Advertisement
২৪ মে ২০২৪
ইউআইটিতে জখম দুই শিক্ষকও

চাঁদা নিয়ে মারপিট, বন্ধ ক্লাস

কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের চাঁদা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তীব্র সংঘর্ষ বাধল বর্ধমানের ইউনির্ভাসিটি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে। বুধবার কলেজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের দু’দল ছাত্রের ওই মারামারিতে দুই শিক্ষক, এক কর্মী-সহ আট জন আহত হয়েছেন। কলেজের টিচার-ইন-চার্জ জানান, প্রথম বর্ষ ও ছাত্রীদের হস্টেল বাদে সমস্ত হস্টেল খালি করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫১
Share: Save:

কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানের চাঁদা চাওয়াকে কেন্দ্র করে তীব্র সংঘর্ষ বাধল বর্ধমানের ইউনির্ভাসিটি ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে। বুধবার কলেজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের দু’দল ছাত্রের ওই মারামারিতে দুই শিক্ষক, এক কর্মী-সহ আট জন আহত হয়েছেন। কলেজের টিচার-ইন-চার্জ জানান, প্রথম বর্ষ ও ছাত্রীদের হস্টেল বাদে সমস্ত হস্টেল খালি করে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হচ্ছে সমস্ত সেমেস্টারের ক্লাস। শুধুমাত্র সপ্তম সেমেস্টারের পরীক্ষাগুলি চলবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানও।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার দুপুরের ওই ঘটনায় ফারহাদ হোসেন নামে সিভিল তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের বাসিন্দা ফারহাদের সঙ্গে দুই শিক্ষককেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অপূর্বকুমার ঘোষ জানান, বার্ষিক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এ বার একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিই তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের অনুষ্ঠানের চাঁদা তোলার দায়িত্ব দিয়েছে। সেই মতো মঙ্গলবার থেকে চাঁদা তুলতে শুরু করেন ছাত্রেরা। ওই দিনই দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসেই একপ্রস্থ বচসা ও হাতাহাতি হয়। ফের হাতাহাতি হয় বুধবার সকালে। কিন্তু দু’বারই নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল মিটিয়ে নেন ছাত্রেরা।

পরে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রেরা অভিযোগ করেন, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্ররা চাঁদা দিচ্ছে না। আবার দ্বিতীয় বর্ষ পাল্টা অভিযোগ তোলে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রেরা জোর করে চাঁদা আদায় করছে। দু’পক্ষের অভিযোগ পেয়ে দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বৈঠক ডাকা হয়। শান্তির আশঙ্কায় বার্ষিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। বৈঠক চলাকালীনই কলেজ কর্তৃপক্ষ খবর পান, দুই বর্ষের ছাত্রদের মধ্যে দোতলায় তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। বেঞ্চের পায়া, রড, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে মারধর চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কলেজের একতলার খোলা চত্বরেও মারপিট শুরু হয়। অপূর্ববাবুর দাবি, মারধরের খবর পেয়েই অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে তা থামাতে ছুটে যান তিনি। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই মারপিট থামাতে গিয়ে দুই শিক্ষক, সিভিল বিভাগের সন্দীপন নাথ ঠাকুর ও ইন্সট্রুমেন্টেশনের শিক্ষক ফারুক বিন পোয়েন গুরুতর আহত হন। আহত হন কারিগরি কর্মী প্রীতম দেও। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এরপরেই অনির্দিষ্টকালের জন্য অনুষ্ঠান স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।

দ্বিতীয় বর্ষের এক আহত ছাত্র, প্রাঞ্জল ভুজবান-সহ কয়েকজনের দাবি, ‘‘হস্টেলের খাবার নিয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কয়েকদিন আগে বচসা হয়েছিল। তারপর থেকেই ওরা আমাদের নানা ধরনের ভয় দেখাত ও গালিগালাজ করত। এ বারের বার্ষিক অনুষ্ঠানের চাঁদা আগের চেয়ে প্রায় ৩০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রেরা জোর করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করছে।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘গতকাল সন্ধ্যায় ওরা দ্বিতীয় বর্ষের সিভিল বিভাগের তিনজন ছাত্রকে মারধর করছে। চাঁদা না দিলে কঠিন সাজা দেওয়া হবে বলেও আমাদের ভয় দেখাচ্ছে। বুধবার দুপুরে এর তীব্র প্রতিবাদ করায় ওরা আমাদের মারতে শুরু করে।”

যদিও অভিযোগ মানতে না চেয়ে তৃতীয় বর্ষের আহত ছাত্র অভীক সরকার ও সাজিদ খান বলেন, “দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ওদের কেউই চাঁদা দিচ্ছে না। জোর করলে অনেক চাঁদা উঠত। তা ছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের চাঁদা নিয়ে জোর করতে বারণ করেছিলেন।’’ তাঁদের দাবি, ‘‘ওরা একটা চাঁদার বিল চাইছিল আমাদের কাছে। টাকা নয়ছয়ের আশঙ্কায় সেটা আমরা দিইনি। বুধবার কলেজে এ নিয়ে বৈঠক চলাকালীন কয়েকজন ওদের কাছে চাঁদা চাওয়ায় উল্টে আমাদেরই ওরা মারধর করে। গোলমাল থামাতে আসা শিক্ষকদের উপরেও চড়াও হয়। তাঁদের বাঁচাতে গিয়েই মার খেয়েছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE