মেমারির জনসভায় প্রার্থীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।
ভোট প্রচারে এসে মেমারির সঙ্গে পুরনো যোগের কথা স্মরণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩১ বছর আগে মেমারির করন্দা গ্রামে সিপিএমের হামলায় ছ’জনের মৃত্যুর কথাও স্মরণ করান। ‘বর্ধমানের ছেলে’ প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথাও বলেন বেশ কয়েক বার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেমারির গন্তার ফুটবল মাঠে সভা ছিল মুখ্যমন্ত্রী। সভাস্থল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে মেমারির পলশোনা গ্রামে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি। পৈতৃক বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের নাদনঘাটের ন’পাড়া গ্রামে। এ দিন একশো দিনের কাজে বিজেপির টাকা না দেওয়া, মিথ্যে বলার অভিযোগ করতে করতেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের একটা গল্প বলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘মজার মানুষ ছিলেন সুব্রতদা। দেখা হলে বলতেন, গুড়টা কিনে আনিসনি? বলতাম, অনেক দিন মেলায় যাইনি। গেলে আনব। সুব্রতদা বলত, জানিস তো বার বার দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এক দিন ডাক্তারকে বললাম, ছোটবেলায় শুনেছি মিথ্যা বললে দাঁত ভেঙে যায়। আমি না হয় একটু-আধটু বলি। কিন্তু যে বেশি মিথ্যা বলে তার তো মাড়িটাই চলে যাওয়া উচিত। এদের (বিজেপি) ক্ষেত্রেও এটা প্রযোয্য।’’
যদিও বিজেপির বর্ধমান পূর্ব লোকসভার সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “সহকর্মী থাকার সময় সম্মান, গুরুত্ব কিছুও দাওনি, এখন ভোট বৈতরণী পার করার জন্য মেমারিতে এসে প্রয়াত নেতাকে স্মরণ করতে হচ্ছে। এ সব ভাঁওতাবাজিতে মানুষের মন আর ভিজবে না।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালের ৩১মে সিপিএমের নেতৃত্বে করন্দা গ্রামের (বর্ধমান ২ ব্লক) পূর্ব পাড়ায় আক্রমণ হয়েছিল। আড়াইশো-তিনশো সিপিএম কর্মী সশস্ত্র অবস্থায় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গ্রামের বাইরে জড়ো হন। ধীরে ধীরে গ্রাম দখল করার জন্য হামলা চালানো হয়। নৃশংস ভাবে মারা যান মানিক হাজরা, হিরু মল, সাধন নায়েক, সোম কোঁড়া, ও দিলীপ পাকড়ে। জখম হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৪ জন। ওই পাড়ার ২৬টি বাড়ি অগ্নিদগ্ধ হয়। তৎকালীন যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করন্দা গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন। দু’একটি বাড়ি যাওয়ার পরেই সিপিআই (এমএল)-এর ‘বাধা’য় তাঁকে ফিরে আসতে হয়। এ দিন মমতা বলেন, “মেমারি আমার কাছে নতুন নয়। ছাত্রাবস্থা থেকে আসি। সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপিকে একটি ভোটও দেবেন না। করন্দার ঘটনা মনে পড়ে। চার জনকে পিটিয়ে হত্যা করে, একটা বাচ্চাকে মেরে মুড়ির টিনে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। সিপিএম যে কী সাংঘাতিক ছিল আর বলবেন না! বাজপাখির দুটো চোখ, সিপিএম আর বিজেপি।”
৩১ বছর আগের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে মেনকা মালিক মেমারি থানায় সিপিএমের নামে অভিযোগ করেছিলেন। পুলিশ ৮২ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। চার্জশিটে নাম ছিল ৩৮ জনের। মামলা চলাকালীন ছয় অভিযুক্ত মারা যান। বাকি ৩২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে শুনানি শুরু হয়। ৩৬ জন প্রত্যক্ষদর্শী-সহ ৪৯ জন সাক্ষ্য দেন।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় তথ্যা ‘ওভারলুক’ করায় এই মামলায় ‘ন্যায় বিচারের গর্ভপাত’ হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, গ্রামে কৃষক সমবায় সমিতি ছিল। ২০-২৫ লক্ষ টাকার দুর্নীতি ধরা পড়তেই পূর্ব পাড়ার বাসিন্দারা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। সিপিএম সমবায়ের কর্তাদের পাশে থাকায় তাঁরা দল ছেড়ে পঞ্চায়েত ভোটে সিপিআই (এমএল)-র প্রার্থী দেন। তার পরেই ওই হামলা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy