Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
ভারত ব্লেড

জটমুক্তির বৈঠকে মন্ত্রী, তবু বিক্ষোভ কারখানায়

সমস্যা মেটানোর জন্য শ্রমমন্ত্রী নিজেই মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেই আলোচনা পর্বের মধ্যেই বেলুড়ের ভারত ব্লেড কারখানার মধ্যে সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে গেলেন শ্রমিকেরা। এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ওই কর্মসূচিতে সামিল হয়েছে কারখানার তিনটি রাজনৈতিক সংগঠনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

সমস্যা মেটানোর জন্য শ্রমমন্ত্রী নিজেই মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করছেন। সেই আলোচনা পর্বের মধ্যেই বেলুড়ের ভারত ব্লেড কারখানার মধ্যে সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে গেলেন শ্রমিকেরা। এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে ওই কর্মসূচিতে সামিল হয়েছে কারখানার তিনটি রাজনৈতিক সংগঠনই।

রাজ্যে এমনিতেই শিল্পে খরা চলছে। যে-ক’টি শিল্প-কারখানা আছে, তাদেরও কেউ কেউ ঝাঁপ ফেলার আশঙ্কার কথা বলছে। রবিবার একই দিনে হুগলির তিন চটকল—নর্থব্রুক, ইন্ডিয়া ও হেস্টিংসে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দিনই ঝাঁপ পড়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ির তিস্তা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাতেও। এর মধ্যে শ্রম-অসন্তোষের জেরে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে আরও একটি কারখানায়। শ্রমিক-বিক্ষোভের মুখে পাততাড়ি গোটানোর হুমকিও দিয়েছেন বেলুড়ের ভারত ব্লেডের কর্তৃপক্ষ।

২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১৮৩ জন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের নোটিস দেয় বেলুড়ের ভারত ব্লেড। নিয়ম মেনেই ছাঁটাইয়ের অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় রাজ্যের শ্রম দফতরে। কিন্তু কারখানা-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, সেই চিঠি পাঠানোর দীর্ঘদিন পরেও ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে কোনও জবাব দেননি রাজ্যের শ্রমকর্তারা। নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি চাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আপত্তি না-উঠলে নোটিস বলবৎ হয়। এ ক্ষেত্রেও ছাঁটাইয়ের নোটিস কার্যকর হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই শ্রমিকদের বেতন। এর পরেই আইএনটিটিইউসি, আইএনটিইউসি, সিটু— অর্থাৎ শাসক দল তৃণমূল, বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএম সমর্থিত তিনটি শ্রমিক সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলন শুরু করে।

কারখানা-কর্তৃপক্ষ ওই ১৮৩ জন শ্রমিকের বাড়িতে ছাঁটাইয়ের চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন গত ৬ ফেব্রুয়ারি। অনুমতি চেয়ে তাঁরা সরকারের কাছে যে-চিঠি পাঠিয়েছিলেন, দীর্ঘদিনেও তার জবাব না-আসায় শ্রম দফতরের কর্তাদের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন কারখানার শ্রমিক-নেতারা।

শ্রমিকেরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করার পরে নড়েচড়ে বসে শ্রম দফতর। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গেই আলোচনায় বসেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। মন্ত্রী ছাড়াও দফতরের কর্তারা বিভিন্ন সময়ে বৈঠক করেন। ৩ জুন ফের ছাঁটাইয়ের বিষয়ে মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক হয় শ্রম দফতরের কর্তাদের।

এ দিন তিন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, ওই দিন বৈঠকের পরে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রফাসূত্র মিলেছে। কিন্তু ছ’দিন কেটে গেলেও ছাঁটাইয়ের নির্দেশ তুলে নেওয়ার বিষয়ে কারখানা-কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও পদক্ষেপ না-করায় এ দিন সকাল থেকে তাঁরা শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।

এ দিন কারখানার ভিতরে কর্তাদের ঘরের দরজার সামনে বসে পড়েন পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকেরা। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয় পুলিশবাহিনী। কারখানার সিইও এস কে আনন্দ জানান, কামারহাটিতে তাঁদের আরও একটি কারখানা রয়েছে। সেই পানামা ব্লেড কারখানাতেও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অনুমতি চেয়ে শ্রম দফতরের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। শ্রম দফতর থেকে আপত্তি জানিয়ে জবাবও দেওয়া হয়। তার ভিত্তিতে ওই কারখানায় ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদল করেন কর্তৃপক্ষ। আনন্দ বলেন, ‘‘বেলুড়ের কারখানায় ছাঁটাইয়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে কোনও উত্তর দেয়নি রাজ্য সরকার। তাই নিয়ম অনুযায়ী ছাঁটাইয়ের নোটিস বলবৎ হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, মন্ত্রী যখন সমস্যা মেটানোর জন্য আলোচনা করছেন, তখন এই বিক্ষোভ কিংবা ঘেরাও করা হল কেন? এমন হলে রাজ্য থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।

কেন শ্রম দফতর আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেয়নি, শ্রমমন্ত্রীর কাছে তার সদুত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘চিঠি না-দিলেও বিষয়টি নিয়ে আমি নিজে এবং আমলারা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এখনও আলোচনা চলছে। সমাধানসূত্র নিশ্চয়ই বেরোবে। তবে এর মধ্যে এই বিক্ষোভের বিষয়ে কিছু জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bharat Blend Agitation jute mill INTTUC CITU
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE