নিজস্ব চিত্র।
আনিস-হত্যার প্রতিবাদে আমতা থানায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। আনিসের পরিবার, তাঁর বাবা এবং পাড়া-পড়শিদের ‘অরাজনৈতিক মিছিল’ বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতা থানা ঘেরাও করে। পরিস্থিতি প্রায় আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়।
ছাত্রনেতা আনিস-হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছিল ঘটনাবহুল। আমতার পরিস্থিতি প্রথম থেকেই পরিস্থিতি ছিল অগ্নিগর্ভ। আনিসের পড়শি এবং পরিজনদের মিছিল শুরু হলে তা আরও ঘোরাল হয়ে ওঠে। জনতা মিছিল করে গিয়ে সরাসরি আমতা থানার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করে। মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল পড়তে থাকে। মিছিল চেষ্টা করে থানার সামনের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলতে। প্রথম দু’টি ব্যারিকেড ভেঙেও ফেলে তারা। তৃতীয় ব্যারিকেডটি ভাঙার আগে আনিসের বাবা মাইক্রোফোনে বলেন ভিড়কে সংযত হতে। তাঁর সঙ্গেই জনতাকে শান্ত হতে বলেন ফুরফুরা শরিফের কাশেম সিদ্দিকি।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবারেই আমতা থানার ওসি, শুক্রবার ঘটনার দিন রাতের টেবিল ইন-চার্জ, আরটি ভ্যানে যাঁরা ছিলেন এবং সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভবানী ভবনে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের যখন ভবানী ভবনে ডিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তখনই আমতা থানা ঘেরাও করে ওসি-কে গ্রেফতার করে কাঠগড়ায় তোলার দাবি করে জনতা।
ফুরফুরার কাশেম সিদ্দিকি স্পষ্টই বলেন, ‘‘রবিবারের মধ্যে আমতা থানার ওসি-কে গ্রেফতার করে কাঠগড়ায় তুলতে হবে। এখন থানা ঘেরাও হয়েছে। এর পর রবিবার এসপি-র অফিস ঘেরাও হবে। দরকার হলে আমরা নবান্ন ঘেরাও করব।’’ এরই পাশাপাশি, যারা ইটবৃষ্টি করছিল, তাদেরও শান্ত হতে বলেন কাশেম। তাঁর সঙ্গে গলা মেলান আনিসের বাবাও।
কাশেম মাইক্রোফোনে বলতে থাকেন, ‘‘যারা ইট ছুড়ছে, তারা সব দালাল! এটা এখানকার (পঞ্চায়েত) প্রধান আর উপপ্রধান করাচ্ছে। ওরা রাতের অন্ধকারে আনিসের আব্বা আর পরিবারের লোকেদের ফোন করে হুমকি দিচ্ছে, সিবিআই তদন্ত দাবি করলে শেষ করে দেওয়া হবে।’’
বিক্ষুব্ধরা খানিকটা শান্ত হলে ফুরফুরার কাশেম এবং আনিসের বাবা থানায় গিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেন। তাঁরা জনতাকে বলেন, ‘‘আপনারা শান্ত হোন। আমরা থানার ভিতরে গিয়ে কথা বলতে চাই। এখানে অনেক ছাত্রনেতা আর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এসেছেন। তাঁদের কেউ চাইলেও আমাদের সঙ্গে থানায় যেতে পারেন।’’ শেষ পর্যন্ত আনিসের বাবা, কাশেম-সহ মোট ছ’জন থানায় যান আলোচনার জন্য। তার আগে তাঁরা বলেন, ঘটনার জন্য দায়ী ‘আসল’ লোকদের গ্রেফতার করা হয়নি। কেন ‘আসল’ লোকদের গ্রেফতার করা হল না, সেটাই তাঁদের প্রশ্ন।
গোটা আমতা থানা ভবনটি বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে। থানার ভিতরেও মজুত রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। পরিস্থিতি ব্যাপক উত্তেজনাকর। আমতা থানার সামনে গ্রামবাসীরা অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছেন। তার আগে তাঁরা থানার সামনের ব্যারিকেড ভেঙে থানায় ঢোকার চেষ্টা করছিলেন।
অন্যদিকে, আনিস-হত্যার তদন্তের ব্যাপারে আরও একবার রাজ্যের উপরেই ভরসা রাখতে অনুরোধ করেছে রাজ্য পুলিশ। বৃহস্পতিবার আনিস-হত্যার তদন্ত নিয়ে পর পর দু’টি টুইট করে রাজ্য পুলিশ। সেই টুইটে আনিসের পরিজনদের কথা উল্লেখ করে তারা অনুরোধ করেছে, তাঁরা যেন রাজ্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) তদন্তের উপরেই ভরসা রাখেন। যার প্রচ্ছন্ন অর্থ, আনিসের পরিবার যেন সিবিআই তদন্তের দাবি থেকে সরে আসেন। যদিও আনিসের পরিবার সেই দাবি থেকে সরে আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy