Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Black Money

খুচরোর আকালে অস্ট্রেলীয় পর্যটকদের ত্রাতা হলেন পাহাড়ের মানুষ

শীতের সকালে ঘুম ভেঙে পাহাড়ের বাসিন্দারা খুচরো জোগাড়ের জন্য লাইন দিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে। লম্বা লাইন একেবেঁকে গিয়েছে। সেই লাইনে হঠাৎই হাজির সাদা চামড়ার তিন বাসিন্দা। তাঁদেরও খুচরো নেই। যে ক’টা একশো টাকার নোট জোগাড় করতে পেরেছিলেন তা এই দু’দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ১৬:২০
Share: Save:

শীতের সকালে ঘুম ভেঙে পাহাড়ের বাসিন্দারা খুচরো জোগাড়ের জন্য লাইন দিয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখার সামনে। লম্বা লাইন একেবেঁকে গিয়েছে। সেই লাইনে হঠাৎই হাজির সাদা চামড়ার তিন বাসিন্দা। তাঁদেরও খুচরো নেই। যে ক’টা একশো টাকার নোট জোগাড় করতে পেরেছিলেন তা এই দু’দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে। সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে দার্জিলিঙে পৌঁছে এমন অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে হবে তা আন্দাজ করতে পারেনি রয়স্মিথ। অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা গবেষক রয় এর আগে ছ’বার ভারতে এসেছিলেন। মেলবোর্নের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলেনও বার দু’য়েক ভারতে ঘুরে গিয়েছিলেন। কিন্তু দলের বাকি বারো জনের এটাই প্রথম ভারত সফর। প্রথম বারেই এমন বিপত্তিতে গালমন্দ শুরু করেছিলেন তাঁরা। এক কাপ চা খাবেন তারও উপায় নেই, সবই তো পাঁচশো-হাজারের নোট। সে নোট কেউ নিতে চাইছে না। ঘুমের ব্যাঙ্কের শাখা ম্যানেজারও হাত উল্টে জানিয়ে দিয়েছেন খুচরো নেই। এই পরিস্থিতিতে ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। বিদেশি পর্যটকদের দেখে লাইনে দাঁড়ানো বাসিন্দারা যে যাঁর মতো করে খুচরো জোগাড় করে হাজার টাকার খুচরো তুলে দিয়েছেন তাঁদের হাতে। সেই টাকা হাতে হাসিমুখে রয়স্মিথের দল দার্জিলিঙে ঘুরতে গিয়েছে। টেলিফোনে রয়স্মিথ বলেছেন, ‘‘ভারতের এই এলাকার বাসিন্দারা খুবই ভাল, সহজ সরল। আমার এখানে বার বার আসার কারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে এখানকার সহজ সরল বাসিন্দারাও।।’’

গত ৩ নভেম্বর উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছে অস্ট্রেলিয়ার চোদ্দ জনের দলটি। চুইখিম, ইয়েলবঙ, কোলাখাম, কালিম্পঙের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে গত বৃহস্পতিবার ঘুমে পৌঁছেছে দলটি। খুচরোর সমস্যা তখন থেকেই। দলটির সঙ্গে ছিলেন পর্যটন সংস্থার কর্ণধার রাজ বাসুও। বিপাকে পড়ে গিয়েছিলেন রাজও। রাজের কথায়, ‘‘ওঁদের কাছে এবং আমার কাছে যত একশো টাকার নোট ছিল সব শেষ। গত কয়েক দিন অনেকে ৫০০ টাকার নোট নিলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে তা নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ দিন যে এক কাপ চা খাব তারও উপায় নেই।’’ এ দিন দলটির দার্জিলিং যাওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগে খুচরো না পেলে সে যাত্রাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। সে কারণেই রয়স্মিথ, মেলব্রি এবং ব্রেনটন, তিন পর্যটককে নিয়ে রাজ ঘুমের সামনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে খুচরো জোগাড়ের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ব্যাঙ্ক খোলার আগেই কর্তৃপক্ষ খুচরো নেই বলে জানালেও, লাইনে দাঁড়ানো বাসিন্দারা খুচরো এগিয়ে দিয়েছিলেন।

তার আগের দিন গাড়ি চালকরাও বেশ কিছু টাকা জোগাড় করে দিয়েছিলেন। রাজের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার পর্যটকেরা সচরাচর এ দেশে আসতে চান না। এ বারের দলের ১২ জন প্রথমবার এসেই নাকাল হওয়ায় প্রমাদ গুনছিলেন রাজ। রাজের কথায়, ‘‘দেশের মান বাঁচিয়েছেন পাহাড়ের সাধারণ বাসিন্দারা। ‘অতিথি দেব ভব’, এই কথার সার্থক উদাহরণ হয়ে থাকল ঘুম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tourist 500Rs Changes shortage black money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE