Advertisement
২১ মে ২০২৪

পঞ্চায়েত-পুরসভার অধিকার, বিতর্কের আহ্বান অশোকের

হতেই পারে রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে এক দল, আর কিছু পুরসভা ও পঞ্চায়েত রয়েছে অন্য দলের হাতে। তার জন্য কি স্থানীয় প্রশাসনের কাজ আটকে যাওয়া উচিত? নিজে ভুক্তভোগী হয়ে এ বার এই প্রশ্নে দেশ জুড়েই বিতর্ক চাইছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫৩
Share: Save:

হতেই পারে রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে এক দল, আর কিছু পুরসভা ও পঞ্চায়েত রয়েছে অন্য দলের হাতে। তার জন্য কি স্থানীয় প্রশাসনের কাজ আটকে যাওয়া উচিত? নিজে ভুক্তভোগী হয়ে এ বার এই প্রশ্নে দেশ জুড়েই বিতর্ক চাইছেন শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

রাজ্য সরকার যাতে পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে সাংবিধানিক ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে দেয়, সেই লক্ষ্য সামনে রেখে আগামী ১৬ অগস্ট শিলিগুড়িতে এক বিতর্ক-সভার আয়োজন করছেন অশোকবাবু। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ থেকে শুরু করে রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, এমনকী জিটিএ-র প্রতিনিধিকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। শিলিগুড়ির পরে কলকাতা এবং দিল্লিতেও এই ধরনের বিতর্ক-সভা করতে চান অশোকবাবু।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে বুধবার অশোকবাবু বলেন, ‘‘এ রাজ্য তো বটেই, অন্য রাজ্য সরকারগুলিও পুরসভা ও পঞ্চায়েতের গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত সাংবিধানিক এক্তিয়ার মানছে না। এ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের প্রয়োজন।’’ তাঁর মতে, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক গণ্ডিতে বিষয়টি না দেখে সাংবিধানিক অধিকারের ভিত্তিতে দেখা উচিত। সেই কারণেই বিতর্কের বিষয় রাখা হয়েছে— স্থানীয় গণতন্ত্র, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সংবিধানের ৭৩ ও ৭৪তম সংশোধনীর গুরুত্ব। বস্তুত, শিলিগুড়ির মেয়র হওয়ার পরে বিভিন্ন ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতাই যে তাঁকে এ ধরনের বিতর্ক-সভা ডাকতে প্ররোচিত করেছে, তা-ও কবুল করেছেন অশোকবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় মেয়র কাউন্সিলের সভাপতি নাগপুরের মেয়রকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’

রাজ্যের প্রতিটি পুরসভার প্রধান, পুর-নিগমের মেয়র এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতিদেরও আনুষ্ঠানিক ভাবে এই বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোকবাবু। রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে সুব্রতবাবু ছাড়াও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্যের অধিকাংশ পুরসভা ও জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলে। তাই তাঁদের প্রতিনিধিদের সুচিন্তিত মতামত অত্যন্ত জরুরি।’’

জয়রাম বা কংগ্রেস বিধায়ক সুখবিলাস বর্মা, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষেরা এই বিতর্ক-সভায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিলেও তৃণমূলের কেউ যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অশোকবাবু অবশ্য অতীতে মেয়র হিসাবে সুব্রতবাবুর পেশ করা যুক্তিকেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু যখন কলকাতার মেয়র ছিলেন, তখন ‘সিটি গভর্নমেন্ট’-এর কথা বলেছিলেন। তাই তাঁকেই প্রধান অতিথি হিসাবে চাইছি।’’ সুব্রতবাবু জানান, এ ব্যাপারে চিঠি পেলে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী করব, তা চিঠি দিয়ে অশোকবাবুকে জানিয়ে দেব।’’ তবে ‘ব্যস্ততা’র জন্য মন্ত্রী ফিরহাদের বক্তব্য জানা যায়নি।

রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য ছাড়াও আইনজ্ঞ, গবেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞদেরও আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিতর্ক-সভায়। তবে এই সভার আয়োজন করতে গিয়েও অশোকবাবু শাসকের অসহযোগিতার মুখে পড়েছেন! তিনি জানান, শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজনের কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে জানানো হয়, ওই দিন ‘বুকিং’ আছে। বাধ্য হয়েই একটি বেসরকারি হোটেলে অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে অশোকবাবুদের।

তৃণমূল স্তরের সরকার নিয়ে অশোকবাবুর বক্তব্য নিয়ে অবশ্য বিরোধী ও শাসক শিবিরে প্রত্যাশিত ভাবেই দ্বিমত রয়েছে। সিপিএম পরিচালিত জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম যেমন অশোকবাবুর সুরেই বলেছেন, ‘‘তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা যেখানে উন্নয়ন খাতে পাচ্ছে ৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, সেখানে আমরা পাচ্ছি সাকুল্যে ২০ লক্ষ। বাকি বঞ্চনার বিষয়টা আপনারাই বুঝে নিন!’’ কংগ্রেস পরিচালিত রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত বিশদে মন্তব্য না করলেও বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও আমলেই ভাল নেই। আর কিছু বলে বিতর্কে জড়াব না!’’ যদিও কংগ্রেসেরই ঝালদার পুর-প্রধান মধুসূদন কয়ালের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এখনও অসুবিধা নেই। প্রশাসনের কাছ থেকেও সাহায্য পাচ্ছি।’’

আবার অশোকবাবুর সঙ্গে একেবারেই সহমত নন চন্দননগরের মেয়র, তৃণমূলের রাম চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘যাঁরা পুর-পরিষেবা পান, তাঁদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রেখেই আমরা কাজ করছি। বর্তমান রাজ্য সরকার নাগরিকদের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। পুরসভা মানুষের অনেক কাছে গিয়ে কাজ করতে পারছে।’’ তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার মতে, ‘‘স্বশাসন মানে আমি যা খুশি, তা-ই করব, সেটা তো নয়! অনেক ক্ষেত্রে মানিয়ে গুছিয়েই চলতে হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ashok Bhattacharya voter BJP CPM Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE