Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘দাদাকে তো এ বার সে ভাবে মাঠেই নামতে হল না!’

শুধু এই নির্বাচনেই নয়। অতীতে লোকসভা, বিধানসভা এমনকি পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রয়োগ করতে হয়েছে নানা কৌশল।

নিশ্চিন্ত: দলীয় দফতরে স্বপনবাবু। নিজস্ব চিত্র

নিশ্চিন্ত: দলীয় দফতরে স্বপনবাবু। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০২:০৯
Share: Save:

ছবিটা যেন কোনও জাদুবলে বদলে গিয়েছে। দলের অফিসে নিজের কুর্সিতে আরামে বসে তিনি। মুখেচোখে টেনশনের লেশমাত্রও নেই। মাঝমধ্যে শুধু ফোনে খোঁজখবর নিচ্ছেন এলাকার।

এতটাই নিশ্চিন্তে স্বপন দেবনাথ। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি।

এমন স্বপনবাবুকে দেখে খানিক অবাক তাঁর অনুগামীরাও। পূর্বস্থলী১ ব্লকের হেমায়েতপুর মোড়ের দলীয় কার্যালয়, যা তাঁর ‘কন্ট্রোল রুম’ বলে পরিচিত, তার বাইরে দাঁড়িয়ে এক তৃণমূল কর্মী বলছিলেন, ‘‘দাদাকে তো এ বার সে ভাবে মাঠেই নামতে হল না! অথচ যে কোনও ভোটে দাদাকে দেখলে মনে হয়, বয়স যেন বেড়ে গিয়েছে।’’ কর্মীরা জানালেন, ভোট এলে কোথায় কোন কোন নেতাকে দিয়ে প্রচার করতে হবে, কোন কোন এলাকায় ভোটের প্রচারে তারকারা এলে মানুষের উৎসাহ বাড়বে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচার কী ভাবে চলবে—সবই তাঁর মগজে গিজগিজ করে।

দু’বছর আগের কথা। বিধানসভা ভোট তখন দোরগোড়ায়। নিজে প্রার্থী তো বটেই। সাবেক বর্ধমানে তৃণমূলের (গ্রামীণ) সভাপতিও তিনি। ব্যস্ততা তুঙ্গে। চরকির মতো ঘুরছেন এক এলাকা থেকে অন্য। বছর দেড়েক আগে মন্তেশ্বরের বিধায়ক সজল পাঁজার মৃত্যুতে উপনির্বাচন হয় ওই আসনে। দল প্রার্থী করে প্রয়াত বিধায়কের পুত্র সৈকত পাঁজাকে। ভোটের মাস খানেক আগে থেকে এক রকম মন্তেশ্বরের মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন স্বপনবাবু। ফল বেরোতেই দেখা যায়, তৃণমূল প্রার্থী জয়ী লক্ষাধিক ভোটে।

শুধু এই নির্বাচনেই নয়। অতীতে লোকসভা, বিধানসভা এমনকি পঞ্চায়েত ভোটেও তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রয়োগ করতে হয়েছে নানা কৌশল। সেই স্বপনবাবু এ বার কিন্তু বেশ খোশমেজাজে, ফুরফুরে। চেয়ারে হেলান দিয়ে খবরে কাগজ পড়ছেন। যাঁরা নিজেদের প্রয়োজনে দলীয় অফিসে দেখা করতে আসছেন, তাঁদের আপ্যায়ন করে তুলে দেওয়া হচ্ছে দই-সন্দেশ। তবে, দলীয় কার্যালয় থেকে তিনি একেবারে বেরোচ্ছেন না, তা নয়। সভাও করছেন। সংখ্যায় কম। দলের কর্মীরাই জানাচ্ছেন, অন্যান্য নির্বাচনে যেখানে প্রতিদিন ১০-১২টি সভা সারেন, এ বার সেখানে মেরেকেটে তিন থেকে চার। জেলার অন্যত্র সভা করেছেন ঠিকই। তবে শক্তিগড়, মেমারির মতো কয়েকটি হাতে গোনা জায়গায়। নিজের খাসতালুকে বরং ছোট পাড়া বৈঠকেই মন দিয়েছেন। এ বারের ভোটে তৃণমূলের বড় কর্মসুচি বলতে জামালপুর ও পূর্বস্থলীতে দু’টি রোড শো অরূপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে। স্বপনবাবু জানালেন, দু’টি মিছিলেই ভিড় হয়েছে ভাল।

অথচ কাটোয়ার মতো হাল কালনার নয়। কালনা মহকুমায় ত্রিস্তরের বহু আসনেই বিরোধীরা প্রার্থী দিয়েছে। তা হলে কি জেতার আগেই ভোট জেতা হয়ে গিয়েছে বলে ধরে নিয়েছেন? তা হলে কি আত্মতুষ্টি...?

বল মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন এই পোড় খাওয়া নেতা। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আত্মতুষ্টি বলে কোনও শব্দ আমার অভিধানে নেই। আসলে এ বার বিরোধীরা জেলার কোথাও তেমন ভাবে প্রচারে নামেনি। কিছু কিছু জায়গায় পতাকা, ফেস্টুন লাগানো রয়েছে। তা-ও ভাড়া করা লোকদের দিয়ে করেছে বলে জেনেছি। এই আবহে কোথায় আর প্রচার করব? লড়াইয়ের মেজাজটাই যে নেই জেলায়! এই পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিকমতো তাতাতে পারছি না।’’

যা শুনে বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের কটাক্ষ, ‘‘মহকুমাশাসকের অফিসে দলের বাহিনী রেখে বহু জায়গাতেই আমাদের মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি শাসক দল। এর জন্য দায়ী ওই দলের জেলা সভাপতিই। ওঁর মুখে এখন কোনও কথা মানায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE