Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কাজল কবে শাস্তি পাবে, প্রশ্ন নানুরের

বিধায়ককে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে, দলে তাঁরই প্রতিপক্ষ কাজল শেখের চরম শাস্তির দাবি তুলল নিহত তিন তৃণমূল কর্মীর পরিবার।

নিহত মর্তুজা শেখের বাড়িতে নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা। বুধবার মুলুকে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

নিহত মর্তুজা শেখের বাড়িতে নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা। বুধবার মুলুকে বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

মহেন্দ্র জেনা
বোলপুর শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৫ ০৪:০৩
Share: Save:

বিধায়ককে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে, দলে তাঁরই প্রতিপক্ষ কাজল শেখের চরম শাস্তির দাবি তুলল নিহত তিন তৃণমূল কর্মীর পরিবার।

একই সঙ্গে, পরিবারের ক্ষোভের আঁচ পেলেন নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরাও। খুনের পর দু’দিন পেরোলেও দলের স্থানীয় নেতৃত্ব কেন খোঁজ পর্যন্ত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি, বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বারবার সে প্রশ্নের সামনে পড়তে হল বিধায়ককে। নিজের বিধানসভা কেন্দ্রের দুই পঞ্চায়েত বাহিরি-পাঁচশোয়ার সুলতানপুর এবং সিয়ান-মুলুকের মুলুক এলাকায় বিক্ষোভের মুখেও পড়লেন তিনি।

বিধায়ক আসছেন— খবর চাউর হতেই কয়েক হাজার মানুষ কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই কাজলের শাস্তির দাবিতে মিছিল করেন সুলতানপুরে। এখানেই বাড়ি সোমবার বোলপুর-পালিতপুর সড়কে খুন হওয়া তিন তৃণমূল কর্মীর অন্যতম শেখ বুড়োর। এ দিন বিকেলে ওই বাড়িতে যান বিধায়ক।

সোমবার বোলপুর-পালিতপুর রাস্তায় নিমতলা বাসস্টপের কাছে তিন তৃণমূল কর্মী খুন হন। মঙ্গলবার নিহতদের পরিবার কাজল শেখ ও তাঁর ২১ জন অনুগামীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করে। এ দিন বিকেলে সাড়ে চারটে নাগাদ সুলতানপুরে দলীয় কার্যালয়ে গদাধরবাবু কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে টের পান, খুনের ঘটনায় এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। সুলতানপুরের পশ্চিমপাড়ায় নিহতদের অন্যতম বুড়ো শেখের বাড়ি। ভাইঝি উজনা বিবি, বাবা নওসাদ শেখ, মা আসতিয়া বিবিরা ক্ষোভ জানিয়ে ভিড়ে ঠাসা উঠোনে দাঁড়িয়ে বিধায়ককে বলেন, ‘‘গত বছর নানুরের পাপুড়িতে (কাজলের ঘাঁটি) দলের অফিসে নিয়ে গিয়ে বুড়োকে বেধড়ক মারধর করেছিল কাজল। আর এ বার বুড়ো খুন হয়ে গেল!’’ ওই বাড়িতেই এসেছিলেন নিহত কুরবান শেখের পরিবারও। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতের স্ত্রী রেজিনা বিবি, বাবা শেখ জিলাই।

গ্রামের পথে এলাকার মানুষও তখন কাজলের শাস্তির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। কুরবান শেখের বাবা প্রশ্ন করেন, ‘‘ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরেও এফআইআরে নাম থাকা কেউ গ্রেফতার হল না। তাহলে কি তৃণমূল কংগ্রেস খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে?’’ এ প্রশ্নের মুখে দৃশ্যতই বিব্রত দেখিয়েছে বিধায়ককে। জনতাকে আশ্বস্ত করতে তিনি বলেন, ‘‘দোষীরা কেউ ছাড়া পাবে না।’’ বুধবার রাতেই অবশ্য এফআইআরে নাম থাকা এক কাজল অনুগামীকে ধরা হয়েছে। পরে বিধায়ক যান মুলুকের শান্তিপল্লিতে, নিহত মর্তুজা শেখের বাড়িতে। তাঁর বাবা আমজাদ শেখ, মা অতেরা বিবি বিধায়ককে বলেন, দলের স্থানীয় নেতৃত্ব একবারও খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।

সোমবার ঘটনার সময় ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কলকাতায় একটি বৈঠকে ছিলেন কাজল ও গদাধরবাবু। কেন এত দেরিতে এসেছেন এলাকায়, সে প্রশ্নের জবাবে বিধায়ক বলেন, “কলকাতায় থাকার জন্য সোম-মঙ্গলবার আসতে পারেনি। দলের নির্দেশে নিহত কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এসেছি। দলের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের কাছে আর্থিক অনুদান, পৌঁছে দিয়েছি। দল সব সময়ে, পরিবারগুলির পাশে রয়েছে।” যদিও, খুনের পরই বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল খুনের পরই দাবি করেছিলেন, নিহতেরা কেউ তৃণমূলের নয়, দুষ্কৃতী।

কাজল শেখের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তাঁর ফোন ‘নট রিচেবল’। শেখ সাহানেওয়াজের দাবি, ‘‘কাজল এই ঘটনায় কোনও ভাবেই জড়িত নয়। যারা চায় না কাজল নানুরে থাকুক, তাদের দিয়েই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলানো হচ্ছে।’’

তাঁরা কি দলেরই কেউ? নীরব থেকেছেন কেতুগ্রামের বিধায়ক। গদাধর-কাজল দ্বন্দ্বে দীর্ণ নানুরের জন্য ইঙ্গিতটা খুব স্পষ্ট!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kajal shek Nanur Birbhum Trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE