এ বার হানা পুরুলিয়াতেও। এখানে জেলাশাসকের দফতরের এক কর্মীর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের লাগদা গ্রামের সৌরভ মুখোপাধ্যায় নামে ওই যুবককে মঙ্গলবার রাতে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গোটা রাজ্যে এ দিন আরও ১৩২ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। এর ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ১ হাজার ৮৭৪। নতুন করে ডেঙ্গি বা অজানা জ্বরে আর কারও মৃত্যুর খবর স্বাস্থ্য ভবনে পৌঁছয়নি।
পুরুলিয়ায় ডেঙ্গি আক্রান্ত যুবকের বাবা মানিকমণি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিনটি বেসরকারি ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।’’ বুধবার ওই গ্রামে স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল যায়। তাঁরা ওই যুবকের বাড়ির একটি ড্রামে জমা জলে এডিস মশার লার্ভা দেখতে পান। পুরুলিয়ার জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিল দত্তও ডেঙ্গির প্রকোপের কথা স্বীকার করেছেন। বাঁকুড়ায় ডেঙ্গি সংক্রমণ শুরু হয়েছে বছরের গোড়া থেকেই। পুরুলিয়া তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতর উদ্বিগ্ন।
বুধবার স্বাস্থ্যভবন থেকে সংক্রামক রোগের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, উত্তরবঙ্গ থেকে এ বছর দক্ষিণবঙ্গে এনসেফালাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এ বছর এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এনসেফালাইটিসে ৬১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। উত্ত়রবঙ্গে ২৪ জন। দক্ষিণবঙ্গে ৩৭ জন। মারা গিয়েছেন ১২ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রকোপ অবশ্য কিছুটা কম। গত বছর এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৪। মৃত্যু হয়েছিল ৪৮ জনের। স্বাস্থ্যভবন জানাচ্ছে, এ বছর রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাঁকুড়া, বর্ধমান এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে মৃতের
সংখ্যা সব চেয়ে বেশি। এ বছর মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
এ বার বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া দ্রুত ছড়ানো নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কেউ কেউ টানা বৃষ্টির অভাবকেই দায়ী করছিলেন। তাঁদের আশা, নিম্নচাপের জেরে সোমবার থেকে যে বৃষ্টিটা গোটা দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে হচ্ছে তাতে মশার আঁতুড়ঘর অনেকটাই ভেসে যাবে। তাতে সংক্রমণ কিছুটা হলেও কমে যাবে। বিশেষ করে বাড়ির ছাদে, অথবা রাস্তায় থাকা বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা জল উপচে পড়লে সেই জলের সঙ্গে মশার লার্ভাও বেরিয়ে যাবে অনেকটা।
সাময়িক ভাবে এতে সংক্রমণের হার কমবে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্তাদের অনেকেই।
তবে পরজীবী বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে পুরোপুরি সহমত নন। তাঁরা বলছেন, বাড়ির বাইরে যে সব জমা জল আছে, তা এই বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও বাড়ির ভিতরে যেখানে জল জমে থাকে, তা সরবে না। সাধারত ডেঙ্গির মশা বাড়ির ভিতরে জমা পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। তাই অতি বৃষ্টিতে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ কিছুটা ধাক্কা খেলেও, ডেঙ্গি সংক্রমণে কোনও হেরফের হবে না বলে মনে করছেন ওই সব বিশেষজ্ঞ।
তাঁরা আবার আশঙ্কা করছেন, বৃষ্টি চলে যাওয়ার পরে যে জলটা জমে থাকবে, তা বরং দ্রুত না সরাতে না পারলে হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রবল ভাবে ফিরে আসতে পারে ম্যালেরিয়া। তাই বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরে ব্যাপক জল সরানোর কর্মসূচি চালু করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy