সরকার বদলালেও ডিপিএলের পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। রাজ্য সরকারের বিদ্যুত্ উত্পাদন সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল) বাম আমলের রুগ্ণ দশা থেকে পরিবর্তনের তিন বছর পরেও বেরিয়ে আসতে পারেনি। শনিবার, আইএনটিটিইউসির এক কর্মিসভায় এসে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা তথা বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় আক্ষেপ করেন, “ডিপিএলে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি চলছে। আমি বিদ্যুত্মন্ত্রীর সঙ্গে বসব।” শাসকদলের শ্রমিক নেতার এই স্বীকারোক্তি রাজ্য সরকারের এই সংস্থার বর্তমান দুরাবস্থার চিত্রটি আবার সামনে এনে দিল। শোভনদেববাবুর এই কথা শোনার পরে ডিপিএলের এক আধিকারিক বলেন, “আমরাও চাই, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হোক।”
দুর্গাপুর ও লাগোয়া এলাকায় বৃহত্, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত্ উত্পাদন ও সরবরাহের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার ডিপিএল গড়ে তোলে। ১৯৬০ সালে ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দু’টি ইউনিট চালু হয়। ১৯৬৪ সালে ৭৭ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরও দু’টি ইউনিট গড়া হয়। দু’বছর পরে গড়ে ওঠে পঞ্চম ইউনিটটি। তার ক্ষমতাও ৭৭ মেগাওয়াট। এর পরে ১৯৮৭ সালে ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ষষ্ঠ ইউনিটটি গড়ে ওঠে। ২০০৮ সালের মে মাসে যোগ হয় তিনশো মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সপ্তম ইউনিটি। পুরনো হয়ে পড়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ইউনিটটি কার্যত বন্ধই থাকে। নির্মীয়মাণ অষ্টম ইউনিটটি চালু হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। ফলে ভরসা এক মাত্র ষষ্ঠ ও সপ্তম ইউনিট। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সে দু’টিও নানা কারণে নিয়মিত উত্পাদন করতে পারছে না। মূলত গ্রিড থেকে বিদ্যুত্ কিনে তা শিল্প-কারখানা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুত্ সরবরাহ বজায় রেখেছে ডিপিএল।
ডিপিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রিডের মাধ্যমে রাজ্য বিদ্যুত্ পর্ষদের কাছ থেকে বিদ্যুত্ নিয়ে গৃহস্থালীর বিদ্যুত্ পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। ডিপিএল সিটি সেন্টার, বিধাননগর, দুর্গাপুর বাজার, স্টেশন, ডিভিসি ব্যারাজ, শঙ্করপুর, টেটিখোলা-সহ নানা এলাকায় গৃহস্থালীর বিদ্যুত্ সরবরাহ করে থাকে। এ ছাড়াও রাতুরিয়া-অঙ্গদপুর শিল্পতালুক, বামুনাড়া শিল্পতালুকের বহু কারখানাতেও বিদ্যুত্ দিয়ে থাকে এই সংস্থা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ পরিষেবা বজায় রাখতে পারছে না ডিপিএল।
ডিপিএলের এমন পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংস্থার সাধারণ কর্মীরা। একে সংস্থা রুগ্ণ হয়ে পড়েছে, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইএনটিটিইউসি’র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন কর্মীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের গোষ্ঠীকোন্দলের কারণে তাঁদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সংস্থার ভবিষ্যত্ই প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে বলে মনে করছেন কর্মী-আধিকারিকদের একাংশ। শনিবার শোভনদেববাবু ডিপিএলে আসার পরে আইএনটিটিইউসি কর্মীরা তার কাছে সংস্থার পরিস্থিতি বিস্তারিত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন।
‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’ এর কার্যকরী সভাপতি অমর মণ্ডল বলেন, “ডিপিএলের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কর্মীরা দুশ্চিন্তায় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। শোভনদেববাবুকে আমরা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অবহিত করেছি।”
শনিবার বৈঠক শেষে শোভনদেববাবু কর্তৃপক্ষের একাংশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অপদার্থতার জন্যই ডিপিএলের আজ এই হাল। সিপিএম আমল থেকে এটা চলে আসছে। আমি বিদ্যুত্ মন্ত্রীর সঙ্গে বসব। দরকার হলে এখানকার এমডিকেও ডেকে পাঠাবো। পরিস্থিতি বদলাতে হবে। দিনের পর দিন সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাবে এটা চলবে না।” আইএনটিটিইউসি’র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টিও কার্যত মেনে নেন তিনি। জানান, শিল্প কারখানায় কাজের পরিবেশ ব্যাহত হবে এমন কিছুই করা যাবে না।” ডিপিএলে আইএনটিটিইউসি-র একটিই ইউনিট করার তা কার্যকরী করা হবে।
ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস বলেন, “আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আগেই সব জানিয়ে বিদ্যুত্মন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। ডিপিএলের পরিস্থিতি বর্তমানে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা আশা করি এ বার অন্তত কিছু একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy