শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কৃষ্ণনগরে একটি মণ্ডপে। —নিজস্ব চিত্র।
আজ শুরু জগদ্ধাত্রী পুজো। কৃষ্ণনগরে সাবেক পুজোর পাশাপশি ঘুর্ণিতে থিমের পুজো দেখতে হাজির হবেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। সারারাত পায়ে হেঁটে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুন দেখবেন ছেলে-বুড়ো সবাই। সেই আনন্দযজ্ঞ নির্বিঘ্ন করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি হোয়াটস্অ্যাপে ‘গ্রুপ’ খোলা সব কাজ সারা। এতে পুজোর দিনগুলিতে যেমন দর্শনার্থীদের সামাল দেওয়া যাবে তেমনি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা সামাল দেওয়া যাবে বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের।
‘গ্রুপে’ নজরদারি
গণ্ডগোল এড়াতে হোটাস্অ্যাপকে হাতিয়ার করল পুলিশ। ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। সেই তালিকায় এ বার যোগ হল হোয়াটস্অ্যাপ। সেই মতো জেলার পুলিশ প্রশাসনের তরফে একটি ‘গ্রুপ’ খোলা হয়েছে। গ্রুপে জেলার পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিএসপি, কোতোয়ালি থানার আইসি ও অন্যান্য অফিসারদের পাশাপাশি থাকবেন সব বারোয়ারি পুজোর সম্পাদকের নম্বর। কোথাও সমস্যা হলে সেটা গ্রুপে জানিয়ে দিতে হবে। কোথাও গণ্ডগোল হলে ঘটনাস্থলের ছবি পাঠিয়ে দিতে পারবেন। তা হলে বাকিরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবেন। পুলিশ সুপার-সহ অন্যেরা প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবেন।
বসল সিসি ক্যামেরা
গতবার সাফল্য মিলেছিল। এ বার তাই সেই পথে হাঁটল পুলিশ। গত বছর রাজবাড়ি থেকে বিসর্জনঘাট পর্যন্ত শোভাযাত্রার রাস্তায় একাধিক ভিডিও ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এতে বিসজর্নের দিন গণ্ডগোল অনেকটাই কমিয়ে ফেলা গিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল জনসমুদ্রকে। এ বারও তাই ওই শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ও মোড়ে ১৪টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বসানো হয়েছে ১০টি ভিডিও ক্যামেরাও। জেলা পুলিশের কর্তাদের দাবি, ‘‘কোনও সমস্যা হলে তা আমাদের নজরে চলে আসবে। আমাদের কাছেও ফুটেজ থেকে যাচ্ছে। যা দেখে পরবর্তীকালে দোষীদের চিহ্নিত করা যাবে। গত বছর সেটা করা সম্ভব হয়েছিল।’’
সেই সঙ্গে রয়েছে পুলিশের কুকুর। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা মণ্ডপে এই কুকুরের সাহায্যে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এমনিতেই যে ভাবে চারদিকে নাশকতামূলক কার্যকলাপ শুরু হয়েছে তাতে পুলিশ কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। ইতিমধ্যেই কুকুর দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। প্রয়োজনে পুজো ও বিসর্জনের দিনগুলিতেও পুলিশ কুকুর ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়াও জেলার পুলিশের নিজস্ব জলকামানও মজুদ রয়েছে।
সিভিক ভলান্টিয়ার
ভিড় সামলাতে চারদিন শহরের সর্বত্র পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাত জন ডিএসপি ও এসডিপিও পর্যায়ের অফিসার সর্বক্ষণ শহরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। সেই সঙ্গে থাকবেন ২৯ জন ইনেস্পেক্টর, এসআই ও এএসআই পর্যায়ের ৩৩ জন অফিসার। এর মধ্যে মহিলা অফিসার থাকবে ৯ জন। এর বাইরেও পুরুষ কনস্টেবল থাকবে ৩৪৫ জন আর মহিলা কনস্টেবল থাকবে ৯৯ জন। বাইরের জেলা থেকেও প্রচুর পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে আগে এই জেলায় থাকার ফলে জগদ্ধাত্রী পুজোর ডিউটি করার অভিজ্ঞতা আছে এমন অফিসারদের শহরের বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাইরের দর্শনার্থীরা যেহেতু সারা রাত ধরে ট্রেনে করে যাতায়াত করেন তাই স্টেশন চত্বরগুলিতেও পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
এ বারের কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনগুলিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রচুর পরিমানে সিভিক ভলেন্টিয়ার মোতায়ন করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়ছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আটশো সিভিক পুলিশকে নিয়ে আসা হয়েছে শহরে। এর মধ্যে একশো জনকে এই পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৮৩ জন ট্রাফিক পুলিশের কর্মী রাস্তার যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবেন।
রাস্তায় নো-এন্ট্রি
পুজোর শুরু আগে থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়ে। সেই কারণে বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে বড় গাড়ি শহরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সকালের দিকে কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও পুজোর দিন থেকে বিকেলের পর শহরে ঢোকার সবকটি রাস্তাই নো-এন্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। করিমপুরের বাস ঘূর্ণি হালদারপাড়ামোড় এলাকায়, মাজদিয়ার বাস সন্ধ্যামাঠপাড়া, হাঁসখালি রুটের বাস কলাতলা এলাকায়, শান্তিপুর-রানাঘাট রুটের বাস পালপাড়া ও নবদ্বীপ-পলাশি রুটের বাস কলেজের মাঠে পর্যন্ত শহরে ঢুকতে পারবে। তারপর থেকে দর্শনার্থীদের পায়ে হেঁটে শহরে ঢুকতে হবে। আজ বিকেল পাঁচটা থেকে শহর নো-এন্ট্রি করে দেওয়া হবে। শনিবার সকাল পরদিন সকাল পর্যন্ত এবং রবিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ভোর পর্যন্ত নো—এন্ট্রি থাকবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy