আউশায় শিবির। নিজস্ব চিত্র
দু’মাস আগে স্থানীয় এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পরে তাঁর পাঁচটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়। মস্তিস্কের মৃত্যু (ব্রেন ডেথ) হয়েছিল তাঁর। বিষয়টি নিয়ে প্রচার হয় এলাকায়। শনিবার ওই ঘটনায় অণুপ্রাণিত হয়ে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন ২৪ জন।
মেমারি থানার আউশায় ওই শিবিরে শনিবার হাজির হয়েছিলেন অনেক খেটে খাওয়া মহিলারা। তফসিলি, জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজনও ছিলেন। পেশায় পরিচারিকা, দিনমজুর এমন অনেকেও দেহদানের অঙ্গীকার করেন। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ বিশেষত মহিলাদের এগিয়ে আসায় উৎসাহিত হয়েছেন উদ্যোক্তারাও। মরণোত্তর দেহদান ও অঙ্গদান আন্দোলনে দীর্ঘ দিন ধরে যুক্ত জয়দেব নায়েক বলেন, “এই সমস্ত ক্ষেত্রে মহিলাদের খুব একটা উৎসাহ দেখা যায় না। কিন্তু শনিবারের শিবিরে উল্টো ছবি দেখা গেল। মহিলারাই উৎসাহ দেখিয়ে বাকিদের দেহদানের অঙ্গীকার করাতে রাজি করিয়েছেন। এটা খুবই ভাল লক্ষ্মণ।’’
শিবিরের অন্যতম উদ্যোক্তা কল্যাণ হাজরা জানান, হাটগোবিন্দপুরের বাসিন্দা হিরণ্ময় ঘোষালের মস্তিস্কের মৃত্যুর কারণে মরণোত্তর অঙ্গদানে পাঁচ জন নতুন জীবন পেয়েছেন। তাতে উৎসাহী হয়ে বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচার চালানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের উৎসাহ দেখে শিবির করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন ২৪ জন দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন। জানা গিয়েছে, চুয়ান্ন বছরের হিরণ্ময় এক জন নাট্যকর্মী ছিলেন। গত বছরের শেষ সপ্তাহে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। আচমকাই মাথার যন্ত্রণা ও খিঁচুনি শুরু হয়। প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল পরে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। নাট্যকর্মীর মৃত্যুর পরে দুটি কিডনি, যকৃৎ, ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড দানকরা হয়।
এ দিন নবস্থা গ্রামের বাসিন্দা, ৬৯ বছরের বাসন্তী পাঁজা ও তাঁর ছেলে ৪৮ বছরের রমাকান্ত বলেন, “মৃত্যুর দেহ পুড়িয়ে দিলে তা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু দান করলে অনেকের মাঝে আমরা বেঁচে থাকব। আবার আমাদের দানে তাঁরাও নতুন জীবন পাবেন।’’ পেশায় পরিচারিকা ছায়া মণ্ডল থেকে কৃষিজীবী রূপচাঁদ বাস্কে, ধীরেন বাস্কেদেরও দাবি, “আমাদের এলাকার মানুষের দান করা অঙ্গে পাঁচ জন নতুন জীবন পেয়েছেন। এ কি কম বড় কথা! আমরাও মৃত্যুর পরে কারও কাজে লাগতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy