উদ্ধার হওয়া ইট। নিজস্ব চিত্র।
কোনওটি কারুকাজ করা। কোনও টুকরো তুলতে যথেষ্ট জোর লাগে। কোচবিহারের গোসানিমারি সংলগ্ন গ্রামগুলিতে গত দু’দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে এমনই গোটা দশেক পাথরের টুকরো উদ্ধার করল পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর। যে সে ইট নয় এগুলি। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ মনে করছে, এদের এক একটির বয়স পাঁচশো থেকে হাজার বছর। গোসানিমারির বিখ্যাত রাজপাট ঢিবি ও তার আশপাশের অঞ্চল থেকে সেগুলি তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন নিকটবর্তী গ্রামের লোকেরা। কেউ পাথরটিকে কলতলায় আর পাঁচটা সাধারণ ইটের সঙ্গে বসিয়ে রেখেছিলেন। কেউ মাটির দাওয়া খুঁড়ে পুঁতে রেখেছিলেন। পাথরের টুকরোগুলির বয়স মাপার কাজ চলছে। পাশাপাশি পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দফতর তদন্ত করে দেখতে চাইছে, কী ভাবে ‘লুঠ’ হল গোসানিমারির রাজপাট ঢিবি।
ইতিহাসবিদদের একটি অংশের বক্তব্য, অষ্টম শতাব্দীতে গৌড়ে রাজত্ব শুরু করে পাল বংশ। কিছু দিনের মধ্যে গোসানিমারি তাদের রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হয়। এই এলাকায় ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষগুলি পাল এবং তার পরবর্তী সেন রাজাদের আমলের বলেই মনে করেন ওই ইতিহাসবিদেরা। আরও একটি মত বলছে, পাঁচশো বছর আগে কোচবিহারে (তখন তা কামতাপুর বা কামরূপ রাজ্য বলে পরিচিত ছিল) রাজত্ব করত খেন বংশ। গোসানিমারিতে তাদের রাজবাড়ি ছিল। উদ্ধার হওয়া ইটের টুকরোগুলি সেই সময়কারও হতে পারে।
কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপ মজুমদারের দাবি, “উদ্ধার হওয়া ইটগুলি পাল বা সেন রাজাদের সমসাময়িক বলে মনে হচ্ছে।” পুরাতত্ত্ব বিভাগের রাজবাড়ির আধিকারিক পঙ্কজ দাসের কাছেই আপাতত ওই ইটগুলি রাখা রয়েছে। তিনি বলেন, “এটা কোন সময়ের, পরীক্ষার পরই তা জানা সম্ভব।”
গোসানিমারির রাজপাট ঢিবিতে ১৬-১৭ বছর ধরে খনন বন্ধ। তার আগে ঢিবি খনন করে রাজবাড়ির বেশ কিছুটা অংশ উদ্ধার করেছিল পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। এখন এই এলাকা থেকেই পাঁচশো বা হাজার বছরের পাথরের টুকরোগুলি গ্রামবাসীরা তুলে নিয়ে যান বলে সন্দেহ। ইতিহাসবিদদের একটি অংশের দাবি, ঠিক এই ভাবেই মালদহে গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে দিনের পর দিন ইট তুলে নিয়ে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন, এমন স্থানীয় মানুষজন মনে করেন, এই কাজ বন্ধ করার পথ একটাই। গোসানিমারিতে ফের খনন শুরু করা এবং ইতিহাসের নিদর্শনগুলি বাঁচাতে কড়া পাহারার ব্যবস্থা করা। অরূপবাবুর মতে, “ওই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এমন নিদর্শন রয়েছে। ইতিহাসের দিক যার গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রমশ তা নষ্ট হচ্ছে। তা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’’ তিনি জানান, শীতলাবাস গ্রামে পুকুর কাটতে গিয়ে একটি স্নানাগারের নিদর্শন মিলেছিল। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে তা ফের মাটি চাপা পড়ে গিয়েছে।
হেরিটেজ সোসাইটির দিনহাটা শাখার সম্পাদক শঙ্খনাথ আচার্য বলেন, “রাজপাট এলাকায় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ একটা ‘স্কালপচার শেড’ তৈরি করেছিল। ওটাকে বাড়িয়ে পূর্ণাঙ্গ গ্যালারি তৈরি করা প্রয়োজন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy