Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কয়লা চুরি ঠেকাতে খনিতে সিসি ক্যামেরা

ডাম্পারে কয়লা চাপানোর সময়ে এবং তৃতীয়ত, ডিপোয় মজুত কয়লা চুরি যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তিই ভরসা ইসিএল কর্তৃপক্ষের। কেএস পাত্র বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কিছু খনিতে পরীক্ষামূলক ভাবে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। ভাল ফল মিলেছে। সব খনিতেই এমন পদক্ষেপ করা হবে।’’

এ ধরনের খোলামুখ খনিতেই বসানো হবে ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র

এ ধরনের খোলামুখ খনিতেই বসানো হবে ক্যামেরা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ১২:৪০
Share: Save:

সুড়ঙ্গ (র‌্যাট হোল) কাটা হয়েছে খনির দেওয়ালে। কখনও বা অন্য কায়দায় ঘটছে বিপত্তি। এ ভাবেই পশ্চিম বর্ধমানের বিভিন্ন খনিতে কয়লা চুরির ঘটনা বারবার নজরে এসেছে বলে দাবি ইসিএল কর্তৃপক্ষ। এ বার সেই চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন খোলামুখ খনিতে (ওসিপি) সিসি ক্যামেরা (ক্লোজ সার্কিট) বসানো হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ডিরেক্টর পার্সোন্যাল কেএস পাত্র।

চুরি ঠেকাতে এর আগে বিভিন্ন খনিতে নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার সিআইএসএফ বাহিনি ও অস্থায়ী নিরাপত্তারক্ষী। এর জন্য ফি মাসে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা, এমনকী শুধুমাত্র সিআইএসএফ বাহিনির জন্য পাঁচ কোটি টাকার মতো খরচ হয় বলে দাবি সংস্থা কর্তৃপক্ষের।

কিন্তু তার পরেও চুরি ঠেকানো যায়নি। কী ভাবে ঘটছে চুরি? সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এক জন জানান, সামডি, ভানোড়া, সোদপুর, শ্রীপুর-সহ প্রায় সমস্ত খোলামুখ খনিতে মূলত তিন ভাবে কয়লা চুরি হচ্ছে। প্রথমত, র‌্যাট হোল বানিয়ে, দ্বিতীয়ত, ডাম্পারে কয়লা চাপানোর সময়ে এবং তৃতীয়ত, ডিপোয় মজুত কয়লা চুরি যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তিই ভরসা ইসিএল কর্তৃপক্ষের। কেএস পাত্র বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কিছু খনিতে পরীক্ষামূলক ভাবে সিসি ক্যামেরা বসিয়েছি। ভাল ফল মিলেছে। সব খনিতেই এমন পদক্ষেপ করা হবে।’’ ইসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, গত এপ্রিল থেকে কয়লা চুরি বেড়েছে। গত মাসেই ভানোড়ার বৈধ খনিতে অবৈধ উপায়ে কয়লা কাটতে গিয়ে তিন জন মারাও গিয়েছেন। সাধারণত, বর্ষার সময়ে বিপদের আশঙ্কায় অবৈধ খনন বন্ধ করে দেয় কয়লা চোরেরা। ফলে এই তিন মাসেই খনিগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গাছের আড়ালে, টাওয়ার, ল্যাম্প পোস্টের মতো জায়গায় সিসি ক্যামেরাগুলি বসানো হবে। ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, সালানপুর এরিয়ার কিছু খনিতে ইতিমধ্যেই সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।

সিসি ক্যামেরা বসানোয় খনিতে ঢোকা চোরদের উপরে নজরদারি, অবৈধ খনি খোঁড়া হচ্ছে কি না, নিরাপত্তার কাজ ঠিক মতো চলছে কি না ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি করা সম্ভব হবে বলে দাবি বিভিন্ন খনির কর্তৃপক্ষের।

তবে চুরি ঠেকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রথম নয়। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বালি খাদানে সিসি ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড় চলছে। ইসিএল-ও এর আগে কয়লাবোঝাই ডাম্পারগুলিতে জিপিআরএস ব্যবস্থা চালু করেছিল। সেই ব্যবস্থায় কাজও হয়েছে বলে দাবি।

এ ক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি কিছু নির্বাচিত খনিতে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানোর বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসিএল কর্তাদের একাংশ। তবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পেতে কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে।

তবে সিসি ক্যামেরা বসিয়েও চুরি কত দূর ঠেকানো যাবে, তা নিয়ে সন্দেহে খনি কর্তাদের একাংশ। কারণ, তাঁদের মতে, সিসি ক্যামেরা খুঁজে তা বিকল করে দেওয়াও অসম্ভব নয় কয়লা মাফিয়াদের পক্ষে। তেমন সে রকম বিপত্তি এড়াতে নজরদারিতে আরও জোর দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE