বাঁ দিকে, কাঁকসায় ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর সমর্থনে রোড-শো বৃন্দা কারাটের। ডানদিকে, পানাগড় রেলপাড়ে প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাজি। নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থী ‘বহিরাগত’ বলে অসন্তোষ ছিল দলের অন্দরে একাংশের। সে জন্য গোড়ায় স্বচ্ছন্দ ছিলেন না প্রার্থী নিজেও। তবে ভোট যত এগিয়ে আসছে, সে সব ঝেড়ে ফেলে জোরকদমে মাঠে নেমে পড়েছেন তিনি। উল্টো দিকে বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর হয়ে ময়দানে নেমেছে সিপিএম। দেখা যাচ্ছে কংগ্রেসকেও। সব মিলিয়ে, প্রচার-চিত্র বেশ জমে উঠেছে গলসি বিধানসভা কেন্দ্রে।
১৯৫২ সালে প্রথম ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী হয় কংগ্রেস। তার পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত গলসি ছিল বামেদের দখলে। বরাবর জিতেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থীরা। ২০১১-র বিধানসভা ভোটে রাজ্যে ক্ষমতাবদলের মধ্যেও জিতেছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডল। কিন্তু পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৪ সালে উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন কাঁকসা হাইস্কুলের শিক্ষক গৌরচন্দ্র মণ্ডল। তিনি হারিয়ে দেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নন্দলাল পণ্ডিতকে। গৌরচন্দ্রবাবুকে এ বার আর দল প্রার্থী করেনি। তাঁর জায়গায় টিকিট পেয়েছেন জেলা পরিষদের মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ, খণ্ডঘোষের বাসিন্দা অলোক মাজি। দলের খণ্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অলোকবাবু গত বার নিজের এলাকায় প্রার্থী হয়ে সিপিএমের নবীন বাগের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এ বার দল পাল্টে নবীনবাবু সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। ফরওয়ার্ড ব্লক অবশ্য গলসি কেন্দ্রে এ বারও ভরসা রেখেছে নন্দলালবাবুর উপরেই।
গলসি ১ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত ও কাঁকসার চারটি পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি গলসি বিধানসভা কেন্দ্র। উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রায় আট হাজার ভোটে ফরওয়ার্ড ব্লককে হারালেও একই সঙ্গে হওয়া লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের ভোটের ব্যবধান ছিল হাজার দুয়েক। কংগ্রেস সাড়ে সাত হাজারের উপর ভোট পেয়েছিল। সেই অঙ্ক সামনে রেখেই এ বার এই কেন্দ্রে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাম-কংগ্রেস জোট।
ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী নন্দলালবাবু বাড়ি-বাড়ি ঘুরে প্রচার করছেন। তাঁর দলের কর্মী-সমর্থকদের মাঝে ভিড় করে রয়েছেন সিপিএমের লোকজন। সিপিএমের দাবি, কোনও হেভিওয়েট নেতার সভা সফল করতে হলে প্রস্তুতিতেই অনেক সময় লেগে যায়। সেই তুলনায় হাতে যে সময় রয়েছে তা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালিয়ে নেওয়ায় কাজে লাগানো বেশি ফল দেবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের কথায়, ‘‘মানুষের কাছে যত বেশি সম্ভব আমরা পৌঁছতে চাইছি।’’
কোনও সভা নয়, শনিবার এই কেন্দ্রে শুধু পদযাত্রা করে গেলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। কাঁকসার দানবাবার মেলা চত্বর থেকে কাঁকসা গ্রাম, ক্যানাল পাড়, পানাগড় বাজার, রণডিহা ইত্যাদি এলাকায় পদযাত্রা করেন তিনি। প্রার্থী নন্দলালবাবু জানান, দিন কয়েক আগে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের গোপালপুরে জোট-প্রার্থীদের হয়ে সভা করে গিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। প্রার্থী বলেন, ‘‘হাতে আর অল্প সময় রয়েছে। গলসির বাসিন্দাদের কাছে জনে-জনে পৌঁছনোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’’ জোট প্রার্থীর সমর্থনে সেভাবে কংগ্রেসকে মাঠে নামতে দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে গলসিতে। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য অবশ্য দাবি করেন, গলসি বাজার-সহ কিছু জায়গায় হয়তো সে ভাবে কংগ্রেসের পতাকা বা ফ্লেক্স নজরে আসছে না। তবে আজ, রবিবার মানকর রোডে জোট প্রার্থীর সমর্থনে সভা করবে কংগ্রেস।
তৃণমূল অবশ্য অন্য ভাবে ভাবছে। বিদায়ী বিধায়ক গৌরচন্দ্র মণ্ডল প্রাথমিক ‘মনোমালিন্য’ ভুলে প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নেমেছেন। অলোকবাবুও তার পর থেকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন। প্রচারে বেরিয়ে কখনও কারও বাড়ির দাওয়ায় বসে জল চেয়ে খাচ্ছেন। কখনও আবার গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে ব্যাট হাতে নেমে পড়ছেন মাঠে। শনিবার তাঁর হয়ে রোড-শো করে গেলেন বাংলার ছোট পর্দার অভিনেত্রী গীতশ্রী রায়। পানাগড় রেলপাড় থেকে শুরু করে স্টেশন রোড, পানাগড় বাজার, পানাগড় গ্রাম, মোল্লাপাড়া, রথতলা পরিক্রমা করে মিছিল।
এই কেন্দ্রে বিজেপির হয়ে লড়ছেন সুন্দরলাল পাসোয়ান। জোরকদমে প্রচার সারছেন তিনিও। সুন্দরবাবু জানান, গ্রামে ঘুরে প্রচারের উপরেই বেশি জোর দিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy