Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

দামোদর পারাপারে ভরসা নড়বড়ে সাঁকো

হিরে থেকে জিরে, যে কোনও প্রয়োজনেই তাঁরা ভরসা করেন আসানসোলের উপরে। বাঁকুড়ার শালতোড়ার বাসিন্দারা দামোদর পেরিয়ে চলে আসেন এই এলাকায়। নানা প্রয়োজনে আসানসোল বা বার্নপুরের মানুষজনও যান ও দিকে।

বিপজ্জনক: বাঁকুড়ার শালতোড়া ও বার্নপুরের মাঝে দামোদরে কাঠের সেই সাঁকো। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: বাঁকুড়ার শালতোড়া ও বার্নপুরের মাঝে দামোদরে কাঠের সেই সাঁকো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

হিরে থেকে জিরে, যে কোনও প্রয়োজনেই তাঁরা ভরসা করেন আসানসোলের উপরে। বাঁকুড়ার শালতোড়ার বাসিন্দারা দামোদর পেরিয়ে চলে আসেন এই এলাকায়। নানা প্রয়োজনে আসানসোল বা বার্নপুরের মানুষজনও যান ও দিকে। গরমে সমস্যা নেই, হেঁটেই পেরোনো যায় নদ। কিন্তু বর্ষার সমস্যা মেটাতে বাসিন্দারা নিজেরাই তৈরি করেছিলেন কাঠের সেতু। সেই সেতুই ভরসা সাইকেল, মোটরবাইক থেকে চার চাকার গাড়ির। কিন্তু নড়বড়ে ওই সেতুতে যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

বার্নপুরের ডিহিকা লাগোয়া দামোদরের উল্টো দিকেই বাঁকুড়ার শালতোড়া। এই ব্লকের ঈশ্বরদা, শালতোড়া, কেষ্টপুর, নারানপুর, দিঘি, সগরাডি, ভিতড়গড়-সহ প্রায় তিরিশটি গ্রামের কমবেশি ৪৫ হাজার বাসিন্দার কাছাকাছি বড় শহর আসানসোল। স্কুল, কলেজ থেকে চিকিৎসা বা বাজার-দোকান, নানা প্রয়োজনেই তাঁরা আসানসোল বা বার্নপুরে আসেন। অনেকের কর্মস্থলও এই শিল্পাঞ্চলে।

বাসিন্দারা জানান, তাঁদের এলাকা থেকে বাঁকুড়া শহর প্রায় ৭২ কিলোমিটার দূরে। মেজিয়া সেতু ঘুরে আসানসোলে পৌঁছতে পেরোতে হয় ৬৫ কিলোমিটার। ডিসেরগড় সেতু হয়ে সেই দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। অথচ, ডিহিকার কাছে দামোদর পেরোলে মাত্র আট কিলোমিটার। আগে নৌকায় পারাপারের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের গ্রামের কয়েক জন যুবক তখন দামোদরে শাল কাঠ পুঁতে ও তার উপরে কাঠের পাটা পেতে একটি সেতু তৈরি করেন। সেই সেতু দিয়েই চলছে যাতায়াত।

পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে তো বটেই, স্কুটার-মোটরবাইক, এমনকী ছোট গাড়িও পারাপার করে ওই সেতুর উপর দিয়েই। যাত্রীরা জানান, যে যুবকেরা সেতুটি তৈরি করেছেন, তাঁরা পারাপারের জন্য টারা নেন। পয়সা খরচ করে প্রাণ হাতে নিয়েই পেরোতে হয়। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের নজর না থাকার কারণেই এই সমস্যা রয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি হুগলির ভদ্রেশ্বরে অস্থায়ী জেটি ভেঙে নদীতে তলিয়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে যাত্রীদের ভয় আরও বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও উপায় না থাকাই এই অস্থায়ী সাঁকোই আমাদের ভরসা। কিন্তু ভয়ও হয়।’’

শালতোড়ার ঈশ্বরদা গ্রামের বাদল ঘোষ, তাপস দাস, কালিপদ ঘোষ-সহ জনা কয়েক যুবক সাঁকোটি তৈরি করে আয় করেছেন। তাঁরা জানান, পায়ে হেঁটে পেরোতে তিন টাকা, সাইকেলে পাঁচ টাকা, মোটরবাইক তিরিশ টাকা ও গাড়ির জন্য ৬০ টাকা নেওয়া হয়। দিনে গড়ে হাজার দশেক টাকা আয় হয়।

নড়বড়ে এই সেতু দিয়ে পয়সা খরচ করে বাসিন্দাদের ঝুঁকির পারাপারের বিষয়ে কিছু জানা নেই বলে দাবি স্থানীয় প্রশাসনের। বাঁকুড়ার মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Damodar River Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE