Advertisement
E-Paper

হেনস্থা, হত্যার হুমকিতে উত্তপ্ত ফিল্ম ইনস্টিটিউট

নামকরণ হয়েছে বিশ্ববন্দিত পরিচালকের স্মরণে। কিন্তু সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর বদনাম ঘোচার লক্ষণ নেই।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৬ ০৩:২৪

নামকরণ হয়েছে বিশ্ববন্দিত পরিচালকের স্মরণে। কিন্তু সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (এসআরএফটিআই)-এর বদনাম ঘোচার লক্ষণ নেই।

এ বার ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্রীকে এবং তাঁদের পাশে দাঁড়ানো কিছু ছাত্রকে ক্যাম্পাসেই হেনস্থা করা, মানসিক চাপ সৃষ্টি, এক ছাত্রকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল অন্য এক দল পড়ুয়ার বিরুদ্ধে। হত্যার হুমকি এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্যাম্পাসে ও হস্টেলে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানাচ্ছেন অভিযোগকারীরা।

যে-দুই ছাত্রীকে হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ, তাঁরা দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি এবং অন্য এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। অনুসন্ধান করে এসআরএফটিআই-এর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সম্প্রতি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট দিয়েছে। তাতে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে বলে কমিটি সূত্রের খবর। তার ঠিক পরেই ক্যাম্পাসে হেনস্থা ও মানসিক চাপ সৃষ্টি এবং খুনের হুমকির অভিযোগ উঠেছে।

যে-ছাত্রকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে, তিনি সোমবার পঞ্চসায়র থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। আর নিরাপত্তাহীনতার কথা রবিবারেই হস্টেল এবং এসআরএফটিআই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন নিগৃহীত অন্য পড়ুয়ারা।

এসআরএফটিআইয়ের অধিকর্তা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি জেনেছি। সব কিছু গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ প্রয়োজনে তাঁরাও পুলিশের দ্বারস্থ হতে পারেন বলে জানিয়েছেন অধিকর্তা।

ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েক বছর ধরেই শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠছিল। গত নভেম্বরে ইনস্টিটিউটের তৎকালীন অধিকর্তা সঞ্জয় পট্টনায়ক বিষয়টি জানার পরে ছাত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসার নির্দেশ দেন অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটিকে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী কমিটির চেয়ারপার্সন পুতুল মেহমুদ ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তার পরে কমিটির কাছে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন চার ছাত্রী। এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন অন্য এক ছাত্রী।

প্রাথমিক অভিযোগ পেয়ে কর্তৃপক্ষ তিন শিক্ষককেই সাসপেন্ড করেন এবং ধর্ষণের অভিযোগটি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে। তবে শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিষয়টি কমিটি দেখবে বলে কর্তৃপক্ষ জানান। ধৃত শিক্ষক পরে জামিনে মুক্তি পান।

অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির অনুসন্ধানের সময়ে জামিনে মুক্ত শিক্ষককে ডেকে পাঠানো হলেও তিনি যাননি। যে-হেতু ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি, তাই তাঁর ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কার্যত অসমাপ্ত রেখে বাকি দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়ে সম্প্রতি রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি। রিপোর্টে ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

তার পরেই ক্যাম্পাস ও হস্টেলে ফের শুরু হয় গন্ডগোল। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে-ছাত্রকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি জানাচ্ছেন, রবিবার তিনি ওই হুমকি পেয়েছেন। তার কয়েক দিন আগে রাত সাড়ে ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত তাঁকে হস্টেলের ছাদে নিয়ে গিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল ‘হুমকি’ দিতে থাকে। তাঁকে ঘিরে ধরে জানতে চাওয়া হয়, কেন তিনি দুই অভিযোগকারিণীকে সমর্থন করছেন। কিন্তু ওই ছাত্র নিজের অবস্থান থেকে সরতে রাজি হননি। তার পরেই তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয় বলে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান ওই পড়ুয়া।

প্রশ্ন উঠছে, ছাত্রীরা যেখানে অভিযোগ করছেন, কমিটি যেখানে অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে, তখন এক শ্রেণির পড়ুয়ার সমস্যা কোথায়? তাঁরা দল পাকিয়ে হেনস্থা-হুমকির রাস্তা নিয়েছেন কেন?

প্রতিষ্ঠানের একটি সূত্রের খবর, শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের ক্যাম্পাসের বাইরে, বিশেষ করে টলিউডের ফিল্ম ও টেলিভিশন জগতের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাঁরা কয়েক জন পড়ুয়াকে বাইরে কাজ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। সেই জন্যই অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরেও সতীর্থদের একাংশের বিরুদ্ধে খেপে উঠেছেন পড়ুয়াদের একাংশ।

SRFTI Threat Murder Assault
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy