। খুব ভাল লাগছে। স্যরের খুব ভাল হবে।”

বিষয়টি শুনে নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান বিমলেন্দু সিংহরায় বলছেন, “এই ধরনের শিক্ষকই তো আমাদের প্রয়োজন।” তবে সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি— “দেখতে হবে, যেন পড়ুয়ারা সেখানে পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষা করে।” আর শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের শিশু-বিশেষজ্ঞ শান্তনু ঘোষ বলছেন, “চারদিক ফাঁকা জায়গায় মুক্ত বাতাসে যদি পড়ুয়ারা দূরত্ব-বিধি মেনে, মাস্ক ব্যবহার করে পড়াশোনা করে, তা হলে ক্ষতির কোনও আশঙ্কা নেই।’’

Open Schooling Dhubulia Teaching
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy