Advertisement
০৪ মে ২০২৪
অ্যাম্বুল্যান্স চক্রের অভিযোগ জেলায়

রোগী আনলেই পকেটে কমিশন

রোগীকে বুঝিয়ে এক বার সরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে!নার্সিংহোমের তরফে কমিশন তো আছেই, সঙ্গে ট্যাঁকে ঢোকে রোগী পরিবারের থেকে নেওয়া টাকা, আরও নানাবিধ উপরি। রমরমা বেড়ে চলে ভাড়ার অ্যাম্বুল্যান্সের।

লাইনে: বর্ধমান মেডিক্যাল চত্বরে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র

লাইনে: বর্ধমান মেডিক্যাল চত্বরে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৫৭
Share: Save:

রোগীকে বুঝিয়ে এক বার সরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে!

নার্সিংহোমের তরফে কমিশন তো আছেই, সঙ্গে ট্যাঁকে ঢোকে রোগী পরিবারের থেকে নেওয়া টাকা, আরও নানাবিধ উপরি। রমরমা বেড়ে চলে ভাড়ার অ্যাম্বুল্যান্সের।

বর্ধমান মেডিক্যাল হোক বা কালনা, কাটোয়া হাসপাতাল, অ্যাম্বুল্যান্সের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বহুদিনের। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাও মেনে নিয়েছেন, গত কয়েক বছরে জিটি রোডের দু’ধারে গজিয়ে ওঠা নার্সিংহোমগুলি রোগী টানার খেলায় লাগামহীন।

মঙ্গলবার জেলার নার্সিংহোম মালিকদের সঙ্গে একটি বৈঠকে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনও বলেন, “অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের মাধ্যমে ‘মিডল ম্যান’দের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, যা আমরা ভাল চোখে দেখছি না।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ও বলেন, “একটা চক্র কাজ করছে। বিভিন্ন ব্লক হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স মেডিক্যাল কলেজে না গিয়ে নার্সিংহোমে চলে যাচ্ছে।” রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়ে তাঁরা জানিয়েছেন, নার্সিংহোম মালিকদের কাছ থেকে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা গড়ে ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত পান।

কী ভাবে রোগী ‘হাইজ্যাক’ হয়?

বর্ধমান শহরের জিটি রোডের ধারের নার্সিংহোমগুলিতে বীরভূম, হুগলি ছাড়াও জেলার নানা এলাকা থেকে রোগীদের আনেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। ভুক্তভোগীরা জানান, অ্যাম্বুলেন্স চালকেরা প্রথমেই রোগীর পরিজনদের কাছ থেকে কোন নার্সিংহোমে যাবে তা জেনে নেয়। তারপরে রাস্তার মধ্যেই শুরু হয়ে যায় সে নার্সিংহোমের অবস্থা কী খারাপ, কীভাবে রোগীদের অবহেলা করা হয়, সেই বৃত্তান্ত। রোগী পরিজনের হাবভাব বুঝে কিছুক্ষণ পর থেকে তাঁরা শুরু করেন কমিশন খাওয়া নার্সিংহোমের গুণগান। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিনিয়ত আসাযাওয়া করা স্থানীয় অ্যাম্বুল্যান্সের চালকদের কথায় বিশ্বাস করেন রোগীর পরিজনেরা। আর এক বার নার্সিংহোমে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই পকেট ভারী হয় অ্যাম্বুল্যান্স চালকের।

নার্সিংহোম মালিকদের কাছ থেকে জানা যায়, রোগী পরিবারের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা ছাড়াও রোগী সাধারণ শয্যায় ভর্তি হলে ১০০০ আর আইসিইউ-য়ে ভর্তি হলে ২০০০ টাকা পায় অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। তার সঙ্গে অস্ত্রোপচার বা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলে সাত হাজার টাকা পর্যন্তও পকেটে ঢোকে। আর জেলার বাইরে হলে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা রোগী বুঝে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে রয়েছে সময় বুঝে টাকা। যেমন, সন্ধ্যা সাতটার পরে কোনও রোগীকে নিয়ে এলে চালকদের জন্য ‘খানাপিনার’ ব্যবস্থাও করে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন অ্যাম্বুল্যান্স চালক বলেন, “কাটোয়া-কালনার অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের সঙ্গে নার্সিংহোম মালিকদের মাসিক চুক্তিও থাকে।” বর্ধমান মেডিক্যাল থেকে রোগী নিয়ে যেতে পারলে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত মেলে বলে জানিয়েছে চালকদের একাংশ। শুধু নার্সিংহোম মালিকদের সঙ্গে নয়, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের সঙ্গেও ‘কমিশনের’ ব্যবস্থা রয়েছে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের।

বর্ধমান নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ বলেন, “আমরা বৈঠক ডাকছি। সেখানেই আলোচনা করা হবে।”

এসডিও (কালনা) কৃষ্ণচন্দ্র গড়াই বলেন, “সরকারি হাসপাতালের নামে অপপ্রচার করে রোগীদের বেসরকারি সংস্থায় নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যাপারে আমাদের ব্যাপক প্রচার গড়ে তুলতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance Hospital Patient Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE