Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দাবি নিচুতলার, তবু তালিকায় নেই বংশ

দাবি তুলেছিলেন এলাকার নেতা-কর্মীরা। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থিতালিকায় রাখা হল না বংশগোপাল চৌধুরীর নাম। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল দল, আসানসোল-রানিগঞ্জে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে সে নিয়ে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৬ ০২:১৫
Share: Save:

দাবি তুলেছিলেন এলাকার নেতা-কর্মীরা। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থিতালিকায় রাখা হল না বংশগোপাল চৌধুরীর নাম। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল দল, আসানসোল-রানিগঞ্জে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চর্চা শুরু হয়েছে সে নিয়ে।

১৯৮৭ সালে প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েই বিধায়ক হয়েছিলেন বংশগোপালবাবু। ২০০৫ পর্যন্ত টানা বিধায়ক ছিলেন। সে বছর আসানসোল লোকসভা উপ-নির্বাচনে জিতে সাংসদ হন। ২০১৪ পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। গত লোকসভা ভোটে প্রথম ভোটে হারেন তিনি। বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়র কাছে সাংসদ পদ খোয়াতে হয় তাঁকে।

জেলা সিপিএমের এক নেতা জানান, গত অক্টোবরে আসানসোল, কুলটি, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জকে সংযুক্ত করে তৈরি পুরনিগমের প্রথম ভোটে বংশগোপালবাবুকে মেয়র পদপ্রার্থী করে লড়াইয়ে নামার দাবি উঠেছিল। রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, আসানসোল ও কুলটি— দলের সব ক’টি জোনাল কমিটির তরফেই সেই দাবি তোলা হয়েছিল। জেলা কমিটি গররাজি না থাকলেও বংশগোপালবাবু রাজি হননি বলে দাবি ওই সিপিএম নেতার।

শিল্পাঞ্চলের এক সিপিএম নেতা বলেন, ‘‘বংশবাবু সেই সময়ে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তবে দল তাঁকে জানিয়েছিল, তাঁর নেতৃত্বে দল যদি পুরবোর্ড দখল করতে না-ও পারে, তাতে চিন্তার কিছু নেই। বিধানসভা ভোটে তাঁকে প্রার্থী করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই ভাবা হবে। কিন্তু বংশবাবু পুরভোটে প্রার্থী হতে চাননি।’’ তাঁর দাবি, পুরভোটে দল তৃণমূলের সঙ্গে তুল্যমূল্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে কি না, সে নিয়ে সন্দেহ থাকার কারণেই হয়তো বংশগোপালবাবু প্রার্থী হতে চাননি।

তবে প্রার্থী না হলেও ওই পুরভোটে দলের তরফে অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন বংশগোপালবাবু। কিন্তু, সিপিএমের ফল মোটেই ভাল হয়নি। পুরনিগমের ১০৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৭টিতে জেতে বামেরা। সিপিএমের এক জেলা নেতা দাবি করেন, এই ব্যর্থতার পরেই বংশগোপালবাবুকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করা নিয়ে দলের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার বংশগোপালবাবুকে রানিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার জন্য উচ্চ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছিলেন রানিগঞ্জ ও অন্ডালের সিপিএম নেতা-কর্মীরা।

ওই নেতা-কর্মীদের যুক্তি ছিল, পুরভোটে অন্য এলাকার তুলনায় রানিগঞ্জে দলের ফল ভাল হয়েছে। রেলের লোহা চুরির মামলায় দোষী সাব্যস্ত সোহরাব আলিকে নিয়ে এই এলাকায় তৃণমূল এখন খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছে। গত বিধানসভা ভোটে সোহরাব জিতেছিলেন মাত্র সতেরোশো ভোটে। তাই এই পরিস্থিতিতে রানিগঞ্জে বংশগোপালবাবুকে প্রার্থী করা হলে জেতার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে বলে কর্মীরা মনে করছিলেন। শুধু রানিগঞ্জ নয়, বংশগোপালবাবুকে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করার ভাবনাও ছিল স্থানীয় সিপিএমের। কিন্তু, সোমবার শিল্পাঞ্চলের পাঁচ আসনের জন্য যে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হয়েছে, তাতে বংশগোপালবাবু নেই। আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের জন্য এখনও কারও নাম ঘোষণা না হলেও সেখানে প্রাক্তন সাংসদের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জেলা সিপিএম সূত্রের খবর।

সোমবার কলকাতায় দলের বৈঠকে বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব কংগ্রেসের সঙ্গে আসন নিয়ে বোঝাপড়ার বিরোধিতায় সরব হন। এ জন্য শাস্তি পেতে হলেও এই সমঝোতা তাঁরা মেনে নিতে অপারগ বলে জানিয়ে দেন জেলার নেতারা। বংশগোপালবাবুও সেই দাবিতে সুর মেলান। রাজ্য সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বিরোধিতার পরে প্রাক্তন সাংসদকে প্রার্থিপদ দেওয়ার জন্য শীর্ষ স্তর থেকেও আর কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না। আসন সমঝোতা নিয়ে বংশগোপালবাবুদের বিরোধিতাও সামগ্রিক সিদ্ধান্তে কোনও ছাপ ফেলতে পারবে না বলে সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘দল উপযুক্ত ভাবনাচিন্তা করে ঠিক প্রার্থীদের টিকিট দিয়েছে।’’ বংশগোপালবাবু নিজে অবশ্য দাবি করেন, এ বার তাঁর প্রার্থী হওয়ার কথাই ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আমি দলের রাজ্য কমিটির সদস্য। নীতি নির্ধারণের কাজ করি। দলীয় স্তরে আলোচনা করে আমিই প্রার্থীদের নাম ঠিক করেছি। কেউ আমাদের জয় কঠিন করার লক্ষ্যে এখন আমাকে নিয়ে এ সব অপ্রচার চালাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assambly election 2016 politics campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE