Advertisement
E-Paper

ধূমপানে না বাগদা ব্লক অফিসে

বাড়িতে বললে তো কথা কানেই তোলেন না, এ বার খানিকক্ষণের জন্য তো অন্তত জব্দ হয়েছেন! বাগদার এক জনপ্রতিনিধির স্ত্রী বললেন এ কথা। কেন?

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:০২
নিয়মের দিকে নজর না রাখলেই জরিমানা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

নিয়মের দিকে নজর না রাখলেই জরিমানা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বাড়িতে বললে তো কথা কানেই তোলেন না, এ বার খানিকক্ষণের জন্য তো অন্তত জব্দ হয়েছেন!

বাগদার এক জনপ্রতিনিধির স্ত্রী বললেন এ কথা। কেন?

তাঁর বাড়ির কর্তাটি যখন বাগদা বিডিও অফিসে যান, সিগারেট খান না, বলা ভাল, খেতে সাহস পান না। খেলেই একশো টাকা জরিমানা। একশোটা টাকা দেওয়া জনপ্রতিনিধির পক্ষে তেমন কিছু নয় ঠিকই, কিন্তু জরিমানা দেওয়াটা তাঁর সামাজিক সম্মানের নিরিখে নিশ্চয়ই খুব ভাল দেখায় না।

বছর তিনেক ধরে বাগদা ব্লক অফিসে সিগারেট খাওয়া নিয়ে এ ধরনের কড়াকড়ি চলছে। ওই সময়ে বিডিও হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন মালবিকা খাটুয়া। কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর নজরে পড়ে, অফিসের চেয়ারের বসেই কোনও কোনও সরকারি কর্মী প্রকাশ্যে সিগারেটে সুখটান দিচ্ছেন। সীমান্তবর্তী ওই ব্লকের বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলারা নানা কাজে বিডিও অফিসে আসেন। তাঁদের সামনে চেয়ারে বসে কর্মীরা সিগারেট খাওয়ায় অনেকেরই অসুবিধা হচ্ছিল। যা নজর এড়ায়নি বিডিওর। এর আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় বিডিও থাকাকালীন মালবিকাদেবী দেখেছিলেন, কেউ অফিস চত্বরে ধূমপান করেন না। পূর্বতন বিডিও ওই নিয়ম চালু করে দিয়ে গিয়েছিলেন।

সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবং মানুষের অসুবিধার কথা ভেবে মালবিকাদেবী ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে নির্দেশ দেন, অফিসে বসে তো নয়ই, অফিস চত্বরেও কেউ ধূমপান করতে পারবেন না।

শুধু নির্দেশ দিয়েই তিনি বসে থাকেননি, তা কার্যকর করার জন্য কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করেন। চালু করা হয় জরিমানাও। গোটা অফিস চত্বর জুড়ে পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়। তাতে লেখা, ‘‘ধূমপান বর্জিত এলাকা, এই অফিস অঞ্চলে ধূমপান একটি দণ্ডনীয় অপরাধ।’’

ওই নির্দেশ চালুর পরে একটি নজরদারি টিমও তৈরি করা হয়। তাঁরা অফিস চত্বর ঘুরে ঘুরে দেখেন, কেউ আড়ালে বা গোপনে ধূমপান করছেন কিনা। নজরে পড়লেই পাকড়াও করা হয়। বিডিও অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সরকারি কর্মী-সহ বাইরের লোকেদেরও ধরা হয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

কী করা হয় সেই টাকা?

বিডিও জানালেন, অনেক সময়ে বহু গরিব মানুষ আমাদের কাছে আসেন। রিলিফ ফান্ডে সমস্যা থাকলে জরিমানার টাকা থেকে সাহায্য করা হয়। তবে ইদানীং সে সব আর প্রয়োজন হয় না। ২০১৪ সালের মধ্যেই যত জরিমানা আদায় হয়েছিল। এখন নিয়মটা সকলের মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে গিয়েছে। ২০১৫ সালের পরে আর কেউ সে ভাবে এখানে প্রকাশ্যে ধূমপান করেন না। না সরকারি কর্মী, না বাইরে থেকে আসা মানুষজন। বিডিও অফিস চত্বরে কেউ না জেনে সিগারেট-বিড়ি ধরানোর প্রস্তুত নিলেই কেউ না কেউ তাঁকে সাবধান করে দেন।

কিন্তু বাইরে থেকে আসা কেউ যদি হঠাৎ করে না জেনেই সিগারেট ধরিয়ে ফেলেন, তাঁকেও জরিমানা দিতে হয়। মাসখানেক আগেও একই ভাবে এক বহিরাগত ব্যক্তি না জেনে সিগারেট ধরিয়েছিলেন। ধরা পড়ে জরিমানা দিতে হয়েছে তাঁকেও। এমনকী, সরকারি আধিকারিক বা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারাও এখানে এলে ধূমপান করেন না। করলেও তা অফিস চত্বরের বাইরে গিয়ে।

একই চত্বরে আছে বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির অফিস। সেখানে জনপ্রতিনিধিরা যাতায়াত করেন। তাঁরাও এই চত্বরে ধূমপান না করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন।

বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কার্তিক বাইন বলেন, ‘‘বিডিও-র উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর। একটু উদ্যোগ ও সদিচ্ছা থাকলে যে কোনও কাজ করা যায়, তা বিডিও-র ওই উদ্যোগ দেখলেই বোঝা যায়।’’

বিডিও-র ওই নিয়ম রীতিমতো সাড়া ফেলেছে। অতীতে অফিস চত্বরে পোড়া বিড়ি-সিগারেট, প্যাকেট পড়ে থাকত যত্রতত্র। এখন দেখা যায় না।

তবে প্রথম দিকে বিডিও-র সিদ্ধান্ত মন থেকে মানতে পারেননি কর্মচারী বা জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই। জনান্তিকে মন্তব্য শোনা যেত, ‘‘বিডিও নিজে সিগারেট খান না, উনি নেশার মর্ম কী বুঝবেন!’’ এখন অবশ্য সকলেই সহজে মেনেছেন নিয়ম। আগে মন্তব্য শোনা যেত, বিডিও কি সর্বত্র ধূমপান বন্ধ করতে পারবেন? তা না হলে খামোখা এখানে এমন একুশে আইন চালু করে কী লাভ? এখন অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। এক কর্মী জানালেন, আগে কাউকে কাউকে দেখা যেত, অফিসে বসে সিগারেটের পর সিগারেট ফুঁকে চলেছেন অনেকে। নিষেধ করলেও শুনতেন না। এখন নিয়মের গেরোয় পড়ে সকলেই বাধ্য ছাত্রের মতো মেনে নিয়েছেন।

কী বলছেন মালবিকাদেবী নিজে?

তাঁর কথায়, ‘‘নিয়মটা তো আগেই ছিল। আমি শুধু কার্যকর করেছি মাত্র।’’

block office no smoking
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy