Advertisement
E-Paper

সঙ্ঘের পছন্দের দিলীপই রাজ্যে বিজেপি সভাপতি

বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে রাহুল সিংহকে শেষ পর্যন্ত সরিয়েই দেওয়া হল। দলের একটা অংশের দাবি মেনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক দিলীপ ঘোষকে রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২১
দিলীপ ঘোষকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার বিজেপির রাজ্য দফতরে। — নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ ঘোষকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার বিজেপির রাজ্য দফতরে। — নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি পদ থেকে রাহুল সিংহকে শেষ পর্যন্ত সরিয়েই দেওয়া হল। দলের একটা অংশের দাবি মেনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রচারক দিলীপ ঘোষকে রাজ্য বিজেপির নতুন সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাহুলবাবুকে দলের জাতীয় সম্পাদক করা হয়েছে।

বিজেপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, টানা দু’দফা অর্থাৎ ছ’বছরের বেশি রাজ্য সভাপতি পদে থাকা যায় না। রাহুলবাবুর সেই মেয়াদ পূর্ণ হয়েছিল। কিন্তু কোনও রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসন্ন হলে সেখানে সভাপতি বদল ভোট পর্যন্ত স্থগিত রাখাই বিজেপির রীতি। সেই যুক্তিতেই রাহুল-শিবিরের আশা ছিল, এখনই সভাপতি পদে বদল হবে না। অন্য দিকে রাহুল-বিরোধী শিবিরের যুক্তি ছিল, রাহুলবাবুর নেতৃত্বে বিজেপি কোনও ভোটেই তেমন ভাল কিছু করতে পারেনি। রাহুলবাবু নিজেও বহু বার ভোটে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। ফলে তাঁর নেতৃত্বে দলের সাফল্যের সম্ভাবনা বিশেষ নেই। এই দুই মত নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই টানাপড়েন চলছিল রাজ্য বিজেপিতে। সঙ্ঘ-পরিবার সহায় হওয়ায় শেষ হাসি হাসলেন দেবশ্রী চৌধুরী, কিষাণ মোর্চার প্রাক্তন সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রীর মতো রাহুল-বিরোধী শিবিরের নেতারা।

লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় ভর করে এ রাজ্যে বাম ও কংগ্রেসকে পিছনে ঠেলে বহু কেন্দ্রে দু’নম্বরে উঠে এসেছিল বিজেপি। সেই হাওয়ায় ভর করে দীর্ঘদিন বাদে একটি বিধানসভা কেন্দ্রেও উপ-নির্বাচনে জয়ী হয় দল। তখন অনেকেই রাজ্যে তৃণমূলের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপিকে দেখতে শুরু করেছিলেন। বাম দলগুলি থেকে তো বটেই, বহু জায়গায় অন্য দল থেকেও বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে যায়। সে সময় সারদা-কেলেঙ্কারি নিয়ে তৃণমূলও যথেষ্ট চাপে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিই গত কয়েক মাসে খানিকটা বদলেছে। এক দিকে যেমন জড়তা কাটিয়ে মাঠে নেমে বামেরা তাদের হারানো জমি কিছুটা হলেও উদ্ধার করতে পেরেছে। তেমনই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তৃণমূল-বিরোধী ঝাঁঝও অনেকটাই স্তিমিত! এক সময় ‘ভাগ মদন ভাগ, ভাগ মুকুল ভাগ’ স্লোগান দিয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে সরিয়ে কিছু দিন আগে রাজ্যের পর্যবেক্ষক করা হয় মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে।

বিজেপিরই একাংশের বক্তব্য, রাজ্যসভায় দল সংখ্যালঘু হওয়ায় বিল পাশ করানোর তাগিদে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সম্পর্কে এখন আর যথেষ্ট আক্রমণাত্মক নন। পাশাপাশি, লোকসভা ভোটে ভাল ফল করলেও সেটাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে বিজেপির সংগঠন সে ভাবে গড়ে তোলা যায়নি। যার ফলে দেশজুড়ে মোদী-হাওয়া যত স্তিমিত হয়েছে, এ রাজ্যে বিজেপির প্রতি সমর্থন তত কমেছে! দু’নম্বর জায়গা তো দূর, সাম্প্রতিক পুরসভা ভোটের হিসেব ধরলে বিজেপি বহু জায়গাতেই নেমে গিয়েছে তাদের লোকসভা-পূর্ব অবস্থানে! অর্থাৎ চার নম্বরে! এই অবস্থায় বিধানসভা ভোটের ক’মাস আগে দিলীপবাবুর মতো অপরিচিত মুখকে সভাপতি করা ঝুঁকি হয়ে গেল বলে মনে করছেন অনেকেই।

সভাপতি পদ হারিয়ে রাহুলবাবু এ দিন কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে বলা হয়েছে, তিনি যা বলার শনিবার বলবেন। তবে রাহুল শিবিরের লোকজন বলছেন, সঙ্ঘ পরিবার বহু দিন ধরেই দলে আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা চালাচ্ছে। সে জন্য তারা বিজেপিতে নিজেদের লোকও বাড়াচ্ছে। দিলীপবাবুকে বিজেপি সভাপতি করা সেই চেষ্টারই অঙ্গ। এর মধ্য দিয়ে সঙ্ঘ বুঝিয়ে দিল, বিধানসভা

ভোটে হিন্দুত্বই হবে বিজেপির তুরুপের তাস।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরের কৃষক পরিবারের সন্তান দিলীপবাবু ২০ বছর বয়সে সঙ্ঘের প্রচারক হন। আসানসোল, দুর্গাপুর, কলকাতা এবং আন্দামান নিকোবরে সঙ্ঘের দায়িত্ব পালন করেছেন। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সংগঠন সম্পাদক ছিলেন। ১০ মাস আগে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজেপিতে আসেন তিনি।

সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাকে বড় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি দলের কর্মী এবং বাংলার মানুষের ইচ্ছাপূরণ করব। সকলকে নিয়ে চলব এবং বিজেপিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করব।’’ দিলীপবাবুকে অভিনন্দন জানাতে এ দিন বিজেপির রাজ্য দফতরে এসেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বেশ বোঝা যাচ্ছে, সকলেই দিলীপদার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সকলেই খুশি।’’ বিজেপির নেতৃত্ব বদল নিয়ে তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অন্য কোথাও নেতা বদল করে বিজেপির লাভ হতে পারে। এ রাজ্যে তাদের কোনও লাভ হবে না।’’

bjp state president dilip ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy