Advertisement
০৫ মে ২০২৪
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ

লিখতেই হবে জেনেরিক নাম, নির্দেশ

চিকিৎসকদের ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কয়েক বছর আগেই। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৮২০ রকম ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া সম্ভব।

মেডিক্যালে চলছে বৈঠক। বর্ধমানে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মেডিক্যালে চলছে বৈঠক। বর্ধমানে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০২:৪৫
Share: Save:

চিকিৎসকদের ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কয়েক বছর আগেই। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৮২০ রকম ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু তা সত্ত্বেও সাদা কাগজে নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম লিখে বাইরে থেকে তা কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ উঠছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ এই কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে বৈঠক করতে এসে এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেলেন কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের অনেকে সাদা কাগজে নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধ লিখে রোগীর আত্মীয়দের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। সেই ওষুধ কিনতে আত্মীয়দের হাসপাতালের বাইরের দোকানে ছুটতে হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুকুমার বসাক ও হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ-র দাবি, ‘‘বারবার সতর্ক করেও জেনেরিক নামের ওষুধ লেখাতে বাধ্য করা যায়নি।’’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম লেখার জন্য কয়েক জন জুনিয়র ডাক্তারের বিষয়ে রিপোর্ট পাঠানো হয়। তার পরেই এ দিন ওই ডাক্তারদের সতর্ক করে দেন সুশান্তবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকেরা কিছু ভুল করছেন। তাঁদের সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’’

হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুপুরের পরে কয়েক জন ডাক্তারের দেখা না মেলায় এ দিন তাঁদের ভর্ৎসনাও করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) সুশান্তবাবু, স্বাস্থ্যের যুগ্ম সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায়েরা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ডাক্তার, নার্স ও কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে পুরসভার কাউন্সিলর খোকন দাস, সুশান্ত প্রামাণিক ও কয়েক জন ডাক্তারকে নিয়ে ন’জনের একটি ‘মনিটরিং কমিটি’ও তৈরি করে দেন সুশান্তবাবু। ওই কমিটি হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখে স্বাস্থ্য দফতরে রিপোর্ট জমা দেবে। তার পরে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে এখন সমস্ত ওষুধই বিনামূল্যে মেলে। এইমসের মতো হাসপাতালে ১৪২ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে মেলে। সেখানে রাজ্যে ৮২০ রকম ওষুধ মেলে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট কোনও সংস্থার ওষুধের নাম লেখার কথা নয় বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকাও রয়েছে।

বর্ধমান মেডিক্যালের অবস্থাটা কী? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম লেখা বন্ধ হয়ে গেলেও হাসপাতাল চত্বরে মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টিটিভদের আনাগোনা কমেনি। শেষমেশ কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপার ডাক্তারেরা ওষুধের জেনেরিক নাম আদৌ লিখছেন কি না, তার তদারকি শুরু করেন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, তখনই দেখা যায়, সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জুনিয়র ডাক্তার-সহ এক দল চিকিৎসক ঘুরপথে নির্দিষ্ট সংস্থার তৈরি করা ওষুধের নামই লিখছেন।

কী ভাবে হচ্ছে অনিয়ম? হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক টুকরো সাদা কাগজে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম লিখে দেওয়া হচ্ছে। তাতে রোগীর নাম বা চিকিৎসকের সই, কিছুই থাকছে না বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, “মঙ্গলবার হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় এক রোগীর কাছ থেকে ওই রকম একটি সাদা কাগজ দেখা যায়। তাঁর কথা মতো নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি চিকিৎসক নেই। তখন সেখানকার নার্সদের বলে দেওয়া হয়, এ রকম সাদা কাগজে লেখা ওষুধ আপনারা গ্রহণ করবেন না।”

এ দিন হাসপাতালে বৈঠক শেষে সুশান্তবাবু সাফ বলেন, “হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে। এক জন রোগী বা রোগীর আত্মীয়কে ওষুধ থেকে শল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম, কোনও কিছুই বাইরে থেকে কিনতে দেওয়া যাবে না। চিকিৎসকদের জেনেরিক নামে ওষুধ লিখতে হবে। কোনও রোগী বা রোগীর আত্মীয় যাতে বাইরে থেকে ওষুধ বা শল্য চিকিৎসার সরঞ্জাম না কেনেন, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।” এ দিনের বৈঠকে চিকিৎসা পরিষেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন মহল থেকে হাসপাতালের পরিষেবা বাড়ানোর জন্যেও দাবি জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তারা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan medical college generic name
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE