দলের নামে চাঁদা তোলা যাবে না বলে যতই নির্দেশ দিন নেতা-মন্ত্রীরা, রক্তদান শিবির থেকে দলের অনুষ্ঠান বারবার সামনে আসছে চাঁদা তোলা।
এ বার সিঙ্গুর উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্যও বিল ছাপিয়ে চাঁদা তোলার হদিশ মিলল। বর্ধমান শহরের এক দুধ ব্যবসায়ীর অভিযোগের ভিত্তিতে পাঁচ তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘যাঁরা এ কাজে যুক্ত তাঁরা দলের শৃঙ্খলা ভেঙেছেন।’’
বৃহস্পতিবার রাতে তপন ঘোষ, মফিজুল আলম, আখতার আলি, শঙ্কর কর্মকার ও পারিজাত মণ্ডল নামে ওই পাঁচ জনকে ধরে পুলিশ। ধৃতদের বাড়ি রায়না থানার বেলুর-শাঁকটিয়া এলাকায়। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” ধৃতদের আজ, শুক্রবার আদালতে তোলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকালে ওই ব্যবসায়ী ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দুধের গাড়ি নিয়ে বেলুর গ্রামে যান। অভিযোগ, সেখানেই কয়েকজন নিজেদের তৃণমূল কর্মী পরিচয় দিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে ইন্দ্রনাথবাবু জানান, তিনি ৫০০ টাকা দিতে পারবেন জানালে তৃণমূলের কর্মীরা সেই টাকা নিয়ে নেয়। তারপরেই তাঁকে হুমকি দেয়, শনিবারের মধ্যে বাকি ৪৯,৫০০ টাকা চাঁদা না দিলে এই এলাকায় ব্যবসা করা যাবে না। কিসের জন্য চাঁদা? পুলিশের কাছে ইন্দ্রনাথবাবুর দাবি, ‘বুধবার ওই এলাকা থেকে বাসে করে প্রচুর মানুষ সিঙ্গুর গিয়েছেন। রাস্তার ধারে রান্না করে সিঙ্গুর-যাত্রীদের খাওয়ানো হয়েছে। ওই খরচ তোলার জন্যই চাঁদা চাওয়া হচ্ছে।’’
পুলিশেরও দাবি, বৃহস্পতিবার সিঙ্গুর-উৎসবকে সামনে রেখে চাঁদা চেয়েছিলেন ওই সব তৃণমূল কর্মীরা। তবে আদতে বেশ কয়েক মাস ধরেই কখনও দলীয় দফতর তৈরির নামে আবার কখনও দলীয় অনুষ্ঠানের জন্য ‘বেলুর যুব তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি’র নামে চাঁদা তোলা হয়েছে। ওই যুবকদের পিছনে রায়না ১ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি ডাবলু চৌধুরী জড়িত বলেও প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। যদিও ডাবলুবাবুর দাবি, “আমার কোনও লোক নেই। সবাই দলের লোক।”
তৃণমূলের নেতারাও বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, বেলুরের কয়েকজন দলের নামে চাঁদা তুলছিল বলে খবর মিলছিল। ওই এলাকায় কয়েকজন সক্রিয় কর্মী তাঁদের নজরেও রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সিঙ্গুর উৎসবের খরচ তোলার নাম করে চাঁদা আদায় করতে গেলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
এলাকাটি রায়না ১ ব্লকের মধ্যে হলেও জামালপুর বিধানসভার মধ্যে পড়ে। জামালপুরের প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক বলেন, “ওই এলাকাটি আমিই দেখি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। দলকেও ঘটনাটি জানাব।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ধৃতদের মধ্যে দু’জন বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী দলে ছিলেন। কার মদতে তাঁরা দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা তুলছিল, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” রায়না ১ ব্লকের সভাপতি শৈলেন সাঁই বলেন, “আমাদের দলে চাঁদা তোলার নিয়ম নেই। যাঁরা এ কাজ করেছেন বা মদত দিয়েছেন তাঁরা শৃঙ্খলা ভেঙেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy