Advertisement
১১ মে ২০২৪
bandage gauze

Bandage: গজ-ব্যান্ডেজ শিল্পে অচলাবস্থা, বিপাকে কয়েক হাজার শ্রমিক

দেভোগ, মাঝেরপাড়া, বাগানআইট, বসিরহাট পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা কাজ হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁতশিল্পীরা।

অসহায়: কাজ নেই, বন্ধ তাঁতকলের সামনে এক শ্রমিক।

অসহায়: কাজ নেই, বন্ধ তাঁতকলের সামনে এক শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৮:২৭
Share: Save:

একদিকে সুতোর দাম বেড়েছে, অন্যদিকে মজুরি জুটছে যৎসামান্য। দু’দিক থেকে বাড়ছিল লোকসান। ফলে, সুতোর দাম কমানো এবং মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সম্প্রতি বসিরহাটের ছোট-বড় গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরির কারখানাগুলিতে অনির্দিষ্ট কালের জন্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল। এতে বিপদে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার তাঁতশিল্পী। অন্য দিকে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় রাজ্য জুড়ে হাসপাতাল, নার্সিংহোমে গজ ও ব্যান্ডেজের সরবরাহে টান পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বসিরহাট দক্ষিণ, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ এবং বসিরহাট উত্তর বিধানসভা এলাকার বড় অংশের মানুষ ঘরে ঘরে মোটর চালিত তাঁতে গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত দু’মাসে এক ‘গাঁট’ সুতোর (১ গাঁট= ৩৫৮ কেজি ৬০০ গ্রাম) দাম ৪১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৬৪ হাজার টাকা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁত শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সকলেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বসিরহাটের পাইকপাড়া গ্রামে তন্তুজের গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরির একটি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাসকয়েক আগেই। এবার সুতোর অভাবে শ্রমিকদের তাঁত ঘরে তালা পড়েছে।

দেভোগ, মাঝেরপাড়া, বাগানআইট, বসিরহাট পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা কাজ হারিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁতশিল্পীরা। তাঁদের কথায় ক্ষোভের সুর স্পষ্ট। তাঁতশিল্পী রাবিয়া বিবি, সাইফুল মোল্লা, হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থা শাঁখের করাতের মতো। এক দিকে সুতোর অভাবে তাঁত বন্ধে সংসার প্রায় অচল। তার উপর গত ৮-১০ বছর ধরে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। সারাদিন কাজ করে ১৮০-২০০ টাকার বেশি আয় হয় না। কাজ হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাই না।’’

তারাচাঁদ মোল্লা, রওশান আলি মোল্লা বলেন, ‘‘এ আমাদের বাপ-ঠাকুরদার ব্যবসা। তার উপর বয়স হয়েছে, তাই অন্য কাজ জোটানো দায়। তাঁত চালিয়ে যেটুকু রোজগার হত, তা দিয়ে কোনওরকমে সংসার চলত। সুতোর দাম বাড়ায় সমবায় সমিতি এবং ব্যবসায়ীরা সুতো দিতে পারছে না। ফলে, তাঁত ঘরে তালা পড়েছে আমাদের।’’

শ্রমিকদের বক্তব্য, শুধু যে সুতোর দাম বেড়েছে তা নয়, তাঁত চালাতে বিদ্যুৎ, ডিজেল, কেরোসিন, মোবিল, তারের মাকু-সহ অন্যান্য সরঞ্জামের দামও অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না। তাঁত শ্রমিক মনিরুল মোল্লা, আব্দুল সাত্তার জানান, পুঁজির অভাবে বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ী বা সমিতির থেকে টাকা দাদন নিয়ে গজ ও ব্যান্ডেজ তৈরি করতে হয়। কাজ বন্ধের ফলে বিপদ বাড়ল। তাঁরা বলেন ‘‘এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’’

তন্তুজের জেলা প্রতিনিধি তথা সমবায় সমিতির সঙ্গে যুক্ত প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘তামিলনাড়ু, হিমাচলপ্রদেশ থেকে আসা সুতোর মূল্য বৃদ্ধির ফলে বসিরহাটে আমাদের একটি কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একই কারণে সমস্যায় পড়েছেন ছোট ছোট তাঁতশিল্পীরাও।’’ ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেল্লাল মোল্লা, কমল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সুতোর দাম তিরিশ শতাংশের উপর বেড়েছে। ফলে শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা উৎপাদন বন্ধের ডাক দিতে বাধ্য হয়েছেন।’’

বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি কৌশিক দত্ত বলেন, ‘‘ গজ, ব্যান্ডেজ শিল্প বন্ধ হলে হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে সমস্যা দেখা দেবে। অন্যদিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা দরকার। পাশাপাশি সুতোর সরবরাহ ঠিক রাখা জরুরি। আমরা চাই বসিরহাটের তাঁত শিল্প নিয়ে অচলাবস্থা দ্রুত মিটুক।’’

এই বিষয়ে হ্যান্ডলুম ডেভলপমেন্ট অফিসার বাসুদেব পাল বলেন, ‘‘ শ্রমিকরা তাঁদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য সমিতির পক্ষে আমার কাছে লিখিত আবেদন করলে বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে সুতোর দাম নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনও হাত নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bandage gauze Basirhat Production
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE