জয়ী তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীকে নিয়ে সমর্থকদের উল্লাস। কোলাঘাটে পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
বিধানসভায় বিপুল জয়ের পরেও তমলুকে তিনটি ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছিল তৃণমূল। তমলুক লোকসভার উপনির্বাচনের ফল ভুলিয়ে দিল সেই যন্ত্রণা। তমলুক, হলদিয়া ও পূর্ব পাঁশকুড়া দখলে এনে তৃপ্ত পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মোট সাতটি বিধানসভা আসনের সব ক’টি দখল নিয়ে তাঁর ভাই দিব্যেন্দু প্রায় পাঁচ লক্ষ ভোটে জিতলেন তমলুকে।
তৃপ্ত শুভেন্দু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি খুব খুশি। আমাদের যা হিসাব ছিল তার বাইরেও ভোট পেয়েছি।’’
তবে এখানেই শেষ নয়। রাজ্যকে বিরোধী শূন্য করতে মরিয়া শাসক। তৃণমূলের পরের ‘টার্গেট’ হলদিয়া ও পাঁশকুড়া পুরসভা এবং দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভায় উপনির্বাচন। ঘুঁটি সাজানোও শুরু হয়ে গিয়েছে। এ দিন শুভেন্দু সাফ জানান, ‘‘এ বার আমরা দেখে নেব কোথায় কোথায় সিপিএম রয়ে গেল, কোথায় সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিল। কয়েক মাসের মধ্যেই হলদিয়া এবং পাঁশকুড়া পুরসভায় ভোট। সব আসনে জিততে হবে।’’ তাঁর দাবি, পয়লা জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস থেকে এই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দেবেন নেতা-কর্মীরা।
গত বিধানসভা ভোটে শাসকের অস্বস্তি বাড়িয়েছিল তমলুক লোকসভার তিনটি বিধানসভা আসন— তমলুক, হলদিয়া, পূর্ব পাঁশকুড়া। আসন তিনটি হারানোর ক্ষত ছিল দগদগে। তাই তমলুক লোকসভা উপনির্বাচন ছিল সম্মান রক্ষার লড়াই। উপনির্বাচনের প্রচারে এসে প্রায় প্রতিটি সভায় শুভেন্দু বলেছিলেন ‘‘জেলায় তিন আসন হারানো আমাদের কাছে লজ্জার।’’ ওই তিন আসন পুনরুদ্ধারই ছিল তৃণমূলের প্রাথমিক লক্ষ্য। সে জন্য কম কাঠখড়ও পোড়াতে হয়নি। দলের ভিতরে কোন্দল মিটিয়ে, বিরোধী নেতা-কর্মীদের দলে টেনে আনা সবই দায়িত্ব নিয়ে সামলেছেন শুভেন্দু। মাত্র ছ’মাসের ব্যবধানে ওই তিনটি বিধানসভায় বড় ব্যবধানের জয়কে প্রতিশোধ হিসেবেই দেখছে দল।
তাই মঙ্গলবার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীর কেটিপিপি হাইস্কুলে গণনাকেন্দ্রে উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি নেতা-কর্মীরা। দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞকে সমর্থন করে মানুষ আমাকে জয়ী করেছেন। লোকসভায় শুভেন্দু অধিকারীর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করাই আমার লক্ষ্য।’’ অন্য দিকে, জলসম্পদমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রকে পাশে নিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘জেলার ১৬টি আসনের সব ক’টি আমরা পাইনি বিধানসভা ভোটে। আজকের ফলে সেই জায়গাটা পূরণ করতে পেরেছি।’’ শুভেন্দু এ দিন আরও জানান, দিব্যেন্দু লোকসভায় যাওয়ায় দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রটি শূন্য হবে। সুতরাং উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের সঙ্গেই হয়তো দক্ষিণ কাঁথিতে উপ-নির্বাচন হবে। সেখানেও এক লক্ষ ভোটের ব্যবধান রাখতে চান তিনি
প্রস্তুতি যে শুরু হয়ে গিয়েছে, তা বোঝা গেল হলদিয়ায় সিপিএমের পার্টি অফিস দখলের ঘটনায়। দুপুরে ফল প্রকাশের পরই মঙ্গলবার বিকেল ৪টে নাগাদ হলদিয়া পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বনবিষ্ণুপুর, বালুঘাটা, ব্রজবিনোদচকে সিপিএমের তিনটি পার্টি অফিসে তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়। নেতৃত্বে ছিলেন যুব তৃণমূল নেতা অসগর আলি ওরফে পল্টু। পল্টুর দাবি, ‘‘বহুদিন ওই পার্টি অফিস বন্ধ ছিল তাই কয়েকজন গরিব মানুষকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।’’
সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরেই এ ভাবে পার্টি অফিস দখলের রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল।’’ তবে পুলিশে অভিযোগ জানাননি বাম নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy