Advertisement
E-Paper

প্রার্থী তালিকা নিয়ে বেজায় ক্ষোভ তৃণমূলে

পুরভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে গোলমাল অব্যহত। তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে ক্ষোভ তো রয়েইছে, কোথাও আবার নেতাদের ঘিরে বিক্ষোভে অসন্তোষ মাত্রা ছাড়িয়েছে। শনিবার তালিকা ঘোষণার পর থেকেই অসন্তোষ, ক্ষোভ, এমনকী দাঁইহাটে এক তৃণমূল কাউন্সিলররের বাড়িতে হামলারও অভিযোগ উঠেছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৭
রবিবার দাঁইহাটে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ঘেরাও বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

রবিবার দাঁইহাটে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে ঘেরাও বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ্যের পর থেকেই তৃণমূলের অন্দরে গোলমাল অব্যহত। তালিকায় নাম না থাকা নিয়ে ক্ষোভ তো রয়েইছে, কোথাও আবার নেতাদের ঘিরে বিক্ষোভে অসন্তোষ মাত্রা ছাড়িয়েছে।

শনিবার তালিকা ঘোষণার পর থেকেই অসন্তোষ, ক্ষোভ, এমনকী দাঁইহাটে এক তৃণমূল কাউন্সিলররের বাড়িতে হামলারও অভিযোগ উঠেছিল। রবিবার তার জের চলল। এ দিন দাঁইহাটে দলেরই একটি গোষ্ঠীর বিক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূলের বিধায়ক তথা দাঁইহাট পুরসভার নির্বাচনী পর্যবেক্ষক তপন চট্টোপাধ্যায়। বিধায়ককে আটকে কয়েকজন প্রার্থী সাফ জানিয়ে দেন, তালিকা বদল না হলে ভোটে লড়বেন না তাঁরা। দীর্ঘক্ষণ আটকে থেকে বিরক্ত তপনবাবু বলেও ফেলেন, “আমাকে এভাবে হেনস্থা করার মানে কি?” পরে অবশ্য বিষয়টি মিটে যাবে বলে আশ্বাসও দেন তিনি।

মেমারিতেও শনিবারের ঘোষিত তালিকায় উপপুরপ্রধান-সহ পাঁচ কাউন্সিলরের নাম না থাকায় তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে তৃণমূলে। মেমারির বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডলের দাবি, “ওই প্রার্থী তালিকা সম্পূর্ণ অবৈধ। দলের তরফে নির্দেশ ছিল বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট পুরসভার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। তালিকায় বিধায়ক ও জেলা সভাপতির যৌথ স্বাক্ষর থাকবে। কিন্তু ওই প্রার্থী তালিকা সম্পর্কে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।” বিষয়টি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সিকেও জানিয়েছেন বলেও তাঁর দাবি। কালনাতেও বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ কুণ্ডু ঘনিষ্ঠদের নাম প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁর অনুগামীরা। বিশ্বজিত্‌বাবু সরাসরি মন্তব্য করতে না চাইলেও ঘনিষ্ঠ মহলে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বলেও জানা গিয়েছে।

এ দিন দাঁইহাটে যুব তৃণমূল দফতরের প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক চলাকালীন কাউন্সিলর সুদীপ্ত রায় অভিযোগ করেন, “পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে শুভেন্দু দাস প্রার্থী হতে পারেনি বলে শনিবার রাতে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। বাড়িতে ইট ছুঁড়েছে। মায়ের মাথায় ইট লেগেছে।” ওই বৈঠকে দাঁইহাটের ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮ জন প্রার্থী ও হাতেগোনা কর্মী হাজির ছিলেন। বাকি ৬ জন প্রার্থী সদলবলে বিধায়ক তপনবাবুর জন্য গণেশজননী তলায় তৃণমূলের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান স্বাধীনা নন্দীর বাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। তপনবাবুরা সেখানে পৌঁছতেই কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, দাঁইহাট শহর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা একসঙ্গে প্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তালিকা বদলে গিয়েছে। প্রকাশিত তালিকাতে এমন কয়েকজনের নাম রয়েছে, যাঁদের শহরের মানুষ তৃণমূল করতে দেখেননি। এছাড়া এক ওয়ার্ডের বাসিন্দাকে অন্য ওয়ার্ড থেকে দাঁড় করানো হয়েছে বলেও তাঁদের দাবি। দাঁইহাট শহর তৃণমূলের সভাপতি তথা ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী রঞ্জিতকুমার সাহা বলেন, “কর্মীরা আমাকে ঘিরে রেখেছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রার্থীবদল না হলে আমিও প্রার্থী হব না।” ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কার্তিক মজুমদার, ৩ নম্বরের স্বাধীনা নন্দী, ৭ নম্বরের স্বপ্না হালদার, ২ নম্বরের মাধবী হাজরা, ও ১৪ নম্বরের প্রভাত মণ্ডলও প্রার্থী হতে ‘অনিচ্ছুক’ বলে লিখিত ভাবে তপনবাবুকে জানিয়েছেন। সভাপতি-অনুগামীদের অভিযোগ, প্রাক্তন পুরপ্রধান কালিদাস রায়ের নাম প্রার্থী তালিকায় ছিল না, অথচ তাঁর নাম প্রকাশ হয়ে গেল। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সমর চক্রবর্তী শৌচাগারের টাকা লুঠপাটে অভিযুক্ত, তিনি সেই দোষ স্বীকার করে টাকা ফেরত দিয়েছেন। তারপরেও তাঁকে প্রার্থী করা হল, তবুও দাঁইহাটে তৃণমূলের মূল নেতা শুভেন্দু দাসকে প্রার্থী করা হল না! তাঁরা ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বদল করার জন্য তপনবাবুকে বলেছেন।

