Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নোট পাল্টে আমদানি হাতখরচের

পুরনো নোট বদলে দিলে হাজার টাকা পিছু পঞ্চাশ টাকা মিলবে, এমনই কথা হয়েছে পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে। তাই সেই প্রতিবেশীদের টাকা হাতে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিচ্ছে কিছু পড়ুয়া। কিছু যুবক আবার সকাল-সকাল লাইন দিয়ে দিচ্ছেন।

আসানসোলে ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে স্কুল পড়ুয়াও। নিজস্ব চিত্র।

আসানসোলে ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে স্কুল পড়ুয়াও। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

পুরনো নোট বদলে দিলে হাজার টাকা পিছু পঞ্চাশ টাকা মিলবে, এমনই কথা হয়েছে পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে। তাই সেই প্রতিবেশীদের টাকা হাতে ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিচ্ছে কিছু পড়ুয়া। কিছু যুবক আবার সকাল-সকাল লাইন দিয়ে দিচ্ছেন। পরে পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে কাউকে দিয়ে দিচ্ছেন নিজের জায়গা। ব্যাঙ্কে পুরনো টাকা পাল্টানোকে কেন্দ্র করে এমন নানা ছবি দেখা যাচ্ছে শিল্পাঞ্চলে।

ছুটির দিন বলে ভিড় গিয়েছিল বেড়ে। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘর, সবই খোলা ছিল। কিন্তু অনেক জায়গায় টাকা নেই। ফলে, জমা দেওয়ার কাজ নির্বিঘ্নে হলেও দিনের শেষে কিছু গ্রাহককে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। এ দিন সকালে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে শপিংমলের পাশে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ শুরুর খানিক পরেই নোটিস পড়ে গেল, ‘টাকা শেষ।’ ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রাহকেরা। তাঁদের সাফ কথা, টাকা নেই। তা আগে নোটিস দিয়ে জানানো উচিত ছিল। তাহলে সকাল থেকে এখানে লাইন না দিয়ে অন্য কোনও ব্যাঙ্কে যেতেন। আতঙ্কে ব্যাঙ্কের গেটে তালা দিয়ে দেন রক্ষীরা। শেষে ব্যাঙ্কের কর্মীরা এসে বুঝিয়ে শান্ত করেন তাঁদের।

রবিবার সকাল ৮টায় আসানসোলের রবীন্দ্র ভবন লাগোয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল এক স্কুলছাত্র। হাতের মুঠোয় ধরা চারটি হাজার টাকার নোট। সে জানাল, হাজার টাকা পিছু পঞ্চাশ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। শনিবারও দু’বার লাইন দিয়েছিল সে, চারশো টাকা মিলেছে। কুলটির নিউ রোড লাগোয়া ব্যাঙ্কের সামনে লাইনে দাঁড়ানো এক কলেজ ছাত্র জানান, পাড়ার এক প্রবীণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। চার হাজার পাল্টে দেওয়ার জন্য মিলবে আড়াইশো টাকা। হাতখরচ চলে যাবে তাতে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে জানা গিয়েছে, এ দিন চাপ বেশি। তাই দু’হাজারের বেশি টাকা পাওয়া যাবে না। তাই এক পরিশ্রম করেও কম টাকা মিলবে, জানায় হতাশ ওই ছাত্র।

বার্নপুরের আপার রোড লাগোয়া একটি ব্যাঙ্কের গ্রাহক, প্রাক্তন ইস্কো কর্মী দেবাশিস বসু আবার বলেন, ‘‘সকাল থেকে লাইন দেওয়া সম্ভব নয়। তাই পঞ্চাশ টাকা দিয়ে লাইন কিনেছি।’’ শুধু তিনি নন, অনেকেই এই পন্থা নিয়েছেন। জানা গেলো, এই ব্যাঙ্কে ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়াচ্ছেন আশাপাশের কিছু যুবক। টাকা পাল্টে দেওয়ার বরাত পেলে ভাল, না হলে টাকা নিয়ে লাইন ছেড়ে দিচ্ছে তারা। স্থানীয় সূত্রের খবর, কুলটির কেন্দুয়া বাজারের কিছু সুদের কারবারি নোট পাল্টে আনার জন্য দু’শো টাকা করে দিচ্ছেন এলাকার কিছু গরিব মানুষজনকে।

এত ঝঞ্ঝাটের মধ্যে না গিয়ে ছুটির দিনে সকাল-সকাল সপরিবারে লাইন দিয়েছিলেন অনেকে। আসানসোলের এসবি গড়াই রোডের বাসিন্দা বাবন জোয়ারদার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে হাটন রোড লাগোয়া এক ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ছুটির দিন, কোনও কাজ নেই। তাই সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি।’’

অধিকাংশ এটিএম এ দিনও কাজ করেনি। দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারের ডাকঘরেও টাকা আসেনি। তবে এসবিএসটিসি গ্যারাজ লাগোয়া প্রধান ডাকঘর বা এমএএমসি এলাকার ভিকে নগর ডাকঘরে নোট বদল হয়। আসানসোল মুখ্য ডাকঘরের আধিকারিকেরা জানান, ওই ডাকঘর ও ৫৪টি উপ-ডাকঘরে টাকা জমা ও বদল করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bank Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE