Advertisement
১০ মে ২০২৪

জোটই রাস্তা, জানিয়ে দিল আলিমুদ্দিন

প্রথম দিনের হাওয়াটাই আরও জোরালো হল শেষ দিনে। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কোনও ভুল হয়নি এবং আপাতত জোট বজায় রেখেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হবে— এই মর্মে রায় দিল বঙ্গ সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির এই মত এ বার কাটাছেঁড়া হবে সপ্তাহান্তে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে।

আলিমুদ্দিনে সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

আলিমুদ্দিনে সূর্যকান্ত মিশ্র। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:৪৮
Share: Save:

প্রথম দিনের হাওয়াটাই আরও জোরালো হল শেষ দিনে। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে কোনও ভুল হয়নি এবং আপাতত জোট বজায় রেখেই তৃণমূলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে হবে— এই মর্মে রায় দিল বঙ্গ সিপিএম। দলের রাজ্য কমিটির এই মত এ বার কাটাছেঁড়া হবে সপ্তাহান্তে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে।

আগের দিনের মতোই রবিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির অধিকাংশ বক্তা জোটের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। নিজের প্রারম্ভিক ভাষণের সুর ধরে রেখেই রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, দল হিসাবে সিপিএম ও বামফ্রন্ট নিজস্ব কর্মসূচি অবশ্যই নেবে। সঙ্গে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় রেখে যৌথ কর্মসূচিও চলবে। যেমন, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের সঙ্গে কাল, মঙ্গলবার বীরভূমে আক্রান্ত মানুষের কাছে যাওয়ার কথা সিপিএমের মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের। রাজ্য কমিটির জবাবি ভাষণে সূর্যবাবু গোপন করেননি যে, তাঁরা পলিটব্যুরোর পর্যবেক্ষণের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হচ্ছেন না। নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাজ্য কমিটির অন্দরে তাঁর সাফ কথা, কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন লঙ্ঘন করা হয়ে থাকলে রাজ্য সম্পাদক হিসাবে তাঁর দায়ই সব চেয়ে বেশি। শাস্তি দেওয়া হলে তিনি মেনে নেবেন।

দলের অধিনায়ক নিজের অবস্থান থেকে সরতে না-চাওয়ায় বাকি সৈনিকেরাও জোটের পক্ষে ঝোড়ো ব্যাট চালিয়েছেন এ দিন। শেষ দিনে মোট ৩৭ জন বক্তার মধ্যে অমল হালদার, বিপ্লব মজুমদার, মুজফ্ফর হোসেন, প্রণব চট্টোপাধ্যায়, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্লোল মজুমদার, বনানী বিশ্বাসেরা জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বর্ধমানের অমলবাবু যেমন বলেছেন, ক্ষমতায় ফেরার লিপ্সায় কংগ্রেসের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত, বড়লোকের পার্টির সঙ্গে জোট মানুষ মেনে নেননি। গরিব মানুষের সমর্থন চলে গিয়েছে তৃণমূলের দিকে। অমলবাবু এমনও দাবি করেন, ভোটের সময় ওই জেলায় নিহত দুখীরাম ডাল মৃত্যুর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলে গিয়েছেন! কিন্তু কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, মইনুল হাসান, ঋতব্রত, পলাশ দাস, রূপা বাগচীদের মতো ৩০ জন পাল্টা সুর চড়িয়েছেন পুঁথি দেখে চলার মানসিকতা নিয়ে। রূপা যেমন মন্তব্য করেছেন— মারের মুখেও এত ঔদ্ধত্য নিয়ে চললে পার্টিটাই সাইন বোর্ড হয়ে যাবে! নিজে অল্প ভোটে হারলেও কান্তিবাবু বৈঠকে প্রকাশ কারাটদের সামনেই মন্তব্য করেছেন, পলিটব্যুরোর বিবৃতি বাংলার জন্য ‘সর্বনাশা’ ছিল! কেন্দ্রীয় কমিটি যাতে আর কোনও অশনি সঙ্কেত না পাঠায়, সেই আর্জি জানান তিনি। আরও আক্রমণাত্মক ছিলেন মইনুল ও ঋতব্রত। মইনুল উদাহরণ দেন, কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে তামিলনাড়ুতে সিপিএম ০.৪% ভোট পেয়েছে, আসন শূন্য। অসমে ১৫টি আসনে জামানত বাজেয়াপ্ত। আর লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে বাংলায় ২৬% ভোট, দু’কোটি ১৫ লক্ষ মানুষের সমর্থন জুটেছে। পলিটব্যুরোর নেতারা এ সব কবে ভাববেন? আর ঋতব্রত বলেন, পুঁথি যে ঘরে রাখা আছে, সে ঘর আগুনে পুড়ছে। ঘর না বাঁচাতে পারলে পুঁথিও বাঁচবে না! জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়া, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে বহিষ্কারের প্রসঙ্গ টেনে তরুণ সাংসদ প্রশ্ন তোলেন, বাংলার মত আর কবে গুরুত্ব পাবে সর্বভারতীয় সিপিএমে?

বৈঠকের ভিতরে জবাবি ভাষণের মতো বৈঠকের পরে প্রকাশ্যেও সূর্যবাবু বলেন, ‘‘বিধানসভার মধ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় থাকবে। বাইরেও একত্রে ধর্না-অবস্থান যেমন চলছে, চলবে। কোনও ভুল বোঝাবুঝি নেই।’’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, কিন্তু বাম শরিকদের হুঁশিয়ারিতে তো মনে হচ্ছে বামফ্রন্টটাই ভেঙে যাবে! সূর্যবাবুর জবাব, ‘‘এমন আশঙ্কা করছি না। বামফ্রন্টের দলগুলির সঙ্গে আলোচনা হবে। তারা চায় বামফ্রন্টের নিজস্ব কর্মসূচি। সেটা তো হবেই।’’

এর পরের প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় কমিটি কি বঙ্গ সিপিএমের এই জোট-যুক্তি মেনে নেবে? বৈঠকে উপস্থিত দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের মন্তব্য, ‘‘বাংলায় যে ঝড় উঠল এ বার, এর পরে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্য কিছু হওয়া কঠিন!’’ সূর্যবাবুর মন্তব্য, ‘‘আমরা কমিউনিস্ট পার্টি অফ বেঙ্গল নই! রাজ্য কমিটির মত কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়ে দেব।’’ সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, ‘‘বাংলায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্র রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে একজোট হয়ে লড়তে হবে। এটা পলিটব্যুরোও জানে।’’ আর কারাট? আলিমুদ্দিন ছাড়ার আগে তাঁর সহাস্য মন্তব্য, ‘‘রাজ্য কমিটি মতামত দিয়েছে। এ বার কেন্দ্রীয় কমিটি বসে কী করে, দেখা যাক!’’

দেখতে চায় আলিমুদ্দিনও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE