E-Paper

সব স্থায়ী আমানতের খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয়

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নেতৃত্বে এই কমিটি ১০ বছরের হিসেব খতিয়ে দেখে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের কাছে রিপোর্ট দেবেন।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪ ০৯:১২
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।

সব স্থায়ী আমানতের শংসাপত্র তাঁদের কাছে রয়েছে কি না, সেটাই এখন ভাবনা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতে সরেজমিন গিয়ে স্থায়ী আমানতের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত নথি খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গোল্ডেন জুবিলি’ ভবনের সামনে ‘বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও কমিটি’ প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে ধর্ণায় বসে। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য খোঁজার মানে হল, অর্থ বিভাগ স্থায়ী আমানত সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে। আর্থিক সমস্ত অভিযোগের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করার প্রয়োজন বলে দাবি করেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ করা নিরপেক্ষ কমিটিও। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের নেতৃত্বে এই কমিটি ১০ বছরের হিসেব খতিয়ে দেখে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের কাছে রিপোর্ট দেবেন। সেখানে অন্তর্বর্তী অডিটে কী কী ‘ফাঁক’ ধরা পড়েছে, স্থায়ী আমানতের হিসেব অন্তর্বর্তী অডিটে কেন রাখা হয়নি, তার উত্তর খোঁজা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান শহরের ছ’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় ৫১৫টির মতো স্থায়ী আমানত রয়েছে। ১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই নানা ভাবে প্রাপ্ত টাকা স্থায়ী আমানত করেই রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন কর্মী বলেন, “একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবস্তরের কর্মীরা একদিনের বেতন দান করেছিল। সেই মোটা টাকাও স্থায়ী আমানত করে রাখা হয়েছিল।” বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, যে ভাবে স্থায়ী আমানতের শংসাপত্র চুরি করে ও সই জাল করে ব্যাঙ্কের কাছে টাকা তোলার চিঠি দেওয়ার ঘটনা সামনে এসেছে, তাতে অর্থ দফতর রীতিমতো শঙ্কিত। বিশাল পরিমাণ স্থায়ী আমানতের শংসাপত্রের মধ্যে থেকে দু’একটা কেউ চুরি করে নিজের কাছে রেখে দিলে অর্থ বিভাগের আধিকারিকেরা ধরতেই পারবেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “সব শংসাপত্র ঠিক আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখতেই ট্রাস্ট অফিসারের নেতৃত্বে তিন জনের একটি দল সরেজমিন ব্যাঙ্কের শাখায় যাচ্ছেন। আমরা প্রতিটি ব্যাঙ্কের কাছে স্থায়ী আমানত ভেঙে কোনও লেনদেন হয়েছে কি না, জানতে চেয়েছিলাম। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছাড়া আর কোনও ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানত ভাঙানো হয়নি জানা গিয়েছে।” প্রথমে বড় বাজার শাখায় ‘জালিয়াতি’ ধরা পড়ে। সেই সূত্র ধরে খোঁজ নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতর জানতে পারে, জেলখানা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে তিন দফায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার বেশি তোলা হয়েছে। স্থায়ী আমানত ভেঙে ওই টাকা গিয়েছে সুব্রত দাসের অ্যাকাউন্টে। দু’টি ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠিতে সুব্রতর মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। ঘটনা জানাজানি হতেই রেজিস্ট্রার সুজিত চৌধুরী অর্থ বিভাগের কর্মী ভক্ত ও সুব্রতর নামে এফআইআর করে। ব্যাঙ্কের তরফেও ওই দু’জনের নামে অভিযোগ জানানো হয়।

‘বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও কমিটি’র আন্দোলনে ছিলেন অর্থনীতির শিক্ষক ভাস্কর গোস্বামী, পরীক্ষা নিয়ামক দফতরের আধিকারিক রামবিলাস মহাপাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী রূপক মাজিল্যারা। তাঁদের অভিযোগ, “অর্থ দফতরে দুুর্নীতি আদতে হিমশৈলের চূড়া। বেসরকারি তথ্য ও প্রযুক্তি সংস্থার নিয়োগ থেকে মোহনবাগান মাঠের উন্নতিতে খরচ, প্রতিটিতেই আর্থিক দুর্নীতি জড়িয়ে রয়েছে। এ সব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তদন্ত হয়। কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট ধামাচাপা পড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এর শেষ দেখতে চাই।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Burdwan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy