নৌকা তখন মাঝগঙ্গায়। হঠাৎ আওয়াজ আসে ‘ঝাঁপ দিল, ঝাঁপ দিল’। এক কিশোরীকে জলে হাবুডুবু খেতে দেখে চোখের নিমেষে বার্জ থেকে ঝাঁপ দেন মাঝি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চুলের মুঠি ধরে টেনে তুলে উদ্ধার করেন ওই কিশোরীকে।
মঙ্গলবার দুপুরে বল্লভপাড়ায় কাটোয়া-নদিয়া নৌকা পারাপারের সময়ে ঘটনাটি ঘটে। বছর দুয়েক আগেও মাঝগঙ্গায় ঝাঁপিয়ে এভাবেই এক মহিলার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন মাঝি জয়দেব ঘোষ। জেলা পুলিশের তরফে সাহসিকতার পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। এ দিনও বিপদ বুঝেই ঝাঁপ দিয়ে ওই মঙ্গলকোটের ওই কিশোরীর প্রাণ বাঁচান তিনি। পরে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ওই কিশোরীকে।
বিকেলে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই কিশোরী জানায়, এ বছর মাধ্যমিক দেবে সে। কিন্তু তার মধ্যেই জামাইবাবুর এক আত্মীয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে গ্রামে ও পরিবারে ঝামেলা শুরু হয়। বাড়ির লোককে অপমানিত হয় বলেও তার দাবি। এরপরে ওই যুবককে বিষয়টি জানালে সে-ও কিশোরীকে প্রত্যাখ্যান করে বলে মেয়েটির দাবি। এরপরেই ওই ঘটনা ঘটায় সে। কিন্তু নৌকা থেকে মাঝগঙ্গায় ঝাঁপ দিতেই চিৎকার শুরু হয়ে যায়। পিছনেই গাড়ি পারাপারকারী বার্জের মাঝি ছিলেন জয়দেববাবু। গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে প্রথমে ওই কিশোরীর চুলের মুঠি ধরে তলিয়ে যাওয়া আটকান তিনি। তারপরে জাপটে ধরে প্রাণ বাঁচান। পরে জয়দেববাবুরই ওই কিশোরীকে কাটোয়ামুখী একটি নৌকায় তুলে দেন। নৌকা গাটে ভিড়তে পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
জয়দেববাবু বলেন, “চোখের সামনে মেয়ের বয়সী একজন হাবুডুবু খাচ্ছে দেখার পরে কী করে নৌকায় বসে থাকব? জলে ঝাঁপ দিয়ে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচাতে পেরেছি এটই বড় কথা।” তিনি আরও বলেন, “এটা যে কোনও মাঝিরই কর্তব্য। কারণ আমাদের হাতে তো কত মানুষেরই জীবন নির্ভর করে।” তিনি জানান, এর আগেও বেশ কয়েকবার কাটোয়ার এই ফেরিঘাটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশ কয়েকজনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন মাঝিরা। তবে বিকেল পর্যন্ত কাটোয়া আসেননি ওই কিশোরীর পরিজনেরা। পুলিশের দাবি, সন্ধ্যার পরে মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মহিলা ওয়ার্ড থেকে ওই কিশোরী নিখোঁজ। কিশোরীর জামাইবাবুকে ফোন করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy