সিআইডি-কে তদন্তভার দিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট বলেছিল, মালদহের নিখোঁজ শিশুকন্যাকে উদ্ধার করতে না-পারলে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধরে জেলে পোরা হবে।
বাবা-মা তাঁদের যে-মেয়ের খোঁজে দীর্ঘদিন হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন এবং না-পেয়ে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন, সেই শিশুটিকে শুক্রবার আনা হয় উচ্চ আদালতে। মেয়েকে দেখতে পেলেন, কিন্তু সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেন না মা। আদালতের নির্দেশ, শিশুটি এখন পালক মা-বাবার কাছেই থাকবে।
আদালতেও শিশুটির সঙ্গে ছিলেন তার পালক পিতা-মাতা। রাজ্য সরকারের তরফে শিশুকন্যাটিকে বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে হাজির করিয়ে জানানো হয়, দত্তক দেওয়ার নিয়মবিধি মেনেই গত বছরের ২০ জুলাই তাকে পালক বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত বিচারক।
মেয়ের হদিস পেতে শিশুটির মা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। ৩০ নভেম্বর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, অবিলম্বে ওই শিশুর হদিস দিতে হবে। শিশুটিকে উদ্ধার করে আনার ভার সিআইডি-কে দেওয়া হয়। এ দিন প্রাথমিক রিপোর্ট পেশের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
রাজ্য সরকার এ দিন শিশুটিকে আদালতে হাজির করানোর পরে ডিভিশন বেঞ্চ নিখোঁজ-মামলার নিষ্পত্তি করে দেয়। হাইকোর্ট জানায়, শিশুটির মায়ের যদি মনে হয়ে থাকে যে, তাঁর মেয়েকে নিয়ম মেনে দত্তক নেওয়া হয়নি, তা হলে তিনি জেলা বিচারকের কাছে দত্তক দেওয়ার নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাতে পারেন। আদালত পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত শিশুটি তার পালক বাবা-মায়ের কাছেই থাকবে।
বছর দুয়েক আগে মালদহের ‘চাইল্ড লাইন’ প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটরের হাতে তিনি তাঁর শিশুকন্যাকে তুলে দিয়েছিলেন বলে হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন জয়শ্রী চৌধুরী নামে এক গৃহবধূ। স্বামীর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি মিটে যাওয়ার পরে তিনি তাঁর দু’বছরের মেয়েকে ফেরত পেতে ওই কো-অর্ডিনেটরের দ্বারস্থ হন। আদালতে জয়শ্রীর বক্তব্য ছিল, চাইল্ড লাইন-কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, শিশুটিকে চাইল্ড কেয়ার কমিটি (সিডব্লিউসি)-র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জয়শ্রীর অভিযোগ ছিল, সিডব্লিউসি-কর্তৃপক্ষ তাঁর মেয়ের কোনও হদিস দিতে পারেননি।
সরকারি কৌঁসুলি সাবির আহমেদ এ দিন আদালতে জানান, সিআইডি ওই শিশুকন্যার হদিস পেয়েছে। সে রয়েছে তার পালক বাবা-মা সুব্রত ও মা মুনমুন চক্রবর্তীর কাছে। শিশু-সহ ওই দম্পতিকে বিচারপতিদের সামনে আনা হয়। আদালতে মেয়েকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন জয়শ্রী। মেয়েকে কোলে ফিরে পাওয়ার জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেন তিনি। আইনজীবীরা তাঁকে বাইরে নিয়ে গিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
জয়শ্রীর আইনজীবী কল্লোল মণ্ডলের উদ্দেশে বিচারপতি রায় বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করে কোনও নির্দেশ দেওয়ার এক্তিয়ার এই ডিভিশন বেঞ্চের নেই।’’ ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি মলয়মরুত বন্দ্যোপাধ্যায় তার পরেই কল্লোলবাবুর কাছে জানতে চান, ‘‘শিশুটিকে থানায় জমা দিয়েছিলেন তার মা। পুলিশের হাতে তাকে তুলে দেওয়ার পরবর্তী ছ’মাসে ওই মহিলা কী করছিলেন? নিম্ন আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করার আইনি এক্তিয়ার আমাদের নেই।’’
জয়শ্রীর বাবা বেচন চৌধুরী এ দিন জানান, তিনি চান, তাঁর মেয়ে নিজের সন্তানকে ফিরে পাক। জয়শ্রীর স্বামী সুমন্তের মা রমলাদেবীও জানান, তাঁরা তাঁদের নাতনিকে ফিরে পেতে চান। কিন্তু আইন মেনে দত্তক দেওয়ায় শিশুটিকে আপাতত কাছে রাখার অধিকার তার পালক বাবা-মায়েরই। ‘‘এই অবস্থায় নিম্ন আদালতের নির্দেশ পুনরায় বিবেচনা করার আবেদন জানানো হবে,’’ বলেন জয়শ্রীর কৌঁসুলি কল্লোলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy