Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আর এক ‘শহিদ’ কিষেণজির জন্য মিছিল বুধবার

এ বার ‘শহিদ দিবস’-এর পর দিনই আর এক ‘শহিদ’-এর জন্য মিছিল! হ্যাঁ, এই মিছিলনগরী কলকাতাতেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পালিত শহিদ দিবসের তারিখ ২১ জুলাই। আর কাল, বুধবার অন্য এক ‘শহিদের হত্যা মামলার বন্ধ ফাইল খোলার দাবিতে’ কলেজ স্কোয়্যারে দুপুর আড়াইটেয় এক মিছিলের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ১৫:০২
Share: Save:

এ বার ‘শহিদ দিবস’-এর পর দিনই আর এক ‘শহিদ’-এর জন্য মিছিল! হ্যাঁ, এই মিছিলনগরী কলকাতাতেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পালিত শহিদ দিবসের তারিখ ২১ জুলাই। আর কাল, বুধবার অন্য এক ‘শহিদের হত্যা মামলার বন্ধ ফাইল খোলার দাবিতে’ কলেজ স্কোয়্যারে দুপুর আড়াইটেয় এক মিছিলের ডাক দিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)।

সেই ‘শহিদ’-এর নাম?

মাওবাদী শীর্ষনেতা মালোজুলা কোটেশ্বর রাও। এই নামটা খুব বেশি মানুষ জানে না। কিন্তু কিষেণজি বললে এক ডাকে চিনবে।

কিষেণজির নাম তাঁর মৃত্যুর তিন বছর আট মাসের মাথায় ফের বহুল ভাবে চর্চিত হচ্ছে তৃণমূল নেতা ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের জেরে। অভিষেক বলেছেন, কিষেণজিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার খুন করেছে!

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, মাওবাদীদের গণ সংগঠনগুলো এবং মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বিদ্বজ্জনেরা তো বটেই, এমনকী রাজনীতির মূলস্রোতে থাকা বিরোধী দলগুলো এতে যেন পুরনো একটা অস্ত্র হাতে পেয়ে গিয়েছে পুরোদস্তুর নতুন ও ধারালো চেহারায়।

ফের কিষেণজির নাম খবরের শিরোনামে চলে আসায় সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদেরও অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছে পুরনো স্মৃতি। বিশেষ করে যাঁরা তাঁর সাক্ষাৎকার পেয়েছেন, সামনাসামনি বসে কথা বলেছেন কিংবা কিষেণজির সঙ্গে টেলিফোনে যাঁদের কথা বলার সুযোগ হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন-মন্ত্রী-রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের একটা বড় অংশ খামোখা মিডিয়াকে চটিয়ে ফেলেন, এটা বাজারে বহু দিন ধরেই চালু। বিশেষ করে অভিযোগটা ওঠে প্রশাসন ও পুলিশের কর্তাদের ক্ষেত্রে। অনেক সময়েই মনে হয়, এঁরা সাংবাদিকদের সঙ্গে ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারেন না।

আর এই বিদ্যেটাই তাঁরা ভাল করে শিখতে পারতেন কিষেণজির কাছে।

মিডিয়াকে কী ভাবে নৈপুণ্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, কোন কথাটা বললে হেডলাইন হয়, কোন চ্যানেলকে কোন ব্রেকিং নিউজটা খাওয়াতে হবে, একই সংস্থার দু’জন রিপোর্টারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলে ‘স্কুপ’ নিউজগুলো তাঁদের মধ্যে কী ভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দিতে হবে, এ সবই ছিল তাঁর করায়ত্ত।

সাঁকরাইল থানায় হামলা চালিয়ে দু’জন পুলিশকে খুন করে ওসি অতীন দত্তকে অপহরণের ঘটনার কথাই ধরা যাক। ২০০৯-এর অক্টোবর। কলকাতা থেকে ঝাড়গ্রামে অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে হাজির সর্বভারতীয় একটি ইংরেজি সংবাদপত্রের রিপোর্টার। কিন্তু ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে কিষেণজির অ্যালার্জি। তবে ওই পত্রিকার অন্য এক সাংবাদিক তাঁর স্নেহভাজন। রাত ২টো নাগাদ সেই স্নেহের পাত্র সাংবাদিককে ফোন করে কিষেণজি তাঁকে পর দিন সকালে ঝাড়গ্রামে ডেকে নিলেন। তিনি চান, তাঁর সেই ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকই যেন অপহৃত ওসি-র মুক্তির সময়ে থাকেন।

কিন্তু ওই ঘটনার মাসখানেকের মধ্যে কিষেণজি একটু সমস্যায় পড়ে গেলেন। কারণ, একটা খবর করলেন কিষেণজির অপছন্দের সাংবাদিক। বিষয় ছিল, কিষেণজির সঙ্গে আর এক মাওবাদী নেতা তেলুগু দীপকের মোবাইলে কথোপকথন। কিষেণজি যেখানে তৃণমূলকে ‘মিত্র পার্টি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন।

২০১১-র বিধানসভা ভোট হতে তখনও দেড় বছর বাকি। মাওবাদীরা তখনও অবস্থান স্পষ্ট করেনি। আর তখন এই কথা বেরোনো মানে তো বিতর্কের ঝড়। নিজে থেকে তখন সেই অপছন্দের সাংবাদিককে ফোন করে কিষেণজির মিঠে গলায় কত ভাল ভাল কথা। এমনকী, কিষেণজি এটাও বললেন, ওসি অপহরণের ঘটনার সময়ে ওই সাংবাদিক ঝাড়গ্রামে আছেন জানলে তিনি নাকি তাঁর স্নেহের সাংবাদিককে ডাকতেনই না!

আসলে কোন সাংবাদিককে কখন কোন কথাটা বলতে হয়, সেটা কিষেণজি জানতেন বিলক্ষণ। কোনও সাংবাদিককে ভুল বুঝে থাকলে পরে সেটা সংশোধন করে নিতেও তাঁর কুণ্ঠা ছিল না।

জঙ্গলমহলের সেই উত্তাল সময়ে এক সাংবাদিকের বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। কিষেণজি তাঁকে ফোন করে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, টাকাপয়সার প্রয়োজন আছে কি না। এমনকী, কোনও সাংবাদিককে মেরি ক্রিসমাস বা হ্যাপি নিউ ইয়ার-ও বলেছেন কিষেণজি।

২০১১-র ২৪ নভেম্বর অবশ্য সেই অধ্যায়ের ইতি। কিন্তু সে দিন কিষেণজি, সরকারের দাবি মতো, সত্যিই লড়াই করতে করতে মারা গিয়েছিলেন না কি তাঁকে আগেই পাকড়াও করে সে দিন প্রকৃত অর্থে হত্যা করা হয়েছিল, এখন নতুন করে সেই বিতর্ক চেগে উঠেছে।

এপিডিআর যেমন পুরনো সেই মামলার তদন্ত নতুন ভাবে করার দাবি জানাচ্ছে, তেমনই প্রয়োজনে তারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য তুলে ধরে নতুন একটি মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত কী হবে, কী জানা যাবে, সেটা পরের কথা। আপাতত এটা নিয়ে খবর করতে পারছেন সাংবাদিকেরা।

কিষেণজির জীবৎকালে তাঁর জন্য, তাঁকে নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রচুর খবর করতে পেরেছেন। এখনও পারছেন। নিহত হওয়ার প্রায় চার বছর পরেও কিষেণজি নিজেকে নিয়ে খবর করার সুযোগ করে দিচ্ছেন সাংবাদিকদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kishenji APDR kolkata maoist Surbek Biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE