Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal News

নীল বদলে গেরুয়া আনার ডাক অমিত শাহের, পাল্টা আক্রমণে পার্থ

পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পরিবর্তনের ডাক দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি, শুধু দুর্নীতি আর হিংসা বাড়িয়েছেন। অভিযোগ অমিতের।

কলকাতার কর্মসূচি থেকে এ দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির সুর আরও উচ্চগ্রামে বেঁধে দিলেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

কলকাতার কর্মসূচি থেকে এ দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির সুর আরও উচ্চগ্রামে বেঁধে দিলেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ১৯:৪৮
Share: Save:

বাংলায় বদলের ডাক দিলেন অমিত শাহ। কংগ্রেসকে হঠিয়ে এসেছিল লাল সরকার, লালকে হঠিয়ে এসেছে নীল। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। বাংলায় শুধু হিংসা বেড়েছে, আর বেড়েছে দুর্নীতি। কলকাতার সভায় মঙ্গলবার এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপি সভাপতি। কেন্দ্র গত তিন বছরে বাংলাকে যে আর্থিক অনুদান দিয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে এ দিন অমিত শাহ সেই টাকার হিসেব চেয়েছেন।

শিকাগো বক্তৃতার ১২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে গতকালই ছাত্র সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই ভাষণে বিবেকানন্দের কথা বলতে গিয়ে বার বার বাংলার সমৃদ্ধ চিন্তাধারা এবং সংস্কৃতির প্রশংসা করেছিলেন মোদী। আজ বিজেপি সভাপতির গলাতেও একই সুর শোনা গেল। স্বামী বিবেকানন্দের নাম শুধু নয়, রামকৃষ্ণ পরমহংস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঋষি অরবিন্দদের নামও এ দিন শোনা গিয়েছে অমিত শাহের মুখে। মনীষীদের বাংলায় এখন শুধুই দুর্নীতি আর হিংসার রাজনীতি চলছে বলে তিনি তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করেছেন।

আইসিসিআর-এ আয়োজিত হয়েছিল অমিত শাহের সভা। এ দিন সভা শেষে তিনি মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতাতেও অংশ নেন। অমিত শাহের বক্তব্যের বড় অংশ জুড়েই এ দিন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্যের ফিরিস্তি। আর সেই সূত্র ধরেই ছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ। বিজেপি সভাপতির প্রশ্ন, ‘‘আপনারা তো দারিদ্র, বেকারত্ব দূর করবেন বলে এই সরকারকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। সে সব কি দূর হল? বাংলার হৃত গৌরব কি আবার ফিরে এল?’’ অমিত বলেন, ‘‘কংগ্রেস থেকে লাল, লাল থেকে নীল সরকার এসেছে। আবার বদল প্রয়োজন। আপনারাই পারেন।’’

বিভিন্ন হিংসাত্মক ঘটনায় সম্প্রতি যে সব পরিবার আক্রান্ত হয়েছে, মঙ্গলবার সেই পরিবারগুলির কথা বিশদে শোনেন বিজেপি সভাপতি। ছবি: পিটিআই।

গত তিন বছরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য অক্লান্ত লড়াই চালাচ্ছে বলে অমিত শাহ এ দিন দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের মতো বিরোধী দলও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারেনি।’’ তবে তৃণমূলের সরকার আদ্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত বলে বিজেপি সভাপতি এ দিন অভিযোগ করেন। ‘‘তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে যে টাকা দিয়েছে, আমি তার হিসেব দিচ্ছি। এত যে অনুদান দেওয়া হল, সে সব কোথায় গেল? সিন্ডিকেটে সব টাকা খেয়ে গেল?’’ প্রশ্ন তোলেন অমিত শাহ।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী হতে তৈরি তিনি: বিদেশে মুখ খুললেন রাহুল

ধুলাগড়-সহ নানা এলাকায় সাম্প্রতিক কালে আক্রান্ত হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের অনেককে অমিত শাহের সঙ্গে এ দিন দেখা করিয়েছে রাজ্য বিজেপি। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলার পর অমিত শাহ বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম সংবাদমাধ্যমে কিছু বলব না। কিন্তু, এঁদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কথা না বলে থাকতে পারলাম না। এমন নির্মম হিংসা দুনিয়ার আর কোথাও হয় না। হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ঘর-দোকান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ এই আক্রমণ কেন? প্রশ্ন তাঁর। অমিত শাহের কথায়, ‘‘এটাই কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাংলা? এটাই কি বিবেকানন্দের বাংলা। মানুষের কি নিজের পছন্দ মতো রাজনীতি করার অধিকার থাকবে না? ছ’বছরের বাচ্চার পেটে গুলি লেগেছে। সেই গুলি এখনও বের করতে পারেননি চিকিত্সকেরা। বের করতে ভয় পাচ্ছেন।’’ তৃণমূলের প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘যে ভাবে বিরোধীদের আক্রমণ করছেন, তাতে আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, কমিউনিস্টরা একই ভাবে আক্রমণ করত। সেই আক্রমণের বিরুদ্ধে বিপুল জনাদেশ দিয়ে তৃণমূলকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছিলেন বাংলার মানুষ। এখন তৃণমূল যদি মনে করে তারা বিজেপিকে আক্রমণ করবে, তা হলে কিন্তু বিজেপি-র অগ্রগতিই হবে। এ ভাবে বিজেপির উত্থান ঠেকানো যাবে না।’’

তৃণমূল হিংসার রাজনীতি করে না, বিজেপি-ই বরং প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। অমিত শাহকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

বাংলায় বিজেপির উত্থানের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা রয়েছে বলেও অবশ্য মানতে চায় না তৃণমূল। অমিত শাহের আক্রমণের জবাব দিতে এ দিন সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এ রাজ্যের মানুষের জন্য বিজেপির সংগ্রামের কোনও ইতিহাস রয়েছে? মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির লড়ার কোনও ইতিহাস রয়েছে?’’ বিজেপি সভাপতিকে তৃণমূল মহাসচিবের কটাক্ষ, ‘‘সকালে আদিবাসী বাড়িতে খেয়ে, রাতে পাঁচতারা হোটেলের খাবার খান যাঁরা, তাঁরা মানুষের পাশে থাকতে পারেন না।’’

আরও পড়ুন: পাহাড় নিয়ে আলোচনা ইতিবাচক, ফের বৈঠক পুজোর পর

বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই, এ কথা পার্থ চট্টোপাধ্যায় মানতে রাজি হননি। বাবা রাম রহিমের যাবতীয় কেলেঙ্কারির সঙ্গে বিজেপির সংযোগ রয়েছে, এমন ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। আর বাংলায় হিংসার রাজনীতি চলছে বলে অমিত শাহ যে অভিযোগ করেছেন, তার প্রেক্ষিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘প্রতিহিংসার কথা কারা বলছেন অমিত বাবু? আপনারা তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠে তৃণমূলের নেতা-বিধায়ক-সাংসদ-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপব্যবহার করছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। যখনই নির্বাচন আসছে, তখনই ওই তাসটা পকেট থেকে বার করার চেষ্টা করছেন।’’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ, বিজেপিকে বা কেনেদ্রীয় সংস্থাকে ভয় পায় না তৃণমূল, তৃণমূল শুধু বাংলার মানুষকে ভয় পায়। মানুষ যত দিন সঙ্গে থাকবেন, তত দিন কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করেই তৃণমূলের ক্ষতি করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE