চৈতন্যধাম নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন মায়াপুরের হোটেল ও লজগুলির নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। বৈষ্ণবতীর্থ হিসেবে গোটা বিশ্বের চৈতন্য ভক্তদের কাছে নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের পরিচিতি যত বাড়ছে প্রশাসনের মাথাব্যথাও তত বেড়েছে।
আধুনিক পর্যটন অর্থনীতির অন্যতম প্রধানস্তম্ভ হল হোটেল বা লজ। নবদ্বীপে গঙ্গার দুই পাড়ে প্রায় সারা বছর প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এলেও কোনও অজ্ঞাত কারণে ভাল মানের হোটেল বলতে যা বোঝায় তা নবদ্বীপ কিংবা মায়াপুরে তেমন নেই। ভক্তদের রাত কাটানোর জন্যে মঠমন্দিরের অতিথি আবাস যথেষ্ট হলেও সাধারণ পর্যটকের রাত কাটানোই প্রধান সমস্যা এই শহরে। সুস্থ, ঘরোয়া পরিবেশে নিশ্চিন্তে থাকা যায় নবদ্বীপে এমন হোটেল হাতে গুণে বলা যায়। বহু হোটেলের বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যবসা চালানোর অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি নবদ্বীপের পুরপ্রধান শহরের মধ্যে একটি হোটেলে হানা দিয়ে মধুচক্র হাতেনাতে ধরে ফেলেন। এরপরেই হোটেল-লজ নিয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
নিরাপদ পর্যটনের স্বার্থে নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের হোটেল মালিকদের সতর্ক করে জেলা প্রশাসনের তরফে কয়েক দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনার জন্যে গত সপ্তাহে নবদ্বীপ এবং মায়াপুরের হোটেল মালিকদের নিয়ে প্রশাসনের তরফে দু’টি আলাদা সভা হয়। বৈঠকে প্রশাসনের তরফে ছিলেন নদিয়ার সদর মহকুমাশাসক, ডিএসপি (ডিঅ্যান্ডটি), নবদ্বীপের পুরপ্রধান, আইসি, জয়েন্ট বিডিও-সহ বিভিন্ন আধিকারিকেরা। বৈঠকে জানানো হয়েছে ওই নির্দেশগুলি পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। নদিয়ার সদর মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিয়ম না মানা হলে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’
প্রশাসনের কর্তাদের মতে, যে কোনও ঘটনা ঘটার পরে প্রায় সব হোটেলের প্রথম প্রবণতাই হল তার মালিককে আড়াল করা। বেশির ভাগ হোটেলেই কর্মীদের কোনও তালিকা বা রেকর্ড নেই। কে স্থায়ী কর্মচারী, কে অস্থায়ী, কে বহিরাগত আর মালিক কে— কিছুই বোঝা যায় না। অভিযোগ, অপরাধ করে সহজে পার পাওয়ার জন্যেই এই ধরনের অস্বচ্ছতা ইচ্ছে করে তৈরি করে রাখেন হোটেল মালিকেরা। সাধারণত রাতের দিকেই অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে হোটেলগুলিতে। প্রশাসনের অভিজ্ঞতা, তখন এমন কিছু মানুষকে দায়িত্ব দেওয়া থাকে যাঁর হয়ত চাবি খোলাবন্ধ করা ছাড়া আর বিশেষ কিছু জানাই নেই! ফলে মূল ব্যক্তিকে ধরতে সময় গড়ায়। অকারণ হেনস্থার শিকার হন নিরীহ কোনও কর্মচারী। এ বার এ সব মোকাবিলা করার জন্যেই কড়া পদক্ষেপ বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান হওয়ায় নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন মায়াপুর সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে এক অবশ্য গন্তব্যস্থান। বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ নবদ্বীপ ও মায়াপুরে সারা বছরই কোনও না কোনও উৎসব লেগে রয়েছে। তার সূত্র ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ভক্তদের আসা-যাওয়ারও শেষ নেই। অথচ কুড়ি বা পঁচিশ বছর আগেও নবদ্বীপে পর্যটকের চাপ এতটা ছিল না। যত মানুষ আসতেন, তাঁদের বেশি ভাগই মন্দিরের ভক্ত হিসেবে সেখানেই কোনও রকমে মাথা গুঁজে থেকে যেতেন। এখনও উৎসবের সময়ে বিভিন্ন মঠে রাত্রিবাসের চাপ সামলাতে মন্দিরের ফাঁকা জায়গায় কিংবা ছাদে প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করতে হয়। গোশালা থেকে নাটমন্দির— ফাঁকা থাকে না কোথাও।
কিন্তু, মধ্যবিত্ত পর্যটক সপরিবারে ছুটি কাটাতে এসে এ ভাবে থাকতে মোটেও রাজি নন। নবদ্বীপের বণিক মহলেরও মত, পর্যটকেরা যত বেশি রাত্রিবাস করবেন শহরের ব্যবসাবাণিজ্য তত সমৃদ্ধ হবে। সে জন্য শহরে ভাল কিছু অতিথিশালাও দরকার। কিন্তু, সবার আগে দরকার ছিল পুলিশ-প্রশাসনের সক্রিয়তা। সম্প্রতি সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে— কিন্তু, কাজের কাজ হয় কি না এখন দেখার সেটাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy