ধর্মতলায় অবস্থান-মঞ্চে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং অধীর চৌধুরী। বৃহস্পতিবার। ছবি বিশ্বনাথ বণিক।
এত দিন দলের অন্দরেই আলোচনা ছিল। দলের মধ্যে কট্টরপন্থী অংশের সমালোচনার জবাবে পাল্টা যুক্তি সাজানো হচ্ছিল। সেই বার্তা এ বার প্রকাশ্যে এনে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর দাবি, ‘মানুষের জোট’ না থাকলে ফলপ্রকাশের পরে এত তাড়াতাড়ি সন্ত্রাসের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার মতো অবস্থাটুকুও তাঁদের থাকত না।
ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে দু’দিনের অবস্থান-বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। দু’দিনই যেখানে পূর্ণ উদ্যমে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সেই অবস্থান-মঞ্চ থেকেই সূর্যবাবুর যুক্তি— গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যে বিজেপির উত্থান ঘটছে। তলে তলে তাদের মদত দিচ্ছে তৃণমূল। বাম ও কংগ্রেস একজোট হয়ে না-লড়লে বিধানসভায় গেরুয়া শিবিরের শক্তি আরও বাড়ত। বাম ও কংগ্রেসের বিপদ আরও ঘনীভূত হতো।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও একই সুরে ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে দিদিভাই-মোদীভাইয়ের অঘোষিত আঁতাঁতের বিরুদ্ধে তাঁদের এই ‘মানুষের জোট’ রাস্তায় নেমেই লড়াইয়ে থাকবে।
অবস্থানের শেষ দিনে সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘মানুষের জোট না হলে ফলপ্রকাশের পরে এই অবস্থানটুকুও করা যেত কি না সন্দেহ! কিছু ভোট এ দিক-ও দিক হলেই জোটের ফল অন্য রকম হতে পারত। ভোটে পরাজয় মেনে নিয়েই বলছি, আমাদের তোলা প্রশ্নগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি। এখন মানুষের জোট আরও শক্তিশালী হবে।’’ রাজ্যে বিজেপি যে মাথা তোলার চেষ্টা করছে এবং তলায় তলায় তৃণমূলের সমর্থন পাচ্ছে— এই অভিযোগ করে ফের খড়্গপুর ও ভবানীপুরের উদাহরণ টেনেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর দাবি— ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে খড়্গপুরে তৃণমূলের ভোটের সাহায্য পেয়েই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জিতেছেন। আবার বহু কেন্দ্রেই বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ভূমিকা বিরোধী জোটের পথে কাঁটা ফেলে দিয়েছে।
জোট রেখেই যে তাঁরা তৃণমূল ও বিজেপির মোকাবিলায় এগোতে চান, রাজভবনে একসঙ্গে দরবার করতে গিয়ে কয়েক দিন আগেই সেই বার্তা দিয়েছিলেন সূর্য-অধীর। সেই জোট-বার্তাই এ দিন আরও জোরালো হয়েছে অবস্থান-মঞ্চ থেকে। অধীর যেমন বলেছেন, ‘‘জোটের ভবিষ্যৎ জোটই। নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। আমরা জোট হিসাবেই আন্দোলনে সামিল হব। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ মানুষের পাশে দাঁড়াব।’’ কেবল সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আটকে না-থেকে বামপন্থী কায়দায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডাক দিয়েছেন, ‘‘মেহনতী মানুষ, যুব ও ছাত্রদের পাওনা আদায়ের জন্য লড়াইকে ছড়িয়ে দিন।’’
ভোটের পরে সূর্যবাবু অবশ্য এ দিন প্রথম বার অভিযোগ করেছেন, লম্বা নির্বাচন-পর্বের পুরোটা একই রকম অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারলে ফলে কিছু হেরফের হতেও পারতো। তাঁর কথায়, ‘‘২০১১-র মতো ২০১৬-র নির্বাচন সম্পূর্ণ অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হয়েছে, তা বলতে পারছি না। প্রথম দুই পর্বে কিছু তথ্য দিয়েছিলাম। এখন আরও কিছু পাচ্ছি। এগুলো আগে জানা ছিল না!’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যা-ই হোক না কেন, মানুষের রায় মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু জিতেও তৃণমূলের আনন্দ নেই। আত্মবিশ্বাসও নেই! তাই তারা মানুষের উপরে হামলা করছে!’’
হামলার প্রতিবাদেই আজ, শুক্রবার রেড রোডে নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান বয়কট করছে বিরোধী জোট। সেই সূত্রেই এ দিন অধীরের প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দিন না। আমরা খুশি হব। একশো দিনের কাজের মজুরি দিন। সব সময় ঋণের কথা বলেন। এমন ঋণগ্রস্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দ্বিতীয় বার জিতে কি কোটি কোটি টাকা খরচা করে রাজসূয় যজ্ঞ করার প্রয়োজন ছিল?’’ পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় ‘সন্ত্রাসের প্রতিবাদে’ আজ ধর্মতলা চত্বরে কংগ্রেসের অবস্থান স্থগিত থাকছে। প্রদেশ সভাপতির কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীরা রাস্তায় থাকলে রাজসূয় যজ্ঞে কলঙ্ক লাগত! তাই অনুমতিই দেওয়া হল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy