Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ছুটি মিটতেই হাঁসফাঁস শহর

টানা পনেরো দিন ছুটির পরে অফিস-কাছারি খুলতেই যানজটে নাকাল শহর। সোমবার সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের বিসি রোড, তিনকোনিয়া চত্বরের মতো একাধিক জরুরি রাস্তায় বাস, টোটো, গাড়ি, মোটরবাইকের ভিড় উপচে পড়ে। অতিরিক্ত কর্মী নামিয়েও যানজট সামাল দিতে পারেনি পুলিশ।

যানজটে চলা দায়। বাঁ দিকে, বিসি রোড, ডান দিকে, তিনকোনিয়া এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

যানজটে চলা দায়। বাঁ দিকে, বিসি রোড, ডান দিকে, তিনকোনিয়া এলাকায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৫
Share: Save:

টানা পনেরো দিন ছুটির পরে অফিস-কাছারি খুলতেই যানজটে নাকাল শহর।

সোমবার সকাল থেকেই বর্ধমান শহরের বিসি রোড, তিনকোনিয়া চত্বরের মতো একাধিক জরুরি রাস্তায় বাস, টোটো, গাড়ি, মোটরবাইকের ভিড় উপচে পড়ে। অতিরিক্ত কর্মী নামিয়েও যানজট সামাল দিতে পারেনি পুলিশ।

শহরবাসীর আশঙ্কা, কাজের প্রথম দিনেই যদি শহরের এই হাল হয়, তাহলে পরে কী হবে! যদিও জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘যানজট নিয়ে সাময়িক অসুবিধা হলেও নিয়মিত কোনও সমস্যা হবে না। আমরাও চাই যাত্রীরা আমাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। তাহলে সুষ্ঠু ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।’’

সকাল ৯টা: কাটোয়া রোডে রেল ওভারব্রিজে গাড়ি থিকথিক করছে। বাজেপ্রতাপপুরের দিকে একাধিক বাস, গাড়ি আটকে রয়েছে। বাঁ দিকের কালনা রোডের মুখেও গাড়ির সারি। উল্টো দিক থেকে কাটোয়ামুখী বাসগুলিও আটকে পড়েছ। তার মধ্যেই গাড়িগুলিকে পাশ কাটিয়ে শহরের দিকে এগিয়ে চলেছে মোটরবাইক, পথচারীরা। নাতনিকে নিয়ে মোটরবাইকে থাকা সন্তোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুজোর সময় বাস-গাড়ি কম চলেছিল। সরকারি অফিস খোলায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। প্রথম দিনেই নাজেহাল হতে হবে ভাবতে পারিনি।’’ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় একাধিক ট্রাফিক পুলিশকর্মীকে ওভারব্রিজের উপর এসে যান নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। তাতে কিছুটা গতি বাড়লেও ভিড় স্বাভাবিক হতে বেলা ১২টা বেজে যায়। ট্র্যাফিকের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘শহরের স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে ওভারব্রিজ শুরু। চারটে রাস্তা চার দিকে চলে যাওয়ায় সবসময় ভিড়-জট লেগেই থাকে। এখন নতুন ওভারব্রিজের জন্য সংযোগকারী রাস্তা তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও মুশকিলের। নবাবহাটমুখী বাস এবং অন্য যানবাহনগুলিকেও স্টেশনের মুখ দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হচ্ছে।’’

বেলা সাড়ে ১০টা: বীরহাটা মোড়েও একই অবস্থা। পারবীহাটা থেকে শাঁখারীপুকুর পর্যন্ত বাস-টোটো-মালবাহীগাড়ির ঠেলায় দমবন্ধ পরিস্থিতি মানুষজনের। জিটি রোড-বাঁকুড়া রোডের উপর দিয়ে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষ কোন দিকে যাবেন ঠিক করতে পারছিলেন না। খণ্ডঘোষের সাঁকটিয়া, রায়নার সেহেরাবাজার থেকে গাড়ি করে পারবীহাটার মুখে নামতে দেখা যায় বছর পঁয়ষট্টির সুনীল সেন, সুজিত রায়দের। তাঁরা বলেন, ‘‘এক দিকে টোটো-রিকশা, পরক্ষণেই বাস-গাড়ি। দশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়েই আছি। রাস্তা পেরিয়ে জিটি রোডের দিকে যেতেই পারছি না।’’ সেখানকার ট্রাফিক কর্মীদের দাবি, প্রথম দিনেই গাড়ির চাপ এত বেশি হয়ে যাবে ভাবা যায়নি।

সওয়া ১১টা: রাণিগঞ্জ বাজারের তিন মাথার মোড়ে শুধুই রিকশা আর টোটো। ট্রাফিকের দায়িত্বে থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের চোখে ফাঁকি দিয়ে কে, কোন দিকে গলে যাচ্ছে বোঝার উপায় নেই। রীতিমত হিমসিম অবস্থা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘কেউ নিয়ম মানতে চাইছেন না। সবাই আগে যেতে চাইছেন। যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’

সাড়ে ১১টা: বিসি রোডের দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড় করানো আছে মোটরবাইক। তার পাশে রিকশা-হকারদের ভিড়। চওড়া রাস্তা সম্পূর্ণ ভাবেই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে ফুটপাথের দখল নিয়েছেন ব্যবসায়ী ও হকারেরা। অথচ ওই রাস্তা দিয়েই থানা, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যাতায়াত করতে হয়। ভিড়ে দাঁড়ানো সুচেতনা দাস, সুমিতা সাহা শিকদারদের ক্ষোভ, ‘‘পুজোর পর প্রথম দিনেই এত জট ভাবাই যাচ্ছে না।’’

এর বাইরেও খোসবাগান, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, জেলখানা মোড় এলাকাতেও যানজট হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জিটি রোড বা বিসি রোডের উপর চাপ বাড়লেই ওই সব রাস্তায় যানজট তৈরি হয়।

তবে জটে হাঁসফাঁস মানুষ দেখে খুশি হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। বড়বাজারের ব্যবসায়ী রমেন কর্মকার কিংবা বিসি রোডের জয়ন্ত ব্যাপারীদের কথায়, ‘‘আমরা তো ভেবেছিলাম কালীপুজো পর্যন্ত আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। কিন্তু এ দিন ভিড় দেখে মনে হচ্ছে বাজার অতটাও মন্দা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Traffic Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE