Advertisement
০৮ মে ২০২৪

হাসপাতাল ছেড়ে ওঝা, মৃত্যু ছাত্রীর

জেলার বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকাতেই নিয়মিত ভাবে সচেতনতা প্রচার চালানো হয়। তারপরেও কী ভাবে এমন হল দেখা হবে।’’ তাঁর দাবি, সাপে ছোবলের একশো মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ১২:২০
Share: Save:

সর্পদষ্ট হয়ে মৃত্যু হল দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর। মঙ্গলকোটের গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের দ্বারসিনী গ্রামের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ন’কিলোমিটার দূরে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় রিয়া সরেনকে (৭)। ততক্ষণে মারা গিয়েছে সে। এ নিয়ে পরপর তিন জনের একই ভাবে মৃত্যু হল ওই এলাকায়।

জেলার বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকাতেই নিয়মিত ভাবে সচেতনতা প্রচার চালানো হয়। তারপরেও কী ভাবে এমন হল দেখা হবে।’’ তাঁর দাবি, সাপে ছোবলের একশো মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে মা, দিদার সঙ্গে ঘুমিয়েছিল রিয়া। ১১টা নাগাদ বাঁ হাতের আঙুলে কিছু একটা বার দুয়েক কামড়ায় তাকে। ঘুম ভেঙে গেলে মাকে দেখায় সে। মা চম্পাদেবী অবশ্য প্রথমে বুঝতে পারেননি। দিদা বাসন্তীদেবী জানান, মেয়ের কান্না না থামায় সন্দেহ হয় তাঁদের। দেখেন, বেশ কয়েকটা ছোবলের দাগ রয়েছে। বাড়ির উঠোনে সাপটিও দেখতে পান তাঁরা। বাসন্তীদেবীর দাবি, ‘‘সাপটাকে মেরে ফেলি আমরা। ততক্ষণে নাতনির কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ জানা গিয়েছে, এরপরেই মোটরবাইকে রিয়াকে আউশগ্রামের কল্যাণপুরে এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই জানা যায় তার মৃত্যু হয়েছে। অথচ দ্বারসিনী গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র যেতে মিনিট পনেরো এবং ৪০ কিলোমিটার দূরের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে।

মাস দেড়েক আগে গোতিষ্ঠা গ্রামে সাপের ছোবলে মারা যায় দশম শ্রেণির ছাত্র অভিজিৎ ঘোষ (১৬)। গ্রামবাসীদের দাবি, তাকেও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঘণ্টা দুয়েক ঝাড়ফুঁক চলার পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে। তার মাস খানেক আগে মঙ্গলকোটেরই চানক পঞ্চায়েতের ইরসন্ডা গ্রামের গোলাম শেখকেও (৩০) একই ভাবে প্রথমে ওঝা পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগে আনা হলে হয়তো বা প্রাণ বাঁচানো যেত।

বারবার এমন ঘটনায় যথাযথ প্রচার, বিজ্ঞান মনস্কতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, বেশির ভাগ মানুষ বুঝলেও এখনও কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রথমে ওঝার কাছেই ছোটেন। গত ৯ মাসে ওই এলাকায় ১২-১৪ জন সাপে কাটা মারা গিয়েছেন বলেও তাঁদের দাবি। গোতিষ্ঠা পঞ্চায়েতের প্রধান ভাগ্যধর দাসের দাবি, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে স্কুলে প্রচার চালানো হয়। তবে বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছবে এমন ভাবে আরও প্রচার চালানো প্রয়োজন। মঙ্গলকোট ব্লক বিপর্যয় ব্যবস্থাপন আধিকারিক প্রশান্ত ভাঙ্গীর যদিও দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাপে কাটার পরে হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কিছু মানুষ এখনও কুসংস্কারে আচ্ছন্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mongalkote snake bite মঙ্গলকোট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE