Advertisement
১৯ মে ২০২৪
রোগীকে ক্ষতিপূরণ

অ্যাপেনডিক্স কেটে দেখভালে অবহেলা

তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের অ্যাপেনডিক্স কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বিপত্তি দেখা দেয় সেপটিসেমিয়া হয়ে পুঁজ জমে যাওয়ায়। কিন্তু রোগীকে ছেড়ে দিয়ে বেমালুম হাত ধুয়ে ফেলেছিল হাসপাতাল। চিকিৎসায় গাফিলতির এমনই একটি মামলায় ফের ক্রেতা আদালতের রায় গেল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:০৪
Share: Save:

তরুণ ইঞ্জিনিয়ারের অ্যাপেনডিক্স কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল। বিপত্তি দেখা দেয় সেপটিসেমিয়া হয়ে পুঁজ জমে যাওয়ায়। কিন্তু রোগীকে ছেড়ে দিয়ে বেমালুম হাত ধুয়ে ফেলেছিল হাসপাতাল। চিকিৎসায় গাফিলতির এমনই একটি মামলায় ফের ক্রেতা আদালতের রায় গেল সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে। ক্ষতিপূরণ পেলেন ভুক্তভোগী রোগী।

কল্যাণীর বাসিন্দা, আইটি ইঞ্জিনিয়ার রুদ্র চক্রবর্তী পেটে ব্যথা নিয়ে ২০১২ সালের ১৮ অগস্ট কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই দিনই তাঁর অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়। ২১ অগস্ট ছাড়া পাওয়ার কথা ছিল রোগীর। কিন্তু সে-দিন সকাল থেকে শুরু হয় বমি, সঙ্গে জ্বর। রুদ্রবাবুর বাবা মধুসূদন চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘অপারেশনের পরে ছেলের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। কিন্তু চিকিৎসক নীপাঞ্জন চক্রবর্তী সেটাকে আমল দেননি। কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয় মাত্র। ক্রমাগত বমি হচ্ছিল। সেই সঙ্গে গায়ে জ্বর থাকায় চিকিৎসক ডেঙ্গির পরীক্ষা করতে বলেন। কিন্তু জ্বর ও বমি একটু কমতে না-কমতেই ২৬ অগস্ট রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’’

মধুসূদনবাবু জানান, অ্যাপোলো থেকে বাড়ি ফেরার পরে তাঁর ছেলের আবার জ্বর আসে এবং বমি শুরু হয়। তাঁকে ভর্তি করানো হয় বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তারেরা জানান, জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করতে হবে। ফলে আবার অস্ত্রোপচার হয় রুদ্রবাবুর। কেন ফের অপারেশন?

‘‘অ্যাপেনডিক্স অপারেশনের পরে রোগীর সেপটিসেমিয়া হয়েছিল। তার জেরে পেটের আশেপাশে পুঁজ জমে গিয়েছিল। সেই পুঁজ বার করার জন্যই আবার অপারেশন করতে হয়। দেরি হলে বিপদ হতে পারত,’’ বললেন বারাসতের বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার তপনজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়।

শল্যচিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেন জানাচ্ছেন, অপারেশনের পরে অনেক সময়েই জটিলতা দেখা দেয়। সফল অস্ত্রোপচারের পরেও সে-দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। এ ভাবে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি বলেই মনে করেন শুদ্ধসত্ত্ববাবু।। যদিও অ্যাপোলোয় রুদ্রবাবুর চিকিৎসক নীপাঞ্জনবাবুর দাবি, তাঁর অপারেশনে ভুল ছিল না। স্বাস্থ্য শিবিরের পর্যবেক্ষণ, এখানে ভুলটা ঠিক অস্ত্রোপচারে নয়। তবে গাফিলতি ছিল অস্ত্রোপচার-পরবর্তী দেখভালে। ঠিকঠাক নজর রাখলে পুঁজ জমে যাওয়ার ব্যাপারটা ধরা পড়ত। এবং সে-ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি রোগীকে ছেড়ে না-দিয়ে চিকিৎসায় নতুন জটিলতার নিরাময় করা উচিত ছিল।

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ এনে অ্যাপোলো হাসপাতাল এবং নীপাঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে কলকাতা জেলা ক্রেতা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা করেন মধুসূদনবাবু। আদালত রায়ে জানায়, রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল ছিল না। একটি রিপোর্ট বানিয়ে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। হাসপাতালকে এক লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা দেওয়ার পরেও ওই রোগী যথাযথ চিকিৎসা পাননি বলে মন্তব্য করেছে আদালত।

ভুক্তভোগী রোগীকে দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। নির্দেশে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল এবং চিকিৎসক মিলে এক মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা মিটিয়ে দেবেন। দেরি করলে দিন-প্রতি অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে হবে। শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ার আগেই ওই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল বলে আদালত যে-মন্তব্য করেছে, সেই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি নীপাঞ্জনবাবু। এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হয়নি অ্যাপোলো হাসপাতালও। জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হন চিকিৎসক নীপাঞ্জনবাবু এবং অ্যাপোলো হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। জেলা ক্রেতা আদালতের রায়ই বহাল রাখে রাজ্য আদালত। মধুসূদনবাবু জানান, সেই রায় মেনে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ বাবদ ইতিমধ্যে এক লক্ষ ছ’হাজার টাকা দিয়েছেন। আর চিকিৎসক নীপাঞ্জন চক্রবর্তী দিয়েছেন এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

septicemia Appendix
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE