গদিতে ফেরা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলের তকমাও হারিয়ে গিয়েছে সিপিএমের। এ বার গোটা দেশে দলের প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি-তারাকে সঙ্গে নিয়ে চলা যাবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠে গেল।
জাতীয় রাজনৈতিক দল না হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে ঘাসফুল, কিন্তু কেরলে ফুলকপি প্রতীকে তৃণমূলকে লড়তে হয়েছে। এ বার সিপিএম নেতাদের মাথাতেও একই আতঙ্ক চেপে বসেছে।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের পর সিপিএম নেতাদের সামনে নতুন প্রশ্ন, জাতীয় রাজনৈতিক দলের তালিকায় মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টি থাকবে কি না। ভোটের ফলের ময়নাতদন্তের পাশাপাশি জাতীয় দলের শর্তপূরণ নিয়েও সিপিএমের নেতারা অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন।
গত লোকসভা ভোটের পরে সিপিআইয়ের জাতীয় দলের খেতাব নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন নোটিস জারি করে সিপিআই নেতৃত্বের কাছে জানতে চেয়েছিল, কেন তাদের জাতীয় দলের মর্যাদা বজায় থাকবে। এ বার একই রকম নোটিসের জুজু দেখছেন সিপিএম নেতারা। কারণ, সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় দলের তালিকায় থাকার জন্য সব শর্ত পূরণ করতে পারছে না সিপিএম। জাতীয় দল হতে গেলে লোকসভা বা বিধানসভায় যে পরিমাণে ভোট বা নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকা দরকার, তা সিপিএমের নেই।
এই পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির একটাই আশা। তা হল, নির্বাচন কমিশন সাধারণত লোকসভা ভোটের পরেই জাতীয় দলের শর্তপূরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। গত লোকসভা ভোটের পর এক বার পর্যালোচনা হয়েছিল। তখনই দেখা যায়, সিপিআই, এনসিপি, বিএসপি-র মতো দলগুলি আর জাতীয় দলের মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য নয়। তখনই তাদের নোটিস পাঠানো হয়। সেই অনুযায়ী ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরই ফের পর্যালোচনা হবে। মাঝখানে কেউ পিছিয়ে পড়লেও তা দেখা হয় না। কাজেই লোকসভা ভোটে ঘুরে দাঁড়াতে পারলে জাতীয় দলের খেতাবও টিকিয়ে রাখা যাবে।
ইয়েচুরিদের আর একটি আশার বিষয় হল, সরকারি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা। সিপিআইয়ের ক্ষেত্রেই যেমন। লোকসভা ভোটের পর দু’বছর কেটে গেলেও সিপিআই বা এনসিপি-কে জাতীয় দলের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কমিশনের একটি সূত্র বলছে, পর পর দু’টি লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার পরে এই বিষয়ে পর্যালোচনার ভাবনাচিন্তা রয়েছে।
গত লোকসভা ভোটের পরই সিপিএমের জাতীয় দলের তকমা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়েছিল। কারণ জাতীয় দল হতে গেলে তিনটি শর্তের অন্তত একটি পূরণ করতে হবে। এক, লোকসভায় অন্তত চারটি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে। দুই, লোকসভায় অন্তত ১১টি আসন জিততে হবে এবং আগের জেতা আসনের অন্তত চারটি পুনরায় জিততে হবে। তিন, অন্তত চারটি রাজ্যে রাজ্য দলের তকমা পেতে হবে। সেই হিসেব মতো, সিপিএম সব শর্ত পূরণ করতে পারছে না। লোকসভায় তারা মাত্র ৯টি আসন পেয়েছিল। চারটি রাজ্যে ৬ শতাংশ করে ভোটও মেলেনি সিপিএমের। এ বার পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের পরের ছবিটা হল, সিপিএম পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও ত্রিপুরায় রাজ্য দলের তালিকায় থাকার শর্ত পূরণ করছে। তবে তামিলনাড়ুতে তারা খালি হাতে ফেরায় সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে।
জাতীয় রাজনৈতিক দল হওয়ার সব থেকে বড় সুবিধা হল, যে কোনও রাজ্যে, যে কোনও ভোটেই দলের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়ে লড়তে পারে। না হলে প্রত্যেকটি রাজ্যে একই প্রতীক পেতে আলাদা ভাবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নিতে হয়। এ বার কেরলের ভোটে সেই অনুমোদন না মেলায় তৃণমূলকে কোথাও ফুলকপি, কোথাও টিভি, কোথাও টেলিফোন প্রতীক নিয়ে লড়তে হয়েছিল। জাতীয় দল হলে সুবিধাও অনেক। দূরদর্শন-আকাশবাণীতে বিনা মূল্যে প্রচারের সময় মেলে। প্রার্থী পিছু যে ভোটের খরচ বেঁধে দেওয়া রয়েছে, তার বাইরে ৪০ জন নেতার প্রচারের জন্য যাতায়াতের খরচ করা যায়।
সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক নেতার যুক্তি, ‘‘সব রাজ্যে অস্তিত্ব না থাকলেও জাতীয় রাজনীতিতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিই। এমনিতেই কোণঠাসা অবস্থা। তার উপরে জাতীয় দলের তকমা গেলে আর কেউ গুরুত্ব দেবে কি না, সেটাই চিন্তা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy