বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নের নামে কমিটি গড়ে টাকা তুলে তা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠল আসানসোলে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি পথে ব্যবস্থা না নিয়ে শহরের মেয়র এই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে দাবি করেছে বিরোধী দলগুলি। গোটা ঘটনাটি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। ডেপুটি মেয়র অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, আলোচনা না করেই গড়া এই কমিটির কাজকর্ম নিয়ে কোনও মেয়র পারিষদ বৈঠকেও আলোচনা হয়নি। মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৯ সালে আসানসোল পুরসভায় ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। ক্ষমতায় এসেই মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটিকে বড় বাস থেকে দৈনিক পাঁচ টাকা করে চাঁদা আদায়ের দায়িত্ব দেন। সেই দায়িত্ব পান জনৈক অসীম মিত্র। এই টাকা আদায় নিয়েই ঘোঁট পেকেছে।
আসানসোল বাসস্ট্যান্ডে ২৭৫টি বড় বাস, ৩৫টি সরকারি ও ১৬টি ভলভো বাস যাতায়াত করে। পুরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সব বাসের কাছে আদায় করা চাঁদা থেকে মাসে ৪৮ হাজার টাকা জমা পড়ার কথা। সেই হিসেবে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত ২৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জমা পড়ার কথা। কিন্তু পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাস্তবে তা হয়নি। অসীমবাবু এখনও পর্যন্ত তহবিলে জমা দিয়েছেন আট লক্ষ ৩৯ হাজার ৩৫০ টাকা। পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়র গত ৩ জুন উন্নয়ন কমিটির বৈঠক ডেকে এক মাসের মধ্যে অসীমবাবুকে বাকি ১৮ লক্ষ ৬৫০ টাকা মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ডেপুটি মেয়র অমরনাথবাবুর বক্তব্য, “আমি ওই কমিটিতে নেই। আলোচনা না করেই কমিটি তৈরি হয়েছিল। এ নিয়ে যা বলার, মেয়রই ভাল বলতে পারবেন।”
আর মেয়রের এই নির্দেশ নিয়েই সরব হয়েছে নানা রাজনৈতিক পক্ষ। তাঁদের দাবি, পাঁচ বছর ধরে এত টাকা তহবিলে জমা না দেওয়া সত্ত্বেও কোনও আইনি পদক্ষেপ না করে মেয়র আসলে অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। বিজেপি-র জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের অভিযোগ, “দরপত্র না ডেকে এক বহিরাগতকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনায় পরিষ্কার, আসানসোল পুরসভা দুনীর্তির আখড়া হয়ে উঠেছে। ডেপুটি মেয়রের মন্তব্যেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি সরাসরি বলতে না পারলেও ঘুরিয়ে অনিয়মের কথাই বলছেন।” নির্মলবাবুর দাবি, বছরখানেক আগেও একই রকম দুনীর্তি প্রকাশ্যে এসেছিল। চুক্তিতে নিযুক্ত এক পরিবেশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভুয়ো সাফাইকর্মীদের নামে কোটি কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছিল। এই বিজেপি নেতার দাবি, “এর পরেও যে পুরসভা সজাগ হয়নি, তা এই ঘটনায় স্পষ্ট হল। দুনীর্তিতে মদত দেওয়ার দায় তাপসাবাবু এড়াতে পারবেন না।”
আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত আসানসোল মহকুমা ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়াকার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়া আবার জানান, সংগঠনের তরফে ২০১০ সালে প্রথম মেয়রের কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটিতে বড় বাসগুলির থেকে কত টাকা আদায় হয়েছে জানতে চান তাঁরা। রাজুবাবুর দাবি, তা তাঁদের জানানো হয়নি। গত ১৯ মার্চ ফের তাঁরা মেয়রকে চিঠি দিয়ে এ নিয়ে তদন্তের দাবি জানান। তাঁর আরও দাবি, “দরপত্র না ডেকে সরকারি কাজ কাউকে দেওয়া যায় না। অসীমবাবু পুরসভার রসিদ না নিয়ে বাইরে থেকে রসিদবই ছাপিয়ে টাকা আদায় করতেন। ওই তহবিলের টাকা ঠিক ভাবে জমা হচ্ছে কি না, তা তদারকির কোনও তাগিদ পুরসভার ছিল না। তছরুপ ধরা পড়ার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা না করে তাঁকে এক মাস সময় দেওয়া হল। তাতে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। এর জেরে আখেরে দলের ভাবমূর্তি মলিন হচ্ছে। মেয়রের কড়া হাতে বিষয়টির মোকাবিলা করা উচিত।”
বাসস্ট্যান্ড উন্নয়নের জন্য বড় বাসের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও আদপে কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ যাত্রী ও নানা বাসকর্মীর। যাত্রীদের অভিযোগ, শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ডের তিনটি গেটই ভাঙা। সরকারি বাসের জন্য কোনও যাত্রী-ছাউনি নেই। রোদ, বৃষ্টিতে যাত্রীরা চূড়ান্ত সমস্যার মধ্যে পড়েন। একটি বড় সার্চলাইট ছাড়া আলোর আর কোনও ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যা নামার পরেই বাসস্ট্যান্ডের অর্ধেক অংশ অন্ধকার হয়ে যায়। পানীয় জলের কল ভাঙা। সারা দিন জল পড়ে যায়। সে কারণে মাঝে-মাঝেই ট্যাঙ্কের জল শেষ হযে যায়। নর্দমা নিয়মিত সাফাই হয় না। বৃষ্টি হলে আবর্জনায় ভরে যায় বাসস্ট্যান্ড চত্বর।
অসীমবাবুর সঙ্গে মঙ্গলবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে মেয়র তাপসবাবুর মন্তব্য, “আমি এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy