Advertisement
E-Paper

সন্তানের মঙ্গল কামনায় সাগরে ডুব আবদুল্লার

ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে জল থেকে উঠলেন আবদুল্লা শেখ।হাড় জমে যাওয়া ঠান্ডা। ভেজা গায়েই শালটা কোনও মতে জড়িয়ে জানালেন, মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন। বছর চারেক আগে ছেলে অসুস্থ হয়েছিল। মা গঙ্গার কাছে মানত করেছিলেন, ছেলে সুস্থ হলেই গঙ্গাস্নানে যাবেন। ছেলে ভাল হয়েছে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২৭
সংক্রান্তির স্নান। শনিবার গঙ্গাসাগরে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

সংক্রান্তির স্নান। শনিবার গঙ্গাসাগরে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।

ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে জল থেকে উঠলেন আবদুল্লা শেখ।

হাড় জমে যাওয়া ঠান্ডা। ভেজা গায়েই শালটা কোনও মতে জড়িয়ে জানালেন, মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছেন। বছর চারেক আগে ছেলে অসুস্থ হয়েছিল। মা গঙ্গার কাছে মানত করেছিলেন, ছেলে সুস্থ হলেই গঙ্গাস্নানে যাবেন। ছেলে ভাল হয়েছে। ফি বছর সাগর মেলায় স্নান সেরে যান বাবা। সন্তানের মঙ্গলকামনা আর বিশ্বাসের জোরে ভাঙে ধর্মের বাঁধ।

বিহারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা পার্বতী সাউ কোমর জলে দাঁড়িয়ে ছিলেন সন্তানকে বুকে চেপে। হু হু শীতে শিউরে উঠছিলেন থেকে থেকে। শুধুই শীতে নয়, বুকে চেপে রাখা মাস ছয়েকের সন্তানকে ভাসিয়ে দিতে হবে গঙ্গার স্রোতে। কয়েক ফুট দূরে দাঁড়িয়ে জেঠিমা জল থেকে তুলে তোয়ালে মুড়ে দিলেন একরত্তিকে। কনকনে ঠান্ডা জলে খানিক ক্ষণ থেকে সে তখন তারস্বরে কাঁদছে। বিয়ের বহু বছর পরে, বহু চেষ্টায় সন্তান জন্মালেও, চিকিৎসকেরা পার্বতীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এ শিশু বাঁচবে না।

হাসপাতাল-ডাক্তারখানা ফুরিয়ে গিয়ে মন্দিরের দোরে দোরেই ঘোরেন এখন পার্বতী। মা গঙ্গার কাছে মানত করেছিলেন, ‘‘এ সন্তান বাঁচলে তোমাকেই দেবো।’’ সে জন্যই স্নানে আসা। জেঠিমার কোল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে হাড় জিরজিরে মেয়েকে বুকে চেপে হু হু করে কেঁদে ফেললেন পার্বতী। সাগরের হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে গেল মায়ের আর্তি।

ও দিকে, ভোর থেকে শুরু করে পড়ন্ত বিকেলেও দেখা গেল, পায়ের গোছ-ডোবা জলে দণ্ডি কাটছেন ঝাড়খণ্ডের অজিতেশ। হাতে পায়ে দড়ি বাঁধা। যার অন্য খুঁটটা ধরে রেখেছেন এক বন্ধু, পুণ্য করতে গিয়ে যাতে জলের টানে ভেসে না যান। চামড়ার অসুখে জীবনটা শেষ হয়ে গিয়েছিল অজিতেশের। চাকরি চলে গিয়েছিল, সরে গিয়েছিল পরিবারও। অসুখ সারলে গঙ্গাসাগরে দণ্ডি কাটবেন বলে মানত ছিল তাঁর। অসুখ সেরেছে। তাই এই কৃচ্ছসাধন। বিচিত্র ধর্ম-বর্ণ-পেশার মহামিলন ক্ষেত্র গঙ্গাসাগর, মকরসংক্রান্তির মেলায় সাক্ষী থাকল এমনই নানা দৃশ্যের।

বাগবাজারের অসীম রায় সাত মাসের ছেলেকে কোলে প্রথম বার সাগরে ডুব দিয়েছিলেন। সেটা প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আগের কথা। তার পর থেকে প্রতি বার আসেন সাগরে। বছর আশির অসীমবাবুর কথায়, ‘‘গঙ্গাসাগরে না এলে বছরটা যেন সম্পূর্ণ হয় না। ঠান্ডায় কষ্ট হয় ঠিকই, কিন্তু বড় তৃপ্তি পাই।’’

ওড়িশার মনোরমাদেবী বিয়ের পরে মধুচন্দ্রিমায় এসেছিলেন সাগরে। সেটা ঠিক কত বছর আগে, মনেও করতে পারেন না মনোরমা। আগে সংক্রান্তিতে স্নানে আসতেন স্বামীর সঙ্গে। বছর খানেক আগে মারা গিয়েছেন স্বামী। এ বছর নাতির সঙ্গে গা ভেজালেন বৃদ্ধা।

ভিড়ের মধ্যেও ব্যবসায়ীদের আফসোস যাচ্ছে না। অনেকেরই মত, অন্য বারের মতো এ বার ভিড় জমেনি মেলায়। প্রশাসনের এক কর্তার মতে, নোটের সমস্যার জন্যই ভিড় তুলনায় কম। তাঁর অভিজ্ঞতায়, অনেকের দু’রাত থাকার মতোও টাকা নেই হাতে। যে কারণে স্নান সেরে দিনের দিন ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।

Gangasagar Pilgrims
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy