সাইবার অপরাধ দিনের পর দিন বাড়ছে। কিন্তু এই অপরাধ দমনে পুলিশের দক্ষতা এখনও সে ভাবে গড়ে ওঠেনি বলে জানালেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল পিঙ্কি আনন্দ। শনিবার সোনারপুরের একটি বেসরকারি আইন কলেজের অনুষ্ঠানে এই কথা জানান তিনি। পিঙ্কির মতে, শুধু তদন্তকারীরাই নন, দেশের কৌঁসুলিদেরও সাইবার আইনের ব্যবহার নিয়ে ধন্দ রয়েছে। ফলে বিচারের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব পড়ছে।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে গোটা দেশে সাইবার অপরাধ ২০.৫ শতাংশ বেড়েছে। এ বছর তা আরও বা়ড়তে পারে বলে মনে করছেন পুলিশেরই অনেকে। এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও জানান, সাইবার অপরাধের নিরিখে বিশ্বে চিন ও আমেরিকার পরেই ভারত। তাই এই অপরাধ মোকাবিলায় আইনের কড়াকড়ি আরও জোরালো হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এই পরিস্থিতিতেও পুলিশের অনেকেই যে সাইবার অপরাধ নিয়ে সড়গড় নন, তা মেনে নিয়েছেন পুলিশের অনেক শীর্ষকর্তাই। রাজ্যের এক পুলিশকর্তার অভিজ্ঞতা, সাইবার অপরাধের একটি ঘটনায় এক অধস্তন অফিসার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬(এ) ধারায় মামলা করা হবে কি না? ‘‘ওই আইন যে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে, সেই ধারণাও ওই অফিসারের নেই,’’ হতাশ গলায় বলছেন পুলিশকর্তা।
পুলিশের অনেকে এ-ও বলছেন, সাইবার অপরাধীরা এমনিতেই অনেক বেশি শিক্ষিত এবং চতুর। তার উপরে প্রযুক্তি নিত্যদিন উন্নত হচ্ছে। বদলাচ্ছে অপরাধের ধরনও। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীদের চিহ্নিত করা মুশকিল। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের কথায়, ‘‘অপরাধ করার সময় চোর-ডাকাতদের চেহারা দেখা যায়। কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের অপরাধে তো চেহারা বোঝা যায় না।’’ পুলিশের মতে, সাইবার অপরাধ সামাল দিতে গেলে প্রযুক্তির সঙ্গে রীতিমতো সড়গড হওয়া প্রয়োজন। তাই এর মোকাবিলায় জেলা এবং কমিশনারেটে বাছাই করা অফিসারদের তালিমও দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের সাইবার অপরাধ মামলায় বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, একই দক্ষতা আইনজীবীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন। জোরালো সওয়াল করতে না পারলে আদালতে ছাড় পেয়ে যেতে পারেন অভিযুক্তেরা। সাইবার অপরাধের বাড়বাড়ন্তের জন্য রাজ্য প্রশাসন সরকারি কৌঁসুলির দল গড়ার পরিকল্পনা করেছে।