চলছে মনোনয়ন জমা। কালনায়।

দীর্ঘক্ষণ ধরে বিক্ষোভের মুখে থাকার পর এক সময় ধৈর্য হারিয়ে দাঁইহাট শহরের তৃণমূল সভাপতির উদ্দেশে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বলতে থাকেন, “এ ভাবে আমাকে ডেকে এনে হেনস্থা করার মানে কী? আপনাদের উদ্দেশ্যটাই বা কী? আপনারা জেলা সভাপতিকে পুরো বিষয়টি জানান।” এর পরে তপনবাবু জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে ফোনে পুরো বিষয়টি জানান। রঞ্জিতবাবু বলেন, “স্বপনবাবু আমাদের কোনও কথা শোনেননি। আপনাকে কাছে পেয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরলাম।” এরপর গোপনে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করার পর তপনবাবু বলেন, “জাতীয়তাবাদী দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকবেই। ঠিক সময়ে সব মিটে যাবে।”

মেমারির তালিকা নিয়েও বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডল বলেন, “দলের তরফে ঠিক হয়েছিল, বিজয়ী প্রার্থীদের সরানো হবে না। যদি তাঁদের ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়ে যায় তাহলে অন্য ওয়ার্ডে দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হবে।” তাঁর দাবি, সুব্রত বক্সি নিজেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ শনিবার প্রকাশিত তালিকায় সুব্রতবাবু ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদন থাকার কথা বললেও রবিবার অসন্তোষ দেখে বলেন, “আমি ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। যা করেছি দলের অনুমোদন নিয়েই করেছি।” কেন ওই পাঁচ কাউন্সিলারকে বাদ দেওয়া হল, সে ব্যাপারেও মুখ খুলতে চাননি তিনি।

তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন মেমারির কাউন্সিলর স্বপন ঘোষাল। ওই ওয়ার্ডটি এ বার মহিলা সংরক্ষিত। স্বপনবাবুর অবশ্য দাবি, “ যে পাঁচ কাউন্সিলারকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁরা পুরপ্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের লুঠের রাজত্ব বাধাহীন ও অবাধ করতেই এই সিদ্ধান্ত।” বাদ পড়েছেন কাউন্সিলর কামরুল হোসেন, মনি হেমব্রম। ওই ওয়ার্ডগুলিও সংরক্ষিত। উপপুরপ্রধান হোসেনারা বেগমের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও ওখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন আলিয়া বেগম। রবিবার স্বপন ঘোষাল দাবি করেন, “তৃণমূল ভবনে গিয়ে দলের উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সুব্রত বক্সি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরা বলেছেন, আমাদের বাদ পড়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।”

কালনাতেও শনিবার রাতে প্রার্থী জানাজানি হওয়ার পরেই তৃণমূলের নানা গোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ ছড়ায়। সব থেকে বেশি ক্ষুব্ধ হন পুরপ্রধান তথা বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ কুন্ডুর অনুগামীরা। তাঁদের দাবি, চক্রান্ত করে তাঁদের তালিকার বেশির ভাগ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। বিধায়ককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, “কালনার মানুষকে জিজ্ঞাসা করুন। তাঁদের কাছেই জবাব পেয়ে যাবেন। আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।” গত বার জয়ী সাত কাউন্সিলরের মধ্যে একমাত্র টিকিট পাননি পাঁচ নম্বরের তৃণমূল কাউন্সিলার চন্দনা বিশ্বাস। সেখানে প্রার্থী হয়েছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা সমরজিত হালদার। কংগ্রেস থেকে যে পাঁচ কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে টিকিট পেয়েছেন দেবপ্রসাদ বাগ, সুনীল চৌধুরী এবং আনন্দ দত্ত। বেশ কিছু অরাজনৈতিক নাম জমা পড়লেও শিকে ছেঁড়েনি তাঁদের ভাগ্যে। বরং কোনও না কোনও গোষ্ঠী ঘনিষ্ঠদেরই নাম দেখা গিয়েছে। কংগ্রেস থেকে সদ্য তৃণমূলে আসা আনন্দবাবু টিকিট পাওয়ায় চটেছেন ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা গোপাল তেওয়ারি। ইতিমধ্যেই নির্দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন তুলেছেন তিনি। রবিবার তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ আমাকে ভালবাসেন। আমিও বিপদে আপদে ওদের পাশে থাকি। ওদের ইচ্ছাতেই আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।”

municipality vote tmc tapan chattopadhyay Dainhat Memari Burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy